• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০০:৪৪

গার্দিওলায় ম্যানসিটির ট্রেবল জয়

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের মাধ্যমে দারুণ একটা মৌসুম শেষ করল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। যেখানে ইংািলশ লিগ জয়ই ছিল অনিশ্চিত সেখানে সিটিজেনরা এখন তিনটি শিরোপার মালিক। কোচ হিসেবে তাই দারুণ অর্জন পেপ গার্দিওলার। একজন স্প্যানিয়ার্ডের হাত ধরেই প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার খেতাব জিতল ম্যানসিটি। সেখানে দারুণ একটা বিশ^রেকর্ড গড়েছেন হুলিয়ান আলভারেজ। বিশ^কাপ জয়ের পর একই মৌসুমে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে জিতলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। স্বপ্নের ট্রেবল জিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সিটির ইতিহাস রচিত হলো নতুন করে। প্রতীক্ষার প্রহর ফুরালো ম্যানচেস্টার সিটির। একাধিকবার কাছাকাছি গিয়েও চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা না পাওয়া আক্ষেপ ঘুচল এবার। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় পড়লেন হল্যান্ড ডি-ব্রুইনারা। একইসাথে পূর্ণ হল বহু আরাধ্য ’ট্রেবল’। ফাইনালে রদ্রির করা একমাত্র গোলেই ইতিহাস গড়ে সিটি। চলতি মৌসুমে এর আগেই প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জিতে আগেই ঘরোয়া ‘ডাবল’ পূর্ণ করে শোকেস ভরে রাখে সিটি।
 
এবার ইউরোপ সেরা হয়ে ‘ট্রেবলের’ স্বপ্নও পূরণ করল তারা। ইংলিশ ফুটবলে দ্বিতীয় এবং ১৯৯৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর প্রথম দল হিসেবে এই অসাধারণ কীর্তি গড়ল স্কাই ব্লুজরা। ফাইনালে শুরু থেকে বল পজিশন ধরে রেখে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টায় ছিল সিটি। তবে প্রত্যাশামতো আক্রমণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। অন্যদিকে মিলান ছিল কিছুটা সতর্ক। রক্ষণ সামলে সুযোগ বুঝে পাল্টা আক্রমণে উঠছিলেন মার্টিনেজ-ডেজকোরা। ম্যাচের ১৯ তম মিনিটে তেমনি এক পাল্টা আক্রমণে ইন্টার ক্যাপ্টেন ব্রজোভিচ বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিলেও সেটি লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। ম্যাচের ২৭ তম মিনিটে সিটির সামনে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় সুযোগ এসেছিল। ডি ব্রুইনার নিখুঁত পাসে ডি বক্সে খুঁজে নিয়েছিলেন হল্যান্ডকে। ডিফেন্ডারদের বাধা এড়িয়ে এই সিটি স্ট্রাইকারে নেওয়া জোরালো শর্ট অবশ্য দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন মিলান গোলরক্ষক ওনানা। ফলে টানা চার ম্যাচ গোলহীল এই নরওয়েজিয়ান তারকা।
 
যদিও একটু পরেই ডি ব্রুইনা মারাত্মক ইনজুরিতে পড়লে তাকে বদলি করতে বাধ্য হন গার্দিওলা। মিডফিল্ডের প্রাণভোমরাকে অপ্রত্যাশিতভাবে হারিয়ে চাপে পড়ে সিটি। গোলশূন্য সমতায় শেষ হয় প্রথামার্ধ। ম্যাড়মেড়ে প্রথামার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে সিটি সমর্থকদের প্রায় হতাশায় ডুবিয়ে দিয়েছিল মিলান। একটা ব্যাক পাস নিজে নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে গোলরক্ষক এদেরসনের জন্য ছেড়ে দেন সিটি ডিফেন্ডার ম্যানুয়াল আকাঞ্জি। কিন্তু মাঝপথেই সেই বল পেয়ে যান ইন্টার মিলানের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেজ। গোলরক্ষককে ওয়ান টু ওয়ানে পেয়ে যাওয়া মার্তিনেজের সামনে তখন নায়ক হয়ে যাওয়া সুবর্ণ সুযোগ। তবে তার নেওয়া শট ঠেকিয়ে সিটিকে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদেরসন। ৬৮ মিনিটে আসে সিটির মাইফলক গোলটি। আকানজির পাস পেয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে শট নেন বের্নার্দো সিলভা। প্রতিপক্ষের গায়ে লেগে বল পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় চলে যায়, আশেপাশেই ছিলেন ইন্টারের কয়েকজন খেলোয়াড়।
 
কিন্তু কেউ সেটি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ছুটে গিয়ে বিনা বাধায় জোরাল শটে বল জালে খুঁজে নিয়ে স্কোরলাইন ১-০ করেন রদ্রি। দুই মিনিট পরই সমতায় ফিরতে পারতো ইন্টার। কিন্তু ফেদেরিকো দিমার্কোর হেড বাধা পায় ক্রসবারে। ফিরতি বলে আবার হেড দিমার্কোর। কিন্তু এবার বলের সামনে পড়ে গেলেন দিমার্কোরই সতীর্থ বলদি নামা রোমেলু লুকাকু! হতাশা বাড়ে ইন্টার সমর্থকদের। পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের একেবারে শেষেও একটা সুযোগ আসে তিনবারের চ্যাম্পিয়নদের সামনে। কিন্তু রবিন গোজেন্সের হেড ঠেকিয়ে জাল অক্ষত রাখেন এদেরসন। নিশ্চিত হয়ে যায় সিটির শিরোপা জয়। শেষের বাঁশি বাজতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো সিটি শিবির, স্টেডিয়ামে সিটি সমর্থকরাও বাঁধভাঙা উল্লাসে শুরু করেন উদযাপন। শেষ হয় তাদের বহু বছরের অপেক্ষা; প্রিয় দলের হাতেই যে এখন ইউরোপ সেরার মুকুট। তাতেই যেন উল্লাসে ফেটে পড়ে কোটি কোটি সমর্থক।
 
এদিকে সিটির শিরোপা জয়ে আলভারেজের বিশ্বরেকর্ড এখন আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। সোনায় মোড়ানো মৌসুম কাটলো হুলিয়ান আলভারেজের। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ম্যানচেস্টার সিটির জার্সিতে প্রিমিয়ার লীগ, এফএ কাপ জয়। সবশেষ ‘স্কাই ব্লুু’ জার্সি গায়ে চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। শনিবার মধ্যরাতে ইস্তানবুলের আতাতুর্ক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে ম্যানচেস্টার সিটি। এতে ইতিহাসের পাতায় নাম ওঠে আলভারেজের। ফুটবল বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই মৌসুমে বিশ্বকাপ জয়ের পর নিজ ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লেন আর্জেন্টাইন তরুণ। বিশ্বরেকর্ড গড়ার ম্যাচে অবশ্য মাঠেই নামতে হয়নি আলভারেজকে। একই মৌসুমে বিশ্বকাপ এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়া দশম খেলোয়াড় হুলিয়ান আলভারেজ। আগের ৯ খেলোয়াড়ের মধ্যে কেউই একই মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ঘরোয়া কাপ জিততে পারেননি। ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ জেতার পর এই ছয় ফুটবলার বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে জিতেছিলেন ইউরোপিয়ান কাপ।
 
দারুণ কীর্তি গড়া খেলোয়াড়রা হলেন সেপ মেয়ার, হানস-গিয়োর্গ শোয়ারজেনবেক, পল ব্রাইটনার, জার্ড মুলার, বেকেনবাওয়ার ও উলি হোয়েনেস। ১৯৯৮ সালে এই গৌরব অর্জন করেন ফ্রান্সের ক্রিস্টিয়ান কারেম্বু। বিশ্বকাপ জয়ের বছরই রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেছিলেন তিনি। ২০০২ সালে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা রবার্তো কার্লোস একই বছর চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। সবশেষ ২০১৮ সালে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা রাফায়েল ভারান ইউরোপ সেরা হয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। কাতারে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন হুলিয়ান আলভারেজ। ৪ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছিলেন তিনি। এ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির মোট ম্যাচের অর্ধেকেরও কম খেলায় শুরুর একাদশে না থাকা আলভারেজ ১৭ গোল নিয়ে ইতিহাদের ক্লাবটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।
দেশকণ্ঠ/আসো
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।