মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : যে কোন দলে কোচ-অধিনায়ক সম্পর্ক বেশ জরুরী। সেটা যদি সুসম্পর্ক হিসেবে পরিগণিত হয় তাহলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে সুসম্পর্কের কথা যেমন শোনা যায়, ঠিক তেমনি উল্টোটাও শোনা যায়। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবালের হঠাৎ অবসরের পেছনে শোনা যায় হেড কোট চন্ডিকা হাথুরুসিংহের নাম। অভিমান আর কষ্টে কাপ্তানী ছাড়লেও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ফিরে আসেন। এখন বিশ্বকাপের আগে দলে কোচ-অধিনায়কের সুম্পর্ক থাকাট জরুরী। এর আগে তামিম ইকবাল অধিনায়ক হয়ে বারবারই এক কথা বলেছেন। সংবাদ সম্মেলন বা কিছুদিন আগেও দলে কোনো ক্রিকেটারের নিশ্চয়তা প্রশ্নে নিজেকে রেখেছেন সবার আগে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নিজে নিশ্চিত না’ বলা তামিম এখন সত্যিকার অর্থেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টিম মানেজমেন্ট তাকে বিশ্রাম নিতে বলায় একদম অবসরই নিয়ে নেন। এরপর নানা নাটকীয়তা শেষে বিশ্বকাপে তাকেই অধিনায়ক হিসেবে দেখার কথা বলেছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। কিন্তু বড় প্রশ্ন, ইনজুরির কারণে তামিম শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলে কী হবে? সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট সবচেয়ে সহজ উপায় সামনে এনেছেন।
অনেকটা পরিস্কারভাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, তামিম ইনজুরিতে পড়লে সাকিব আল হাসানকেই বিশ্বকাপের অধিনায়ক করা উচিত। সাকিবকে অধিনায়ক হিসেবে অপছন্দ করার কারণ নেই কোনো। বাংলাদেশের বড় ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা এই অলরাউন্ডার বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার একমাত্র পছন্দ। তাই লিটন দাসকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ওয়ানডের জন্য নেতৃত্ব দিলেও এর বেশি এগোতে চায়নি বিসিবি। তামিমের জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা থাকলেও এই ব্যাটার ফিট না হলে খালেদ মাসুদ সাকিবকেই চাইছেন, ‘তামিম যদি ইনজুরির কারণে নেতৃত্ব না দিতে পারে তাহলে আমার কাছে মনে হয় ৯০ ভাগ মানুষই বলবে সাকিব আল হাসান। অনেকেই হয়তো আছেন কিন্তু আমি কাউকেই ছোট করব না তার অনেক সময় আছে। কিন্তু সাকিব যে একটা ব্র্যান্ড, সে যখন আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলবে, ড্রেসিংরুমে থাকবে...সাকিব এই জায়গাটা তৈরি করেছে। তো কোনো সন্দেহ নেই তামিম যদি কোনো কারণে মিস করে তাহলে সাকিবকে ট্রাই করা যায়।’
দ্বিতীয় মেয়াদে তামিম অধিনায়ক হয়ে ফিরলেও যে বাংলাদেশ দলের সমস্যা মিটে যাবে এমন ভাবার কারণ নেই। তার অবসর কান্ডের পেছনে অধিনায়ক হিসেবে কোচের অপছন্দও একটি কারণ। কঠোর কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অবশ্যই নিজের দলে আনফিট কাউকে দেখতে চাইছেন না। সে কারণেই তামিম তার পছন্দের তালিকায় নেই। সেখান থেকে কোচের সঙ্গে অধিনায়কের দূরত্ব বেড়েছে। বিশ্বকাপের আগে এই দূরত্ব বাংলাদেশ দলের জন্যই অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করেছে। এমন অবস্থা যে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মধ্যে গত ৬ জুলাইয়ের পর থেকে কোনো কথাই হচ্ছে না। দুবাইতে ছুটি কাটাতে দেশ ছাড়ার আগে তামিম নিজেও বলে গেছেন হাথুরুর সঙ্গে তার কথা হয়নি। এমনকি দুজনের কেউই যোগাযোগ করেননি। এতেই স্পষ্ট তামিম-হাথুরুর পথ দুদিকে গেছে বেঁকে, আর এই পথের দূরত্ব কেবল বাড়ছেই। খালি চোখে তা বুঝেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ।
এছাড়া বিশ্বকাপের আগে এই দূরত্ব ঘোচানোর আহ্বান জানালেন তিনি, ‘তামিম বিশ্বকাপে মাশরাফীকে মেন্টর হিসেবে নিতে চান। অবশ্যই মাশরাফী খুবই গ্রহণযোগ্য একজন মানুষ। যেহেতু কোচ ও অধিনায়কের একটা দূরত্ব আছে। দল হিসেবে আমরা ভালো ফল আশা করি। সেখানে দূরত্বটা কমানো গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো তামিম এজন্য মেন্টর হিসেবে চেয়েছিলেন যে কি না এই দূরত্বটা কমাতে পারে।’ এদিকে ক্যাম্পের ‘ফাইন টিউনিংয়ে’র খোঁজে রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এশিয়া কাপ-বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য প্রাথমিক দল ঘোষণা হতে হতেও যেন হচ্ছে না। একেক দিন একেকরকম সংবাদ চাউর হলেও বিসিবি এখনো ক্যাম্পের পরিকল্পনা চূড়ান্তভাবে ঠিক করতে পারেনি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। জানিয়েছেন এখনো ক্যাম্পের যাবতীয় সবকিছু ঠিকঠাক করার কাজ করে যাচ্ছে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স। ‘ক্যাম্পের সূচিটা ক্রিকেট অপারেশন্স করছে। আমরা এখনও কিছু ফাইন টিউনিংয়ে আছি। ইন্টারনালি কিছু এরেঞ্জমেন্ট আছে। ওগুলো কভার করে আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব যে, কোথায় এবং কত দিন করছি’, এভাবে বলেছেন নিজামউদ্দিন। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স সূত্র জানিয়েছে, ৩১ জুলাই থেকে ক্যাম্প শুরু হবে। চলবে আগস্টের ২৪ তারিখ পর্যন্ত। তামিম ইকবাল ইস্যু ছাড়াও হঠাৎ করে বিসিবির মাথা-ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে জাতীয় দলে থাকা ক্রিকেটারদের ডাক পাওয়া। ক্যাম্পের শুরু থেকে পাওয়া যাবে না সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয় ও শরিফুল ইসলামকে।
সাকিবের আগে থেকেই সব ঠিক থাকলেও তাওহীদ-শরিফুল পরে ডাক পেয়েছেন। তারা লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলে তবে ফিরবেন। দল ফাইনালে উঠলে ২১ আগস্টের আগে ক্যাম্পে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। ৩০ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এলপিএল। জাতীয় দল ছাড়াও ইমার্জিং দলের হয়ে পারফর্ম করা ক্রিকেটারসহ প্রাথমিক স্কোয়াড হতে পারে ২৫-২৬ জনের। ক্যাম্প শুরুর পর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এশিয়া কাপের দল ঘোষণার কথা রয়েছে। ক্যাম্পের শুরুতে হবে ফিটনেস ট্রেনিং। এরপর স্কিল ট্রেনিংসহ মূল অনুশীল শুরু হবে প্রথম সপ্তাহ পর। আফগানিস্তান সিরিজ শেষে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেসহ কোচিং স্টাফরা আছেন ছুটিতে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কোচদের ফেরার কথা রয়েছে। তারা এলেই মূলত শুরু হবে স্কিল ট্রেনিং। এর আগে ফিটনেস নিয়ে কাজ করবেন ক্রিকেটাররা। সবকিছু চাপিয়ে বিশ্বকাপে সেরা সাফল্যের লক্ষ্য এবার।
পথরেখা/আসো