পথরেখা অনলাইন : আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অনেকটা হঠাৎ করে অবসর নিয়ে চারিদিকে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। এর ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই আবারও অবসর ভেঙ্গে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। সে সময়টাতে নানা নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। তখনি ওয়ানডে অধিনায়কের বিশ্রামের বিষয়টি সামনে চলে এসেছিল। কোমরের ইনজুরিতে ভোগার পর যেন কিছুতেই নিস্তার মিলছিলনা। এখন দে মাসের বিশ্রাম শেষে ফেরার কথা চট্টগ্রামের এ ক্রিকেটারের। কিন্তু তামিম কবে ফিরবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছেনা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কোন কর্মকর্তা। যদিও বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানা গেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। সংবাদ সম্মেলনে তার অঝোর কান্না দেখে কারও বুঝতে বাকি ছিল না, আবেগের বশেই এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন দেশসেরা ওপেনার ও ওয়ানডে অধিনায়ক। তামিমের সেই আবেগী অবসরকে মেনে নিতে পারেননি ভক্ত-সমর্থকরা। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ডেকে অবসর ভাঙার অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে সিদ্ধান্ত বদলান তামিম।
ইনজুরি সমস্যা রয়েছে, আপাতত তিনি ছুটিতে আছেন। জাতীয় দলে ফেরার কথা এশিয়া কাপ দিয়ে। আসলেই কি তামিম জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন? একটা ধোঁয়াশা কিন্তু এখনও রয়ে গেছে। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২৯ জুলাই থেকে টাইগারদের কন্ডিশনিং ক্যাম্প হওয়ার কথা। তামিম সেই ক্যাম্পে থাকবেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু কদিন আগে বলেছিলেন, মেডিকেল টিমের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে তামিমের থাকা না থাকা। তামিম এরই মধ্যে তার পরিবার নিয়ে দুবাইয়ের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছেন। দুবাই থেকে যাবেন ইংল্যান্ডে। সেখানে নিজের চোটের চিকিৎসা করানোর কথা রয়েছে তার। দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ওয়ানডে অধিনায়ক বলেন, ‘আমি পরিবারের সাথে দুবাই যাচ্ছি। সেখানে থেকে চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডে যাব। ঢাকায় ফিরে বোর্ডে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির সাথে কথা বলব। আমি জালাল ইউনুস ভাইয়ের সাথে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাই, আমার এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ কি, গত ছয়-সাতমাস ধরে আমি কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি’।
তামিম আরও জানিয়েছেন, ’আমার অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। ভেতরের বিষয়গুলো নিয়ে আমি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে জানাতে আগ্রহী নই। কেবল বিসিবির সঙ্গেই এই ব্যাপারে কথা বলতে চাই, পরিষ্কার করে বললেন ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ভাইয়ের কথা। আমরা পেশাদারিত্ব নিয়ে অনেক কথা বলি এবং এটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আমরা প্রায়ই সেটা মেনে চলি না। গোপনীয়তা বলে কিছুই নেই। আমাদের সবসময় একটা লিমিট থাকা উচিত, মাঝেমধ্যে আমরা সেটা দারুণভাবে ক্রস করে ফেলি। অতীতেও এমন হয়েছে, আমি যখনই বোর্ডের সাথে ব্যক্তিগত কথা বলেছি, সেটাও গণমাধ্যমের কাছে জানানো হয়েছে। এটা শুধু আমার সাথে না, আরও অনেকের সাথেই ঘটেছে। এমনটা যে কাউকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এটা হলে হয় কি, কথা বলতেও ভয় লাগে যে মানুষের কাছে না সেটা আবার চলে যায়।’ তামিমের আশা বিসিবির সঙ্গে এবার যা আলোচনা হবে, সেটা তার এবং বোর্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ওয়ানডে অধিনায়কের ভাষায়, ‘আমি আশা করি, ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধানের সাথে আমি যাইই আলাপ করি, সেটা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। জালাল ভাই এর প্রতি আমার সেই বিশ্বাস আছে’।
অবসর ভেঙে ফিরলেও আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ খেলেননি। ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই ক্যাম্প এবং এশিয়া কাপের দলে তামিম থাকবেন কি না, এ ব্যাপারে হচ্ছে আলোচনা। তবে তামিমকে নিয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছেন না বিসিবি কর্মকর্তারা। যদিও মিরপুরে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও তামিমের ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলতে পারলেন না। সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তামিম ২৬ জুলাই লন্ডন যাচ্ছে। ওখানে চিকিৎসা আছে, ডাক্তার দেখাবে। চিকিৎসার পর তার অবস্থা জেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার পরিকল্পনা হলো ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সে দেশে ফিরবে। এরপর বর্তমান (ফেরার পর) শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত আসবে।’ এরই মধ্যে পরিবারসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছেন তামিম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবিতে দেখা যায় পরিবারের ২৭ সদস্য নিয়ে মধ্য প্রাচ্যের দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে তাঁর বড় ভাই সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবালও রয়েছেন। যিনি বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজারও।
পথরেখা/আসো