মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ১৪ জুলাই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্টিত হবে। টেষ্ট সিরিজের জিতলেও ওয়ানডে সিরিজে হেরে যায় স্বাগতিকরা। যার মধ্যে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে জিতে আত্ববিশ্বাস ফিরে পেয়েছে লিটন দাসের দল। মাত্র ১২৫ রানে অলআউট করে করে ৭ উইকেটের বড় দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে পূন্যভুমিতে পাড়ি জমায় সাকিব আল হাসানের দল। সাফল্যের বিচারে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে রশিদ খানের দল। যদিও চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শীষ্যরা দাবী করেছেন তারাই ফেবারিট। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাকিব রশিদ খান-মুজিব-উর রহমান-নুর আহমেদের নামই নেননি। তার মানে এই নামগুলো নিয়ে নিজের উপর অতিরিক্ত কোন চাপ নিতে চান না। সিলেট শুক্রবার সন্ধা ছয়টায় কুড়ি ওভারের প্রথম ম্যাচে একে অপরের মোকাবেলা করবে। এর আগে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছে আফগানরা। চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করেই সেখান থেকে সরাসরি সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেয় বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান দল। পরিসংখ্যানে কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে বাংলাদেশের চেয়ে আফগানিস্তান অনেক এগিয়ে রয়েছে।
মাঠের লড়াইয়ে ৯ বারের মোকাবেলায় আফগানদের জয় ছয়টিতে এবং বাংলাদেশের তিনটিতে। সবই সহজ জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। অন্য দিকে জয় পেতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে সহজভাবেই যথাক্রমে ৮ ও ৭ উইকেটে জিতেছে আফগানিস্তান। কিন্তু শেষ পাঁচ লড়াইয়ের মধ্যে দু’টি জয় পায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ আফগানদের বিপক্ষে মোট তিনটি জয়ের মধ্যে দু’টিই সাম্প্রতিক সময়ে পেয়েছে টাইগাররা। শেষ ওয়ানডের জয় আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে আত্মবিশ^াস জোগাবে বলেই আশা করছে টিম টাইগার্স। ২০২২ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হয়েছিল। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ৭ উইকেটে জয়ের পর লিটন বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে শেষ ওয়ানডের জয় টনিক হিসেবে কাজ করবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ছেলেরা ভালো পারফরম্যান্স করেছে। শরিফুল ও তাসকিন নতুন বলের সুবিধা কাজে লাগিয়েছে’।
টানা দুই হারে আগেই ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায় ছিল টাইগাররা। তবে শেষ ম্যাচে দাপুটে প্রত্যাবর্তন করে লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দল। ৭ উইকেটের বিশাল জয়ে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা এড়ায় লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। আর জয় শেষে টাইগার অধিনায়ক বলেন, টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে এই জয় খেলোয়াড়ের অনুপ্রেরণা দেবে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে হারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি টাইগাররা। ৩৩৪ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮৯ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ১৪২ রানের বড় জয়ে সিরিজ জিতে নেয় আফগানিস্তান। তৃতীয় ম্যাচে গোটা সিরিজে দাপট দেখানো আফগানদের টুটি চেপে ধরে টাইগার বোলাররা। মাত্র ১২৬ রানে আফগানিস্তানকে অলআউট করে দেয় শরিফুল-তাসকিনরা। এরপর ১৫৯ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় লিটনের দল।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে দুর্দান্ত ছিলেন টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম। মাত্র ২১ রানের খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন তিনি। শেষ ম্যাচের ম্যাচসেরা শরিফুল ইসলাম বলেন, ’শেষ ম্যাচে যা করতে পেরেছিল তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ। এই পর্যায়ে আসতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আয়ারল্যান্ড সিরিজের পর প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে এবং পেস বোলিং কোচ এলান ডোনাল্ড আমায় কিছু কাজ দিয়েছিলেন, সেগুলো করেছি আমি।’ তৃতীয় ওয়ানডেতে ২৩ রানের খরচায় ২ উইকেট নেয়া তাসকিন আহমেদের প্রশংসা করে শরিফুল বলেন, ‘যখন বোলিং পার্টনারশিপ ভালো হয়, তখন পারফরম্যান্সের উন্নতি হয়। তাসকিন ভাই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। যা আমার কাজ সহজ করে দিয়েছে। আশা করছি এই পারফরম্যান্স টি-টোয়েন্টি সিরিজে কাজে দেবে’। যদিও বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে নেই ওয়ানডে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদী। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের এই সিরিজে আফগানদের নেতৃত্ব দেবেন রশিদ খান। ওয়ানডে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ বলেন, ‘আমি টি-টোয়েন্টি সিরিজের অংশ নই। দলের জন্য শুভ কামনা রইলো। আফগান সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা যেখানেই যাই, তারা আমাদের সমর্থন জানাতে চলে আসে।’
দুই দেশ এবার নিয়ে পরস্পরের বিপক্ষে তৃতীয় সিরিজ খেলছে। দুই দল প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ৯ বছর আগে, ২০১৪ সালে। মিরপুরের ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৯ উইকেটে। সর্বশেষ মুখোমুখি হয় গত বছরের আগস্টে। এশিয়া কাপের ওই ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতেছিল আফগানিস্তান। গত বছর মার্চে তিন জাতির টুর্নামেন্টে দুই দল খেলে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়েছিল দুই ম্যাচে। দুই দলই একটি করে ম্যাচ জিতেছিল। দুই দেশ প্রথম সিরিজ খেলে ২০১৮ সালে। ভারতের দেহরাদুনে তিন ম্যাচের সিরিজটি আফগানিস্তান হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগারদের। ম্যাচ তিনটি আফগানরা জিতেছিল ৪৫ রান, ৬ উইকেট ও ১ রানে। করোনার আগে ২০১৯ সালে দুই দেশ দুই ম্যাচের সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশে। মিরপুরে ২৫ রানে জিতেছিল আফগানিস্তান। চট্টগ্রামে ৪ উইকেটে জিতে সিরিজে সমতা আনে টাইগাররা। সিলেটের উইকেটে বাউন্স অপেক্ষাকৃত বেশি। পেসারদের তুলনায় বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন স্পিনাররা। সব মিলিয়ে স্বাগতিক হলেও বাংলাদেশের জন্য সিরিজ জয় বেশ কঠিনই হবে। দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটি ১৬ জুলাই একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।
পথরেখা/আসো