পথরেখা অনলাইন স্পোর্টস : পাকাপাকিভাবে বাদ না দিলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখন জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন। সাবেক এ অধিনায়কের কথা জিজ্ঞেস করা হলে নির্বাচকদের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছিল বিশ্রামের কথা। সে কারণে এখনো ধোয়াশা কাটছেনা। পবিত্র হজ পালন করে দেশে ফিরে হঠাৎ করেই অনুশীলনে সিরিয়াস এই ডানহাতি ব্যাটার। সে কারণেই প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে কি বিশ্বকাপের দলে থাকছেন রিয়াদ? যদিও এই কথার উত্তর দেবার মতো কাউকে আপাতত কিকেট বোর্ডে পাওয়া যায়নি। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কোন নির্দেশনা পেয়ে তবেই মাঠে নেমে পড়েছেন তিনি। অথচ দল থেকে বাদ পড়ার পর ছিলেন না কোথাও। প্রাথমিক স্কোয়াড থেকে শুরু করে কোনো প্রস্তুতি ক্যাম্পে ছিল না তার নাম। তিনি চলে যান ছুটিতে। কোথাও না দেখা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে অবশেষে দেখা গেলো মিরপুরে। শেরেবাংলায় যখন বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতের সঙ্গে লড়ছিল, তখন তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন একাডেমি মাঠে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাঠে আসেন তিনি। আধঘণ্টা পর রানিং দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেন। এরপর শুরু হয় ব্যাটিং সেশন। সেটি চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। তার সঙ্গে ছিলেন একজন থ্রোয়ার ও স্পিনার আরাফাত সানি জুনিয়র। অনুশীলন নিয়ে ফেসবুকে একটি পুরনো ছবি দিয়ে রিয়াদ লিখেন, ‘চ্যালেঞ্জ ইওর স্টোরি।’ তিনি সবশেষ লাল-সবুজের জার্সিতে খেলেছেন মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তার ব্যাট থেকে আসে ৩১, ৩২ ও ৮ রান।
এরপর থেকেই যেন অচেনা আর হাওয়া ছিলেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ছাড়াই সর্বশেষ কয়েকটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ঘুরেফিরে প্রতিবারই আলোচনায় ছিলেন এই অলরাউন্ডার ব্যাটার। গত কয়েক মাস একটাই প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে, তা হলো বিশ্বকাপ দলে রিয়াদ থাকবেন কিনা! এ নিয়ে মিশ্র মন্তব্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মুখে। তবে রিয়াদও যে এখনও হাল ছাড়েননি, সেটাই আরেকবার টের পাওয়া গেল তার প্রস্তুতি দেখে! গত কয়েক বছর ধরেই ওয়ানডেতে দারুণ শক্তিমত্তা দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশ। ধারাবাহিক সেই সাফল্য তারা আসন্ন ভারত বিশ্বকাপেও টেনে নিয়ে যেতে চায়। তবে দলের ভাবনা এখন ‘নম্বর সেভেন’ পজিশন নিয়ে। সেই একজন ক্রিকেটার কে হবেন, তা নিয়েই অনেকদিন ধরে জল্পনা চলছে। যার দৌড়ে আছেন মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, ইয়াসির রাব্বি এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতদের মতো ক্রিকেটাররা। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এর আগেও জাতীয় দলের হয়ে নিজের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।
কিন্তু প্রতিযোগিতাপূর্ণ টাইগার স্কোয়াডে জায়গা করে নেওয়া তার জন্য বেশ কঠিনই। এজন্য নিজের শেষ চেষ্টায় তিনি কমতি রাখতে রাজি নন। তাই তো মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে ছুটে আসেন ডান-হাতি এই ব্যাটার। এরপর ব্যাট হাতে তাকে একাডেমি মাঠে অনুশীলন করতে দেখা গেছে। অনুশীলনের একটি ছবি দিয়ে নিজের ফেসবুক পোস্টে মাহমুদউল্লাহ লেখেন, ‘চ্যালেঞ্জ ইওর স্টোরি।’ আসন্ন এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ দলে রিয়াদ থাকবেন কিনা সে বিষয়ে অবশ্য এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি নির্বাচকরা। আফগানিস্তানের সঙ্গে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কাছে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা এখনই আমি বলতে পারব না। আমরা ২২ তারিখের মধ্যে ফাইনাল স্কোয়াডটা করব, তারপর আপডেট দিতে পারবো।’ আগামী ৩০ আগস্ট থেকে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপের আসর। সেখানে ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে। ‘বি’ গ্রুপে তাদের আরেক প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। পরবর্তীতে ৫ অক্টোবর থেকে ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু হবে। ৭ অক্টোবর ধর্মশালায় হতে যাওয়া ম্যাচেও টাইগারদের প্রতিপক্ষ রশিদ খানরা।
এখন কী গল্প বদলাতে চাইছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেই প্রশ্ন উঠেছে। এখন তার সামনে একটি চ্যালেঞ্জ, যে গল্প বদলাতে চাইছেন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বছরের মার্চে সর্বশেষ ইংল্যান্ড সিরিজে খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এর পরই বিশ্রামের মোড়কে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। বিশ্বকাপে থাকবেন কি না, এ ব্যাপারেও অনেক আলোচনা হচ্ছে। তাঁর ৭ নম্বর পজিশনে কয়েকজন খেলোয়াড়কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও সেভাবে কেউই ভালো করতে পারেননি। তাই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ আবারও আলোচনায়। এদিকে বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ সামনে রেখে ২৯ জুলাই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্প। ২৭-২৮ জন খেলোয়াড় থাকবেন এই ক্যাম্পে। দুই দিন আগে বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছিলেন, ক্যাম্পে প্রতি পজিশনে অন্তত দুজন খেলোয়াড়কে রাখবেন তাঁরা। আগামী শনিবারের মধ্যে ক্যাম্পের স্কোয়াডও জানাবে বিসিবি। মাহমুদউল্লাহকে ফেরানোর ব্যাপারে নান্নু অবশ্য কোনো কিছুই স্পষ্ট করেননি সেদিন। বলেছিলেন, ‘এটা এভাবে এখন আমি বলতে পারব না। আমরা ফাইনাল স্কোয়াডটা করে নিই। আমরা ২২ তারিখের মধ্যে ফাইনাল স্কোয়াডটা করব। করার পরে তারপর আমরা আপডেটটা দিতে পারব।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সবশেষ দেশের হয়ে ওয়ানডে খেলেছেন এই বছর ৬ই মার্চ চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই সিরিজে ৩ ম্যাচ খেলে সব মিলিয়ে করেছেন ৭৮ রান। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ওভারও বল করেননি। অন্যদিকে গেল এক বছরে (৫ আগষ্ট ২০২২ থেকে ৬ মার্চ ২০২৩) তার ব্যাট থেকে এসেছে ৯ ম্যাচে দুটি ফিফটি যেখানে আছে অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংস। ৪৫.৮৫ গড়ে করেছেন ৩২১ রান। বলা যায় তার এই পরিসংখ্যানে জাতীয় দলে ফিরতেই পারেন। কারণ তার পরিবর্তে ৬ ও ৭ নাম্বার পজিশনে ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি, আফিফ হোসেনরা কেউ ভালো করতে পারেননি। কিন্তু যদি বিসিবি এই পজিশনে একজন অলরাউন্ডারকে চায় সেই ক্ষেত্রে তার বোলিং থেকে সার্ভিস পাওয়া সত্যি কঠিন। কারণ গেল দুই বছরে ১৯ ম্যাচে খেলে বল করেছেন মাত্র ৮ ম্যাচে। যেখানে তার শিকার মাত্র ৬ উইকেট। ২০১৯ বিশ্বকাপ থেকেই কাঁধের ইনজুরির কারণে এই অলরাউন্ডার বল হাতে তুল নিতে পারছেন না। অন্যদিকে দুই বছরে ১৯ ম্যাচে ক্যাচ নিয়েছেন ৭টি। এই পরিসংখ্যানে তার ফিল্ডিং খারাপ সেটি বলা যাবে না। এখন দেখা যাক বিশ্বকাপের দলে থাকেন কিনা।
পথরেখা/আসো