বিশেষ প্রতিবেদন : মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে যেন হতাশা কাটছেইনা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে দলে ছিলেন না। যদিও টিম ম্যানেজমেন্ট তার উপর পূর্ণ আস্থা রেখে আগামী বিশ্বকাপের জন্য তাকে তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজুর রহমানের আগমনের সময়টা স্মরণ করে ভক্ত হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কেবলই আফসোস জাগে, কোথায় হারাল সেই সেই দুর্ভেদ্য সব কাটার-স্লোয়ার, একেকটি জাদুকরী ডেলিভারি। রাঘব-বোয়াল বধের সেই দিনগুলো কি শুধুই অতীত!
২৪ এপ্রিল ২০১৫, মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অভিষেকে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে শিকার শহীদ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাফিজের উইকেট। ওই বছর জুলাইয়ে ওয়ানডেতে পা রাখেন বিশ্ব কাঁপিয়ে। মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়ে হলেন ম্যাচসেরা। পরের ম্যাচে ৬ উইকেট, পরেরটিতে ২! বিরাট কোহলি, অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, অজিঙ্কা রাহানোর মতো বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান নিয়ে সাজানো দলের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ১৩ শিকারে গড়েন নতুন ইতিহাস।
অবশ্য অল্প কিছু দিনেই সাতক্ষীরা থেকে উঠে আসা আনকোড়া বাঁহাতি পেসার হয়ে ওঠেন টাইগার ক্রিকেটের স্বপ্ন সারথী, অন্যতম ত্রাতা। যেখানে গোটা দলকে টেনে নিতেন, আজ যেন উল্টো তাঁকেই অহেতুক বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ! সত্যি বলতে পরিস্থিতি এমন যে, দলের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছেন। নখদন্তহীন মুস্তাফিজকে নিয়ে নিয়মিতই কথা বলতে হচ্ছে কোচ, নির্বাচক ও অধিনায়ককে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে ওয়ানডে ক্যাপ্টেন তামিম প্রিয় সতীর্থের ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় থাকলেও বলতে বাধ্য হয়েছেন ‘মুস্তাফিজ আর দলে অটো চয়েজ নন’। ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড সিরিজেই সেই কথা সত্যি হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ ওভারে ৪২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য, পরের ম্যাচে ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে উইকেট নেই, শেষ ম্যাচে ১ উইকেট। সিলেটে আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে, দুই পেসার এবাদত হোসেন ৪ উইকেট নিলেন, তাসকিন আহমেদ ২; সেদিন ৩১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য মুস্তাফিজ বাদ পড়েন পরের ম্যাচে। সর্বশেষ এক বছরে ১৩ ইনিংস বোলিং করে মুস্তাফিজ নিয়েছেন ১০ উইকেট, এর মধ্যে ৫টি এসেছে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচে।
যা তার নামের পাশে একেবারে মানানসই নয়। অর্থাৎ ১১ ম্যাচে পেয়েছেন মাত্র ৫টি! যার হওয়ার কথা দলের মূল শক্তি, তিনিই এখন বড় দুর্ভাবনার কারণ। ম্যাচের পর ম্যাচ কেবল হতাশাই উপহার দিয়ে যাচ্ছেন মুস্তাফিজুর রহমান। তারপরও দলে তিনি স্বয়ংক্রিয় পছন্দ হয়ে খেলে যাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নও উঠছে। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, শুধু মুস্তাফিজ কেন, এই দলে ‘অটো চয়েজ’ নন তিনি নিজেও। মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স নিয়ে ফিসফাস অবশ্য অনেক দিন ধরে। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর তা আরও বাড়ে। অথচ প্রথম ম্যাচের উইকেট ছিল তার জন্য দারুণ উপযুক্ত। একসময় এই ধরনের উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য তিনি ছিলেন বিভীষিকা। কিন্তু এবার সেই ২২ গজেই তার আলগা বোলিংয়েই সহজ হয়ে ওঠে ইংলিশদের কাজ। যে সংস্করণে সাড়া জাগিয়ে ৭ বছর আগে তার অভিষেক, যে সংস্করণে একসময় ছিলেন সবচেয়ে কার্যকর, সেই ওয়ানডেতেই এখন তিনি বিবর্ণ। সর্বশেষ ১৫ ওয়ানডেতে তার শিকার ১১টি! তবে বিশ্বকাপে পুরনো মুস্তাফিজকে ফিরে পাবার প্রত্যাশা করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
দেশকণ্ঠ/আসো