- |
- |
- জাতীয় |
- আন্তর্জাতিক |
- বিনোদন |
- ক্রীড়া |
- মত-দ্বিমত |
- শিক্ষা-স্বাস্থ্য |
- বিজ্ঞান-প্রযুক্তি |
- কৃষি বার্তা |
- অর্থ-বাণিজ্য-উন্নয়ন |
- সাহিত্য-সংস্কৃতি-সংগঠন |
- সারাদেশ |
দেশকন্ঠ প্রতিবেদক : গত বছরের তুলনায় এ বছর (২০২৩) গরমের তীব্রতা অনেক বেড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, গরমে গত বছরের তুলনায় এ বছর ডায়রিয়ার প্রভাব পড়েনি। আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, গত সপ্তাহের তুলনায় সারাদেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত দৈনিক ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ছিলো সাড়ে চারশর মধ্যে। একদিন পর ১২ এপ্রিল রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯১ জন। এরপর ১৩ এপ্রিল ৫১৫ জন, ১৪ এপ্রিল ৫৩০ জন, ১৫ এপ্রিল ৫৬৩ জন, ১৬ এপ্রিল ৫২২ জন এবং ১৭ এপ্রিল সাড়ে পাঁচশ। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা গড়ে পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশর মধ্যেই রয়েছে।
আইসিডিডিআর,বির ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশনস শাখার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক একেএম তারিফুল ইসলাম খান বলেন, গরম দুইভাবে সাধারণত অনুভূত হয়। একটি হচ্ছে-বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বা আর্দ্রতা বেশি। আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় এই রকমের গরম পড়ে। যদিও বর্তমানের আবহাওয়া অনেকটা মরুভূমির আবহাওয়ার মতো। বর্তমানের গরমে তাপ বেশি হলেও বাতাসে আর্দ্রতা কম। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বেশি হবে। আর আর্দ্রতা কম হলে শরীরে ঘামও কম হবে। যার ফলে শরীর দুর্বল হয় কম এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শরীর নিজ থেকেই লড়াই করতে সক্ষম হয়।
তারিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশজুড়ে যে গরম চলছে, এরকম গরমে সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ কম হয়। এখনকার গরমে বাতাসে আদ্রতা কম, তাই তীব্র গরমেও মানুষ কম ঘামে। অপরদিকে, গরমে মানুষ তীব্র ঘামলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ-পানি বেরিয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। আমরা যে পানি পান করি তা অনেকাংশেই দূষিত। এই পানি যখন আমরা কম পান করি, তখন আমাদের শরীর সেটাকে অ্যানকাউন্টার করতে পারে। আর যখনই আমরা বেশি পানি পান করি, তখন জীবাণু প্রতিরোধ করা শরীরের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। যে কারণে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
তাই, এই গরমে সবাইকে সতর্ক করে তারিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যেহেতু গরমটা অনেক বেশি, সঙ্গত কারণে পানির তৃষ্ণাও বেশি লাগবে। তবে মনে রাখা জরুরি, তীব্র গরমের পর হঠাৎ করে বেশি ঠান্ডা পানি পান করা শরীরের জন্য ঠিক হবে না। স্বাভাবিক এবং অতি অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি বেশি পরিমাণে পান করতে হবে।
আইসিডিডিআর,বির তথ্য মতে, সাধারণত গরমের তীব্রতা বাড়লে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকে। বিশেষ করে এপ্রিল ও মে মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। গত বছর (২০২২) এ সময়ে যেখানে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে দৈনিক ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার থেকে ১২শ, সেখানে এ বছর তীব্র গরমেও হাসপাতালে আসা রোগীর হার স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে দেশে এখনও সুনির্দিষ্ট কোন গবেষণা নেই, তারপরও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, অতিরিক্ত তাপের কারণে জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারছে না। ভিন্নমতও আছে অবশ্য কারো কারো।
তারা বলছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকায় এবং রোজার মাসে সারাদিন পানি পান না করার কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কম। গরমের সময়ে বিবিধ কাজে পানির ব্যবহার বেড়ে যায়। মানুষের শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে, তৃষ্ণা বাড়ে। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা যে পানি পান করি- সেই পানি পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ না। যার কারণে গরম এলেই পাতলা পায়খানার উপদ্রব শুরু হয়। তবে এবারে গরমের তীব্রতা বাড়লেও ডায়রিয়া আক্রান্তের হার উল্লেখযোগ্য হারে কম।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে আইসিডিডিআর,বিতে আসা রোগীর সংখ্যা ৫১০-৫২০ জনের মধ্যে আছে। যদিও সপ্তাহখানেক আগে এই রোগীর সংখ্যা সাড়ে চারশর মধ্যে ছিল। কর্তৃপক্ষ বলছেন, দৈনিক ৫০০ রোগী পর্যন্ত তারা স্বাভাবিকই হিসেবেই নেন। সম্প্রতি রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও বলার মতো বাড়েনি। গত বছরের হিসাবে এ সময়টাতেও দৈনিক এক হাজার ২০০ করে রোগী থাকত। অথচ এখন গড়ে পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশর মধ্যেই রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) সারা দেশে সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৫৫ হাজারের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল।
জানা গেছে, বছরের দুই সময়ে অর্থাৎ বর্ষা ও শীত মৌসুমের আগে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে সাতশ থেকে সাড়ে সাতশতে চলে যায়। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালে রোগী আছে সবমিলিয়ে পাঁচশর কিছু বেশি, যা স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়। তবে, গরমের পাশাপাশি যদি ইমিউনিটি বেড়ে যায়, তবে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তীব্র এই গরমে সাধারণ মানুষের করণীয সম্পর্কে পরামর্শ জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, যেহেতু অত্যাধিক গরম পড়ছে, সঙ্গত কারণে এ সময় মানুষের দেহে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, মানুষের অনেক বেশি তৃষ্ণা পাবে। যারা রোজা রাখছেন, ইফতারের পরে বেশি ঠান্ডা পানি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। অন্যরা তীব্র গরম বা তৃষ্ণা পেলে বেশি বেশি করে পানি খাবেন। তবে মনে রাখবেন, পানিটা যেন অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি হয়। নইলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
দেশকন্ঠ/এআর
পথরেখা : আমাদের কথা