• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৫:১৭

’মাওলা’ শব্দটি যে ভাবে হযরত আলীর আ. মাথার মুকুট হলো

জি আর সুমন : প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে দু’জাহানের বাদশা সরদারে সাকালাইন সমস্ত সৃষ্টির রহমত হয়ে নবী মোহাম্মাদ মোস্তফা (দ.) মানবরূপে রসূল হিসেবে প্রেরিত হন এবং অন্ধকার পৃথিবীকে আলোয় ভরিয়ে দেন। নবী মোস্তফা (দ.) মদিনায় হিজরত করার পর জীবনের শেষ প্রান্তে একবার মাত্র পবিত্র হজ্ব পালন করেছিলেন এং আপন জন্মভূমি পবিত্র মক্কা নগরীকে চীর বিদায় জানানোর কারণে উক্ত হজ্বকে বিদায় হজ্ব বলে অবিহিত করা হয় আমরা এ বিষয়ে প্রায় সকলেই অবগত আছি যে উক্ত হজ্বে রসূল (দ.) যে ভাষন দিয়েছেন তা বিদায়,হজ্বের ভাষন।
 
৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে বিদায় হজ্বের সমাপ্তি শেষে রাসূল (দ.) এহরাম পরা অবস্থায় সোয়া লাখ মুসুল্লি সাথে নিয়ে মদিনার পথে অগ্রসর হন। ১৮ জিলহজ্ব তারিখে রাসূল (দ.) এর কাফেলা যখন গাদিরে খুম নামক জায়গায় উপস্থিত হন ঠিক তখন আল্লাহর তরফ হইতে রাসূল (দ.) নিকট এই আয়াত নাজেল হয়- "হে রাসূল আপনার রব হইতে আপনার দিকে যাহা নাজেল করা হয়েছে তাহা পৌছাইয়া দিন। যদি তাহা না করেন তাহা হইলে আল্লাহর রিসালত পৌছাইয়া দেওয়া হইল না। আল্লাহ আপনাকে মানব মন্ডলি হইতে লইয়া আসিবেন নিশ্চয় আল্লাহ কাফের কউমকে হেদায়েত করেন না" (৫:৬৭)। আয়াতটি আলীর মাওলাইয়াত ঘোষণা করার বিষয়ে অবতীর্ণ যা বাস্তবায়িত না করলে আল্লাহর রিসালাতই অপূর্ণ থেকে যায়। সুতরাং সঙ্গত কারণেই রাসূলে খোদা (দ.) উক্ত আয়াত নাজেল হবার সাথে সাথে কাফেলা থামিয়ে দিয়ে অহির নির্দেশক্রমে প্রায় সোয়া লাখ সাহাবির উপস্থিতে অনাড়ম্বর পরিবেশে গাদিরে খুম নামক স্থানে (গাদির অর্থ জলাশয় খুম মানে স্থান) উটের উপর বিছানো আসন একত্রিত করে মিম্বর তৈরি করেন এবং হযরত মাওলা আলী (আ.) কে সাথে নিয়ে মিম্বরে উঠে উপস্থিত সকল সাহাবাদের উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত ভাষন দেন এবং উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞেস করেন (আলাসতু আওলা বেকুম্ মিন্ আনফুসিকুম) আমি কি তোমাদের জানের থেকে অধিক প্রিয় নই তখন সকল সাহাবি হাজ্বী গাজী একত্রে এক বাক্যে দু হাত তুলে বলেছিলেন  (কালুবালা ইয়া রাসূল আল্লাহ) নিশ্চয় আপনি আমাদের জানের চেয়ে অধিক প্রিয়।
 
উপস্থিত সকল জনগণের কাছ থেকে সম্মতির স্বীকৃতি পাইয়া তিনি হযরত আলী (আ.) দু হাতকে শূণ্যে তুলে ধরে মহান প্রভুর নিকট দোয়া করেন (মান্ কুনতুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু, আল্লাহুম্মা ওয়ালে মান ওয়ালাহু, আদা মান আদাহু, আনুসর মান নাসারা, অখজুল মান্ খাজালা,ফাল ইয়াস হাদিল হাজেরুল খায়েরা) অর্থ্যাৎ "আমি যাহার মাওলা এই আলী তাহার মাওলা, হে আল্লাহ তুমি তাহাকে বন্ধু রূপে গ্রহন করো যে তাহাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে,তাহাকে শত্রুরূপে গ্রহণ কর যে তাহার সাথে শত্রুতা করে এবং সাহায্য কর তাহাকে যে সাহায্য করে এবং লাঞ্চনা দাও তাহাকে যে লাঞ্চনা দেয়।’
 
উক্ত হাদিস দ্বারা ইহাই প্রমাণিত হয়ে গেল মাওলা আলী (আ.) আল্লাহ এবং রাসূল (দ.) এর মনোনীত রিসালতের স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি। গাদিরে খুমের সংক্ষিপ্ত ভাষণের শেষে উপস্থিত সকল জনগনের মধ্যে মারহাবা মারহাবা ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছিল এমন কি হযরত ওমর (রা.) আবেগ আপ্লুত হয়ে উচ্চস্বরে বলেছিলেন "বাখখীন বাখখীন ইয়া আলী ইবনে আবু তালিব। তুমি ধন্য ধন্য হে আবু তালিবের সন্তান আলী"। গাদিরে খুমে মাওলা আলীর অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বিশ্বের সকল মোমিন নর নারীদের নেতা হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন মাওলা আলী (আ.) এবং কিয়ামত পর্যন্ত তিনিই সকল মোমিনদের নেতা হিসেবে সকল আশেকে রাসূল (দ.) এর হৃদয়ে আসন পেতে থাকবেন কারণ রাসূল (দ.) বলেছেন আমি তোমাদের কাছে দুইটি বিষয় রেখে যাচ্ছি একটি হচ্ছে আল্লাহর পবিত্র কিতাব কোরআন অন্যটি হচ্ছে আমার আহলে বাইয়াত, তোমরা যদি উক্ত দুটি বিষয় আকড়ে ধরে থাকো তবে কখনো পথভ্রষ্ট হবেনা। সেই থেকে মাওলা শব্দটি হযরত আলী (আ.) এর মাথার মুকুট হয়ে সকল মোমিন ও আশেকদের হৃদয়ে উচ্চ আসনে সমাসীন হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
 
ঐতিহাসিক গাদিরে খুমের এ ঘটনা স্বীকৃতি রয়েছে বিভিন্ন তফসির-কাশ্শাফ,  দুর্রে মনসুর, গারায়েবুল করান ও হাদিস (বোখারি ও মেশকাত) গ্রন্থে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত গ্রন্থাদিতেও (যেমন হজরত আলীর (রা) জীবন ও খিলাফত)  মাওলার অভিষেক ও ইসলামের মতভেদের কারণ, মাওলা সূফী সদর উদ্দিন আহ্‌মদ চিশতী, এই সত্যতার প্রমাণ রয়েছে।
লেখক : প্রভাষক, কালীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।