দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : নিগার সুলতানা জ্যোতি বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়, যাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখেন ক্রীড়াপ্রেমিরা। কেন দেখেন সেটাই ক্রীড়াপ্রেমি মানুষ এবার বুঝেছে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেটে হারিয়েছে সফরকারীরা। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। মঙ্গলবার দিনের শুরুতে প্রথমে ব্যাট করে লঙ্কানরা সংগ্রহ করে ১৪৫ রান। মাঝারি রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির ক্যারিয়ার সেরা ৭৫ রানে ভর করে ১ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলার বাঘিনীরা। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটা ভালো কাটেনি জ্যোতিদের। প্রথম দুটি ওয়ানডে বৃষ্টি বাধায় পরিত্যক্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে জানা যায় দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ আবারো আয়োজন করতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড (এলসি)। কিন্তু আইসিসি ম্যাচটি অনুমোদন দেয়নি। ফলে পুরনো সূচিতেই শেষ হয় ওয়ানডে সিরিজ। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ফল না এলেও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫৮ রানে হারিয়েছে স্বাগতিকেরা। সেই জয়ের সুবাদে ১-০ ব্যবধানে তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে নেয় লঙ্কান মেয়েরা। সেখানে হতাশ হতে হয় লাল সবুজ প্রতিনিধিদের।
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে কলম্বোয় দিনের শুরুতে চামারি আতাপাত্তুর ৩৮ এবং মাধাবীর ৪৫ রানে বড় সংগ্রহের পথে যাচ্ছিল লঙ্কান মেয়েরা। এরপর নিলাক্ষী ডি সিলভা করেন ২৯ রান। তবে এরপর আর দলের হয়ে কেউ তেমন রান করতে না পারায় লঙ্কান নারীদের ইনিংস থামে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট সংগ্রহ করেন ফাহিমা খাতুন। এছাড়া ১টি করে উইকেট সংগ্রহ করেন ফারিহা তৃঞ্চা, সুলতানা খাতুন, নাহিদা আক্তার এবং রাবেয়া খান। ১৪৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো ছিল না টাইগ্রেসদের। কেননা ব্যক্তিগত ৫ রানে শামীমা সুলতানা এবং রুবায়া হায়দায় ফেরেন ৯ রান করে। এরপর তিন নম্বরে নামা সোবহানা মুস্তারিকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। তবে দলীয় ৭৪ রানে এই দুই ব্যাটারের জুটি ভেঙে যায়। ব্যক্তিগত ১৭ রান করেই ফিরে যান সোবহানা। ব্যাট হাতে তখনও লড়ছিলেন জ্যোতি, তার সঙ্গে যোগ দেন রিতু মনি।
সেই জুটিতে একের পর এক বাউন্ডারিতে বাংলাদেশ জয়ের দিকেই এগোতে থাকে। অর্ধশতক তুলে নেওয়া জ্যোতিকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যান রিতু। তবে শেষদিকে ম্যাচ কঠিন হয়ে পড়ে সফরকারীদের জন্য। কারণ ২ ওভারে তখন দরকার ছিল ২৫ রান। প্রথম ওভারে ১৭ রান নিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ সহজ করে তোলেন জ্যেতিরা। ফলে শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ৮ রান। সেই ওভারের প্রথম বলেই চার মারেন রিতু। এরপর সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে গিয়ে দুই রান দেন জ্যোতি। নাটকীয়তার তখনও কিছুটা বাকি। ব্যাক্তিগত ৩৩ করা রিতু রান আউটের ফাঁদে পড়েন। অবশ্য তখন জয় পাওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার। শেষ দুই বলে ১ রান প্রয়োজন হলে জ্যোতি সিঙ্গেল নিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৫১ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। লঙ্কানদের হয়ে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন উদেশিকা প্রবধোনি, কেউয়া কাভিন্দি ও ওশাদি রানাসিঙ্গে।
এর আগে শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম দুটি ওয়ানডে ম্যাচ বৃষ্টির কারণে ভেসে যায়। শঙ্কা জেগেছিল পুনঃনির্ধারিত দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচেও। বৃষ্টির কারণে ৫০ ওভারের ম্যাচ কমে ৩০ ওভারে চলে আসে। কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আগে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা নারী দল ৫ উইকেটে ১৮৬ রান সংগ্রহ করে। বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১২৮ রানে থেমে যান বাংলাদেশের নারীরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫৮ রানে জিতে সিরিজে ১-০’তে এগিয়ে গেল লঙ্কানরা। ম্যাচে লঙ্কানদের জয়ের নায়ক অধিনায়ক চামারি আত্তাপাত্তু। ওপেনিংয়ে নেমে এই ব্যাটার ৬০ বলে ৬৪ রান করেন। তিনে নামা হারশিথা সামারাবিক্রমা করেন ৪৮ বলে ৪৫ রান। শেষ দিকে আনুশকা সানজিয়ানির ১২ ও কাশিভা দিলহারার ২৫ রানে ভর করে স্বাগতিক দল লড়াকু পুঁজি পায়। বাংলাদেশের হয়ে ১ টি করে উইকেট শিকার করেছেন জাহানারা আলম, সুলতানা খাতুন, নাহিদা আক্তার, রিতু মনি এবং ফাহিমা খাতুন। ১৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে টপঅর্ডার তিন ব্যাটারই ক্রিজে থিতু হতে পারেনি।
মুর্শিদা খাতুন ১৬, শামীমা সুলতানা ৫, সোবহানা মুস্তারি ফেরেন মাত্র ১১ রানে। এরপর ফারজানা হককে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। এরপর ফারজানাও ৪৬ বলে ২৪ করে বিদায় নেন। ৫১ বলে ৩৭ করে আউট জ্যোতিও। শেষ দিকে কোনো ব্যাটারই বলার মতো পারফর্ম করতে পারেননি। ফলে ৫৮ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলার মেয়েরা। শ্রীলঙ্কার হয়ে ওশাদি রানাসিংহে ৩৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। আগামী ১১ ও ১২ মে দু’দল টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুুখি হবে।
দেশকণ্ঠ/আসো