পথরেখা অনলাইন : প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষদের বৈধ ও নিষ্কলুষভাবে জীবনযাপনের জন্য উপযুক্ত সময়ে বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে ইসলামে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা রুম : আয়াত ২১) বিয়ের পর স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো স্ত্রীর ভরণপোষণ ও সবধরনের ভালোমন্দের খোঁজ খবর রাখা কোনও কিছুতে অবহেলা না করা।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৬)
স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিস শরিফে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। পুরুষদের নির্দেশ দিয়ে এক হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৫০১)
একাধিক বিয়ের অনুমতি আছে ইসলামে, তবে উৎসাহ নেই
প্রয়োজনের খাতিরে শর্ত সাপেক্ষে ইসলাম পুরুষকে একাধিক বা একসঙ্গে চার স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। তবে এর প্রতি ইসলাম কখনও উৎসাহিত করেনি, এক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজনের দিকটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিনা প্রয়োজনে খাহেশাতে বা সমতা রক্ষা করতে না পারলে বহুবিবাহকে নিরুৎসাহিতই বেশি করা হয়েছে। প্রয়োজনের খাতিরে কেউ একাধিক বিয়ে করলে তাকে অবশ্যই স্ত্রীদের সবার মধ্যে সমতা বিধান রক্ষা করতে হবে। কারও ক্ষেত্রে কম-বেশি হলে শেষ বিচারের দিন স্বামীকে জবাবদিহি করতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে।
কোরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘যদি তোমরা আশঙ্কা কর, এতিমের প্রতি ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে যেসব মহিলা তোমাদের পছন্দ হয় তাদের মধ্যে থেকে এক, দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করে নাও। কিন্তু যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে তোমরা তাদের মধ্যে ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই বিয়ে কর। অথবা ওইসব মহিলাকে স্ত্র্রী বানাও, যারা তোমাদের মালিকানায় এসেছে। অবিচার থেকে বাঁচার জন্য এটাই বেশি সহজ।’ (সুরা নিসা : ৩)
স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ জরুরি
ইসলাম একই সময়ে চারের অধিক স্ত্রী রাখাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে ইনসাফ কায়েমের জন্য বিশেষ তাকিদ দিয়েছে এবং ইনসাফের পরিবর্তে জুলুম করা হলে তার জন্য শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে। আলোচ্য আয়াতে একাধিক অর্থাৎ চারজন স্ত্রী গ্রহণ করার সুযোগ অবশ্য দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে এই চার পর্যন্ত কথাটি আরোপ করে তার উর্ধ্ব সংখ্যক কোন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না বরং তা হবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ -তাও ব্যক্ত করে দিয়েছে। ইসলাম পূর্ব যুগে কারও কারও দশটি পর্যন্ত স্ত্রী থাকত। ইসলাম এটাকে চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। কায়েস ইবন হারেস বলেন, ‘আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার স্ত্রী সংখ্যা ছিল আট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি আমাকে বললেন, ‘এর মধ্য থেকে চারটি গ্রহণ করে নাও’। (ইবন মাজাহ: ১৯৫২, ১৯৫৩)
পবিত্র কোরআনে চারজন স্ত্রীর কথা বৈধ ঘোষণা করার সাথে সাথে এও বলে দেয়া হয়েছে যে, যদি তোমরা তাদের মধ্যে সমতা বিধান তথা ন্যায় বিচার করতে না পার, তাহলে এক স্ত্রীর উপরই নির্ভর কর। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, একাধিক বিয়ে ঠিক তখনই বৈধ হতে পারে, যখন শরীয়ত মোতাবেক সবার সাথে সমান আচরণ করা হবে; তাদের সবার অধিকার সমভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এ ব্যাপারে অপারগ হলে এক স্ত্রীর উপরই নির্ভর করতে হবে এবং এটাই ইসলামের নির্দেশ।
একাধিক স্ত্রী থাকলে কারও উপর জুলুম অপরাধ...
এজন্য কারও একাধিক স্ত্রী থাকলে কোন স্ত্রীকে এমনভাবে ভালোবাসা যা অন্য স্ত্রীর উপর জুলুম করতে উৎসাহিত করে তা অবশ্যই অপরাধ। যেমন: তাকে এমনভাবে ভালোবাসা যে, সর্বদা তারই আবদার-আবেদন রক্ষা করা হয় অন্য জনের প্রতি খেয়াল রাখা হয় না এবং তার কাছেই বেশি বেশি রাত্রি যাপন করা হয় অন্য জনের কাছে খুব একটা যাওয়া হয় না। এমনকি তাকে সব সময় কাছে রেখে অন্যকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।
সমান চোখে না দেখার শাস্তি
এমন ব্যক্তির জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্য কঠিন শাস্তির খবর দিয়েছেন। এক হাদিসে তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তির দুইজন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে একজনের দিকে ঝুঁকে যায়, তবে কিয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে’। (আবু দাউদ, ২১৩৩, তিরমিজি, ১১৪১, ইবন মাজাহ, ১৯৬৯, আহমাদ, ২/৪৭১)
পথরেখা/অআ