পথরেখা অনলাইন : গত ১৪ জুন ফিফা থেকে প্রাপ্ত শাস্তি ও ৫১ পৃষ্টার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তদন্ত সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) তদন্ত কমিটি। এই রিপোর্ট এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি কাজি মো. সালাউদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কি আছে সেই রিপোর্টে, আর এই রিপোর্ট কবে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে সেই অপেক্ষা এখন। তদন্ত করতে গিয়ে ফিফার বাইরেও অনেককিছু পেয়েছে বলে একাধিক সুত্র মারফত জানা গেছে। যদিও সবধরনের ফুটবল থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ সাবেক সাধারন সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে কোন প্রকার জিজ্ঞসাবাদ না করেই তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আগে তিন মাসে দ্বাদশ মিটিংয়ের পর চূড়ান্ত বাফুফে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট। ফেডারেশন ভবনে আরও দুই ঘণ্টা বৈঠক করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি সভাপতির কাছে হস্তান্তর করেন সহ সভাপতি ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কাজী নাবিল আহমেদ। এখন বাফুফে নির্বাহী কমিটিই বাকি সবকিছু করবে। ফিফার আনীত অভিযোগ নিয়ে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি ধাপে ধাপে সন্দেহভাজন ছয় কর্মকর্তাকে ডেকেছিলেন। তবে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে ডাকেনি কমিটি।
বাফুফেকে নিয়ে ফিফার অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে ফেডারেশনের অভ্যন্তরে আরও অনেক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে তারা। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে কী আছে তা বারবার এড়িয়ে যান কাজী নাবিল। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ছয় পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে শাস্তির সুপারিশও নাকি করেছে কমিটি। রিপোর্টে অনিয়ম ও ভুলগুলো খুঁজে বের করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে তারা। ফিফার অভিযোগগুলো খুঁজতে গিয়ে সেগুলো পেয়েছেন বলে জানান কাজী নাবিল, ‘ফিফার অভিযোগের সঙ্গে আমরা আরও গভীরে গিয়েছি। সেখানে কী কী পেয়েছি, তা আমাদের রিপোর্টেই আছে।’ আট সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বাফুফে, তার একটি মিটিংয়েও ছিলেন না সহসভাপতি ইমরুল হাসান। তাই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে শুধু সাতজনের সই থাকছে। গত ১৪ এপ্রিল ফিফা তাদের ওয়েবসাইটে বাফুফের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলোসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তারই আলোকে বাফুফে যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, সেটার রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা। সেই সংকট কবে কাটাবে সেটাই দেখার বিষয়।
যদিও রিপোর্ট প্রকাশ করা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কোনো আপত্তি নেই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের, ‘তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা নিয়ে আমার তো কোনো সমস্যায় নেই। কিন্তু আমি তো ফেডারেশনের একা নই, বোর্ড সদস্যরা আছেন। নির্বাহী কমিটিই সিদ্ধান্ত নেবে। আমি আগে পড়ব, তার পরই বোর্ড মিটিংয়ে দেব।’ অবশেষে ফুরিয়েছে বাফুফের তদন্ত কমিটির কার্যক্রম। বার কয়েক সময় পিছিয়ে তদন্ত কমিটি সভাপতির কাছে জমা দিয়েছে প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনে বাফুফেতে কর্মরত বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান। যেসব ইস্যুতে ফিফা তদন্ত করেছে, সেগুলো নিয়েই ‘অধিকতর তদন্ত’ করেছে এই কমিটি। নিজেদের করা সুপারিশগুলো বাফুফে বাস্তবায়ন করলে ভবিষ্যতে বাফুফের কর্মকান্ডেস্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করেন কাজী নাবিল আহমেদ, ‘তিন মাস তদন্ত করে আমরা রিপোর্টটি নির্বাহী কমিটির সামনে উপস্থাপনের জন্য সভাপতির কাছে হস্তান্তর করেছি। পরের যা কিছু, যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্বাহী কমিটি করবে। আশা করি, যে রিপোর্টটি দিয়েছি, তা বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে বাফুফের কার্যক্রম আরো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আমরা যে তদন্ত করেছি, সেখানে আমাদের যে ফাইন্ডিংস।
বাফুফের কার্যক্রমে অনিয়ম খুঁজে পাওয়ার তিনদিন পর জরুরি সভা করে বাফুফে। বাফুফেও আবু নাইম সোহাগকে আজীবন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ফিফার অভিযোগ অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে। বাফুফে সভাপতি বলেছেন, ‘আমি হাতে তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। আমি প্রথমে ধন্যবাদ দেই কমিটিকে, যারা দীর্ঘ সময় কষ্ট করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আমাকে দিয়েছে। এখন আমরা দ্রুত একটি নির্বাহী কমিটির সভা ডাকবো। সেই সভায় প্রত্যেকে প্রতিবেদন দেখবে। তারপর মতামত দেবে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে।’ সিলগালা এই প্রতিবেদন কি সরাসরি ইসি কমিটির সভায় খোলা হবে, নাকি আপনি আগে পড়ে দেখবেন? বাফুফে সভাপতির জবাব, ‘অবশ্যই আমি আগে পড়বো। তারপর নির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপন করবো।’ শুরুতে ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল কমিটিকে। সেখানে সময় লেগেছে প্রায় তিন মাস। সময় বেশি লাগলেও যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে কমিটি তাতে খুশি কাজী নাবিল আহমেদ, ‘আমরা নিজেদের মতো করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিয়েছি। আমরা এখন নির্ভার।’ এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে মূলত ফিফা কর্তৃক আনীত অভিযোগগুলোর ওপর ভিত্তি করে। ‘ফিফা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছে আমরা সেগুলোর অধিকতর তদন্ত করেছি। এর বাইরে আমরা বেশি যাইনি। আমরা কিছু সুপারিশ করেছি’।
পথরেখা/আসো