দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরুর ঘোষণা দেওয়া উইমেন্স সুপার লিগ এখন অনেকটাই নীরব। প্রথমবারের মতো এই লিগ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। মে মাসে শুরুর সবকিছু চুড়ান্ত থাকলেও এখন আর বাফুফে কর্মকর্তাদের কোন হেলদোল দেখা যাচ্ছেনা। অথচ জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন করার পাশাপাশি লোগো উন্মোচনও করা হয়েছিল। অথচ এখন আর কোন দেখা নেই, থেমে গেছে সব আলোচনা। তাইতো মেয়েদের ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেরই প্রশ্ন, তাহলে কি আলোর মুখ দেখবেনা এই লিগ। অথচ অনুমোদন পাওয়ার আগেই ইংল্যান্ড থেকে আনা ট্রফি উন্মোচন করা হয়েছিল। দেশের বাইরে থেকে আনা হয়েছিল বল। রীতিমতো চমকে দিয়েই ঘোষণা এসেছিল দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের প্রথম ফুটবল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট উইমেনস সুপার লিগ বা ডব্লিউএসএলের। পাঁচ তারকা হোটেলে দুই অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতিতে একাধিক জাঁকালো অনুষ্ঠান করে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কে-স্পোর্টস মেয়েদের ফুটবলকে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখিয়ে এখন যেন আড়ালে। গত মার্চে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে ঘোষণা এসেছিল ডব্লিউএসএলের। ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নারী ফুটবলের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানিয়েছিলেন, ১৫ মে শুরু হবে ডব্লিউএসএল।
এরপর গত ১ মে প্লেয়ার ড্রাফটের কথা থাকলেও সেদিন উন্মোচন করা হয় ট্রফি। বলা হয়েছিল, ডব্লিউএসএল নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে ১৩ মে। ১৩ মে পার হয়েছে আরও এক সপ্তাহ আগেই। এখন কবে শুরু ডব্লিউএসএল, শেষ পর্যন্ত হবে কি না, এসকল প্রশ্নের কোনো উত্তরই খুঁজে পাওয়া যায়নি কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কাছ থেকে। বলা হয়েছিল, খেলা হবে বসুন্ধরার মাঠ কিংস অ্যারেনায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা এই টুর্নামেন্ট থেকে সরে যাওয়ায় তৈরি হয় মাঠ নিয়ে জটিলতা। সেখান থেকেই মূলত আর টুর্নামেন্ট করার মতো উপযুক্ত মাঠ খুঁজে পায়নি কে-স্পোর্টস। ডব্লিউএসএল আদৌ হবে কি না, এই প্রশ্ন আছে খোদ বাফুফেরই। বাফুফের এক কর্মকর্তার দাবি, এ ধরনের টুর্নামেন্ট করতে হলে অন্তত এক বছরের প্রস্তুতির প্রয়োজন।
কিন্তু কে-স্পোর্টস পূর্ব কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই পাঁচ তারকা হোটেলে যে দুটি অনুষ্ঠান করেছে, পুরোটাই একরকম লোকদেখানো! ডব্লিউএসএল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি সেই কর্মকর্তার। ডব্লিউএসএল নিয়ে গত মাস পর্যন্ত অন্ধকারে ছিলেন বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। বাফুফের অনুমোদন ছাড়া শুধু সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও মাহফুজা আক্তার কিরণের মৌখিক অনুমোদন নিয়েই এত দূর এসেছেন কে-স্পোর্টসের চেয়ারম্যান ও ক্রীড়ানুরাগী ফাহাদ করিম। মাহফুজা আক্তার কিরণ শুরু থেকেই ছিলেন ডব্লিউএসএল নিয়ে প্রচারণার সঙ্গে জড়িত। মে মাসের শুরুতে নির্বাহী কমিটিতে ডব্লিউএসএল অনুমোদন পেলেও সেই সভায় রীতিমতো তোপের মুখে পড়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন ও কিরণ। অনুমোদন পেলেও টুর্নামেন্ট নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বাফুফের একজন সহ সভাপতি। কারণ হিসেবে তিনি সামনে এনেছেন কে-স্পোর্টসের সঙ্গে বাফুফের আগের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। এখন সেটাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে।
কিন্তু এখানে বাফুফের নিয়ন্ত্রা সংস্থাটির ব্যর্থতা অনেকটাই পরিস্কার। বিশেষত বাফুফে সাবেক সাধারন সম্পাদক সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছেনা। বাফুফে সূত্র জানায়, প্রভাবশালী সেই সহ সভাপতির আপত্তির কারণেই ডব্লিউএসএল আয়োজনের ব্যাপারে বাফুফে থেকে কোনো সবুজ সংকেত পায়নি কে-স্পোর্টস। ডব্লিউএসএলের অগ্রগতি জানতে যোগাযোগ করা হয় কিরণের সঙ্গে। ‘ফাহাদ করিমের সঙ্গে কথা বলুন, উনি অনেককিছু বলতে পারবেন’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন। ফাহাদ করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। যদিও গত সপ্তাহে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেছিলেন, ডব্লিউএসএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান। বাকি দুটি দলের দ্রুতই ব্যবস্থা হয়ে যাবে—ফাহাদ করিমকে এমনই আশাবাদী দেখা গিয়েছিল। ডব্লিউএসএল নিয়ে বাফুফের শঙ্কা নিয়ে ফাহাদ করিম বলেছিলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, বাফুফের এখানে কোনো ভূমিকা নেই। এটা অপেশাদার টুর্নামেন্ট। বাফুফে উল্টো আমাদের কাছ থেকে টাকা পাবে।’
জাতীয় আর আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের নিয়ে হওয়া একটি টুর্নামেন্ট কীভাবে ‘অপেশাদার’ হয় আর বাফুফের ভূমিকা না থাকলে কিরণ ডব্লিউএসএলে কোন ভূমিকায় আছেন, সেটি নিয়েও আছে প্রশ্ন। টুর্নামেন্টের জন্য বিভিন্ন মহাদেশের খেলোয়াড় আনার ঘোষণা দিলেও বাফুফের সূত্র থেকে জানা গেছে, শুধু নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের রাজি করাতে পেরেছে কে-স্পোর্টস। কিংস অ্যারেনা না পাওয়ায় বিকল্প ধরা হয়েছিল মানহীন টার্ফ ও নোংরা পরিবেশের জন্য বিতর্কিত কমলাপুর স্টেডিয়াম। আগামী ১০ জুলাই থেকে শুরু হবে নারীদের ফিফা উইন্ডো। প্রীতি ম্যাচ সামনে রেখে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের প্রস্তুতি শুরু হলে ডব্লিউএসএল পাবে না বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদেরও। এদিকে এশিয়ান গেমসে সাবিনা খাতুনদের খেলা নিশ্চিত করা হয়েছে। অলিম্পিক বাছাইয়ে নারী ফুটবল দল না পাঠিয়ে তীব্র সমালোচিত হয়েছিল বাফুফে। তবে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন মেয়েদের ফুটবল দল প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত চীনের হ্যাংজুতে অনুষ্ঠিত হবে এই গেমস।
দেশকন্ঠ/আসো