পথরেখা অনলাইন : ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম মাহমুউল্লাহ রিয়াদ। দলে না থেকেও প্রধান কোচ থেকে শুরু করে নির্চাচকদের তার বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে। এখন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য অনুশীলন করতে যে ৩২ জনের দল দেওয়া হয়েছে সেখানে রয়েছে রিয়াদের নাম। পাশাপাশি সৌম্য সরকারের নাম থাকলেও নেই এনামুল হক বিজয়েল নাম। তবে একাধিক সুত্র থেকে জানা গেছে নিজের মতো করে যে ২০ জনের দল করেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাতে নেই সাবেক অধিনায়কের নাম। জাতীয় দল ও আশেপাশে থাকা ক্রিকেটারদেরক নিয়ে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ দলের ফিটনেস ক্যাম্প। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে মিরপুর শের-ই বাংলায় এই ক্যাম্পে রয়েছেন রিয়াদ-সৌম্যরাও। জানা গেছে, এই ক্যাম্প থেকেই ২০-২২ জনের এশিয়া কাপের জন্য প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করবে বিসিবি। যেখান থেকেই মূলত বাছাই করা হবে এশিয়া কাপের চূড়ান্ত দল। ফিটনেস ক্যাম্পে রিয়াদ থাকলেও এশিয়া কাপের চূড়ান্ত দলে এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকবেন কি না সে নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। বোর্ডের প্রভাবশালী পরিচালকরা চান অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ দলের সাত নম্বর পজিশনের জন্য নেওয়া হোক।
বিগত দিনে অর্জন করা অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়ে দলে রাখার পরিকল্পনা আটছেন তারা। তবে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের চাওয়া অবশ্য ভিন্ন। একটি গণমাধ্যমের তথ্য মতে, স্কিল ক্যাম্পের জন্য কোচের দেওয়া ২০ জনের তালিকায় রিয়াদের নাম নেই। জাতীয় দল নির্বাচকরাও মিডলঅর্ডার এ ব্যাটারকে নিয়ে কিছু বলেনি। ফলে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য ২০ জনের একটি পুল তৈরি করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দলের সাত নম্বরে হাথুরুর তালিকায় রয়েছেন আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদী, শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও সৌম্য সরকাররা। তবে রিয়াদ শেষ পর্যন্ত ২০ জনের স্কিল ক্যাম্পে থাকবে কি না সেটা জানা যাবে আগামী মাসের ৫ অথবা ৬ আগস্ট। রিয়াদকে দলে নিতে পরিচালকদের একাংশ দেনদরদার করেছে। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ সামনে রেখে জাতীয় দল নির্বাচন নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। দড়ির একদিকে টিম ম্যানেজমেন্ট ও জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেল, অন্যদিকে কতিপয় পরিচালক। প্রভাবশালী এ পরিচালকরা চান অভিজ্ঞ রিয়াদকে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ দলের সাত নম্বর পজিশনের জন্য নেওয়া হোক। রিয়াদের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
যদিও প্রধান কোচ হাথুরুর চাওয়া ভিন্ন। কোচের মতো জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের ভোটও পড়েনি মিডলঅর্ডার এ ব্যাটারের ব্যালটে। ফলে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য ২০ জনের একটি পুল তৈরি করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আনফিট ও দুর্বল ফিল্ডারের জায়গা নেই এই লংকানের দলে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসকে কোচ সাফ জানিয়ে দেন, এবার ফিল্ডিংয়ের ওপর জোর দেবেন তিনি। অর্থাৎ ফিল্ডিংয়ে তুখোড় ক্রিকেটারকে দলে চাওয়া তাঁর। যে কারণে ইংলিশদের বিপক্ষে কাঙ্খিত মানের ফিল্ডিং না পাওয়ায় রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়। টানা তিনটি সিরিজে না খেলা ৩৭ বছর বয়সী এ ব্যাটার হজ পালন শেষে দেশে ফিরে ক্রিকেটে মনোযোগী হন। বিসিবি একাডেমি মাঠে কয়েক দিন ধরে এককভাবে অনুশীলন করছেন তিনি। এরপর থেকে রিয়াদকে দলে চাই এ রকম একটি ‘শ্লোগান’ ওঠে। বিসিবির কয়েকজন পরিচালক তাতে প্রভাবিত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে শেষ দিকে হয়তো চমক দেখাতে পারে।
ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বর পজিশনে রিয়াদকে কেন পছন্দ এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচালক বলেন, ‘রিয়াদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অনেক। জাতীয় দলের অনেক জয়ের সঙ্গী সে। আমার মনে হয়, গত কয়েকটি সিরিজে ওই জায়গায় যারা খেলেছে, তাদের চেয়ে সে ভালো করবে।’ রিয়াদের ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে পাল্টা যুক্তিতে তিনি বলেন, ‘কিছু বোলারের ফিল্ডিংও ভালো নয়।’ রিয়াদ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন জিম্বাবুয়েতে। গত বছর টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়ার পর ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্যও বিবেচিত হচ্ছেন না এ বছর থেকে। যদিও মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার শেষ ১০ ইনিংসে খুব একটা খারাপ করেননি, পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস রয়েছে দুটি (৮০*, ৭৭)। ত্রিশছোঁয়া ইনিংস তিনটি। এরপরও কেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটারের প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের অনীহা, জানতে চাওয়া হলে জাতীয় দল-সংশ্লিষ্ট একজন স্ট্রাইকরেট তুলে ধরেন। আসলে সাত নম্বর পজিশনে রিয়াদের স্ট্রাইকরেটের গড় ৭৭.২৯। যেটা স্লগে ব্যাটিংয়ের দাবি মেটাতে ব্যর্থ বলে মনে করা হয়। জাতীয় দলের এক সাবেক ক্রিকেটারের মতে বর্তমান সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রতি ওভারের গড় রান ৫.১৫। সেখানে সাত নম্বরে নামা রিয়াদ গড়ে ৪.৬৫ রান করতে পেরেছেন।
এতে করে ব্যাটিং পজিশন অনুযায়ী দলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ‘শুরুতে না হলেও এ পজিশনের ব্যাটারদের কাছ থেকে ক্যামিও ইনিংস আশা করা হয়। কম বলে বেশি রান চাওয়া থাকে। কোচের সে চাওয়া পূরণ করতে পারছেন না অন্যরাও। তবে তুলনা করা হলে রিয়াদের চেয়ে তরুণরা কিছুটা এগিয়ে থাকবেন।’ কতটা পরিপার্শ্বিক চাপ থাকলে নির্বাচকরাও এভাবে চিন্তা করতে পারেন। প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে পরিচালকরাইবা কেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের দল নির্বাচনে এত আগ্রহ দেখাচ্ছেন? ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কাছে শেষ পর্যন্ত দেশের স্বার্থ বিসর্জন যাবে না তো? তবে একা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না, বলছেন বিসিবি নির্বাচকরা। তাতে করে কিছুটা হলেও চমক আশা করতে পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
পথরেখা/আসো