দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : পুরনো ইনজুরি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তামিম ইকবালের। সে কারণে সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকলেও অনুশীলন করেননি। বুধবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট ম্যাচ। আর সেই টেস্টকে সামনে রেখে নিয়মিত অনুশীলন করে চলেছে লিটন দাসের দলের। তবে সবার আলোচনা আর আগ্রহের কেন্দ্রে ওপেনার তামিম ইকবালের ইনজুরি। পিঠের ব্যথায় সিরিজের একমাত্র টেস্টে এই বাঁ-হাতি ব্যাটারকে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে অধিনায়ক লিটন জানালেন ফিট থাকলেই কেবল খেলবেন তামিম। ঢাকা টেস্টে তামিমের খেলা নিয়ে লিটন বলেন, ’তামিম ভাইয়ের ইনজুরির ব্যাপার মেডিকেল টিম দেখবে অবশ্যই। তিনি যদি ফিট থাকেন ম্যাচ খেলবেন’। রোববার অবশ্য অনুশীলনের শুরুতে ওয়ার্ম-আপ করেন তামিম। পরবর্তীতে ইনডোরে এসে থ্রোয়ারদের বিপক্ষে ব্যাটিং অনুশীলন করেন। এরপর বিশ্রাম শেষে আবারও নেট বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করেন তিনি। তবে অনুশীলনের পুরোটা সময়জুড়ে তার শরীরী ভাষায় ছিল স্পষ্টত ইনজুরির ছাপ।
গত দু’দিন ধরে অনুশীলনের সময় বারবারই কোমড়ে হাত দিয়ে মাঠে বসে পড়তে দেখা গিয়েছিল তাকে। তামিমের ইনজুরির সবশেষ অবস্থা জানতে বিসিবি চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনো কিছু টেস্ট করতে হলে তো মাঠে নামতে হবে। মাঠে নেমে নিজেদের পুশ করুক, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং করুক। তাহলে ফিজিও বা কোচরা যারা আছে তারা বুঝতে পারবে কি অবস্থা। যদি বিশ্রাম দেন তাহলে তো বুঝবেন না কি অবস্থা। যেসব ট্রেনিং আছে করে দেখুক। তার জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে।’ ইতোমধ্যে চোটের কারণে আসন্ন টেস্টে অনিশ্চিত এই ফরম্যাটে টাইগারদের নিয়মিত অধিনায়ক ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে তার ফেরার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বিসিবি। এখন প্রতি সিরিজের আগে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টে নতুন রীতি চালু হয়েছে বলা যায়। তামিম ইকবাল ফিট আছেন কি না, যদি ফিট থাকেন তো দুশ্চিন্তা থেকে যায় ঠিক ম্যাচের আগে না ইনজুরিতে পড়েন! আর যদি ফিট না থাকেন তবুও একজন বাড়তি ওপেনারকে নিয়ে ভাবতে হয় নির্বাচকদের।
অবস্থা এমন যে তামিম ফিট থাকুন আর না থাকুন একজন বাড়তি ওপেনারকে তৈরি রাখতে হয় যে কোনো মুহূর্তে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলে যোগ দেওয়ার জন্য। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগেও একই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। তামিম ইকবালের পিঠের পুরনো ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই তামিমের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে এবং একজন ওপেনারকেও প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে। তামিমকে নিয়ে এই অবস্থা নির্বাচকদের কাজ একটু বেড়েছে। দলে তিন ওপেনার এমনিতেই থাকেন। সঙ্গে আরও একজন ওপেনারকে নিয়ে ভাবতে হয় নির্বাচকদের। হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘তামিম ইকবাল তো আসলে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার। আমরা তো সব সময় চাই ও যেন খেলে। কিছু সময় ইনজুরির কারণে সে খেলতে পারে না। ওই সময় বাড়তি ওপেনার বা অন্য কারও চিন্তা তো করতেই হয়। কিন্তু সবসময় প্রথম ব্যাপারটা থাকে শেষ পর্যন্ত দেখা তামিমের জন্য।’ জরুরি সিরিজগুলোর আগে ইনজুরির কারণে পূর্ণ ফিট তামিমকে পায় না বাংলাদেশ দল। গেল ইংল্যান্ড সিরিজের আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) পিঠের চোটে পড়েছিলেন তিনি।
এর অগে ২০২১ সালে এভারেস্ট প্রিমিয়ার লিগে খেলতে গিয়ে আঙুলের চোটে পড়েন। ফলে মিস করেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ, সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টেস্ট খেলতে পারেননি। এছাড়া পেটের পীড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও একটি টেস্ট খেলেননি। অথচ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ঠিকই খেলেছিলেন এই ওপেনার। এরপর ভারতের বিপক্ষে পুরো সিরিজও মিস করেন কুঁচকির চোটে পড়ে। তামিমের জন্য শেষ পর্যন্ত দেখতে গিয়ে বাংলাদেশ দলকেও ভুগতে হচ্ছে দুই ভাবে। একদিকে তামিমসহ দলীয় পরিকল্পনা সাজানো। পাশাপাশি তামিম ছাড়াও একটা পরিকল্পনা সাজিয়ে রাখতে হয়। এবারও যেমন আফগান সিরিজের টেস্টের চিন্তা করার আগে তামিমকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। গত বছর জুনে উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টের পর এক বছরে মাত্র একটি টেস্ট সিরিজ (আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি) খেলেছেন তামিম। ইনজুরি নিয়ে বারবার হোঁচট খাওয়া তামিমকে নিয়ে নির্বাচকরাও এখন নিরুপায়। নির্বাচক সুমন তামিমের জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান, ‘স্ক্যানে কোনো খারাপ কিছু আসেনি। সাধারণ ব্যাক পেইন। আমাদের হাতে তো আরও তিনদিন সময় আছে। বিশ্রাম নিয়ে তামিম ঢাকা টেস্টে খেলতে পারেন। দ্রুতই নিশ্চিত করে বোঝা যাবে ওর অবস্থা। ও আমাদের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান, সবচেয়ে অভিজ্ঞও। ও থাকলে আমাদের ব্যাটিং অর্ডারে শুরুর দিকের ভারসাম্যটা থাকে’।
সে কারণেই দেশের ক্রিকেটপাড়ায় গুঞ্জন আছে, ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টেস্ট ক্রিকেট ছেড়ে দিতে পারেন তামিম ইকবাল। সম্প্রতি কাছের বন্ধুদের এক আড্ডায় এ ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে এর সত্যতা নিয়ে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে বিসিবি পরিচালক বা জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের সদস্যদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরাও কিছু বলতে পারেননি। এর সত্যতা আপাতত জানা না গেলেও তামিম ইকবাল যে ধীরে ধীরে টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, ম্যাচ খেলার পরিসংখ্যান দেখে তা বোঝা যায়। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ৩৩টি টেস্টের বিপরীতে ১৮ ম্যাচে খেলেছেন বাঁহাতি এ ওপেনার। অর্থাৎ চোট ও বিশ্রাম মিলিয়ে ১৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। টেস্ট খেলতে না পারলেও গত তিন বছরে ওয়ানডে সিরিজ তেমন একটা বাদ দেননি। অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে শুধু ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটি খেলতে পারেননি তিনি। ২০০৮ সালে টেস্ট অভিষেকের পর টানা ১০ বছর টেস্টে নিয়মিত ছিলেন তামিম।
দেশকণ্ঠ/আসো