পথরেখা অনলাইন : এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। যদিও ডাক পাওয়া সকল ক্রিকেটারকে পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম, মুশফিকুর রহিমরা শুরু থেকে যোগ দিতে পারেননি ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার কারণে। গত কয়েকটি বিশ্বকাপের তুলনায় এবার তারুণ্য নির্ভর দল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। সে হিসেবে তরুণ তুর্কিদের উপরই বেশি ভরসা বাংলাদেশের। এখন আশা, তরুণ ক্রিকেটারদের স্বপ্ন জাগাবে বিশ্বকাপ ট্রফি। অক্টোবরে শুরু হবে ভারতে মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। শেষ পর্যন্ত শিরোপার মুকুট কাদের মাথায় উঠছে তা জানা যাবে জমজমাট লড়াইয়ের পরই। তবে বিশ্বকাপের আগে ট্রফি ঘুরে বেড়াবে অংশ নেয়া সবগুলো দেশে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও আসবে এই স্বপ্নের ট্রফি। ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে পারেন বেশ কয়েকজন তরুণ। যারা এর আগে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেননি। এই সোনালী ট্রফি তাদের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন জাগাবে তরুণ ক্রিকেটারদের এমনটাই বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সেই এই আশা জাগাচ্ছে।
বিসিবির সিইও বলেন, ‘তরুণদের নিয়ে এবার স্বপ্নটা অবশ্যই বেশি। আমাদের যারা এখন জাতীয় দলে আছে বা থাকবেন, তারা সবাই কিন্তু এর আগেও আমাদের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আমার মনে হয়, আগেও তাদের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবু এই বছর যারা প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেবে, তাদের জন্য একটা বাড়তি কিছু আগ্রহ থাকবেই।’ বিশ্বকাপ ট্রফির আগেই ভ্রমণ শুরু হয়েছে অংশ নেয়া দেশগুলোতে। আগামী ৭ আগস্ট বাংলাদেশেও আসবে ট্রফিটি। তখন পদ্মা সেতুতে ফটোসেশন হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী। এ ছাড়া ক্রিকেটারদের ফটোসেশনের জন্য মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও সাধারণ দর্শকদের জন্য রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে নেয়া হবে বিশ্বকাপের ট্রফি। গত জুনে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ এর ট্রফি উন্মোচিত হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ফুট উপরে স্ট্রাটোস্ফিয়ার থেকে ট্রফিটি নেমে আসে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে।
বিশ্বকাপের ট্রফি পাকিস্তান থেকে যাবে শ্রীলঙ্কায়। সেখান থেকে ঢাকায় আসবে। থাকবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। আইসিসি’র গাইডলাইন অনুযায়ী বিশেষ স্থান বা স্থাপনার সামনে ছবি তোলা যাবে। গতবার বাংলাদেশের সংসদ ভবনের সামনে তোলা হয়েছিল। এবার বিসিবি’র আগ্রহে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতুর সামনে ছবি তোলা হবে। এ বিষয়ে বিসিবি’র সিইও বলেন, ‘ক্রিকেটপ্রেমি ও সাংভাদিক হিসেবে আপনারা জানেন, আইসিসি ট্রফি ট্যুরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফিটি পাঠানো হচ্ছে। এর আগেও আইসিসি এই ধরনের কার্যক্রম করেছে। এটি বিশ্বকাপের আগে আইসিসি’র একটি ক্যাম্পেইন। এখন যে পরিকল্পনা, অবশ্যই আমরা একটি পাবলিক প্লেসে সাধারণ জনগণের দেখার জন্য ব্যবস্থা রাখবো। এর বাইরে আমাদের বোর্ড ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা যদি আগ্রহী হয়, তাদেরকে দেখার ব্যবস্থা করা হবে।’ অন্যদিকে ট্রফি পদ্মা সেতু থেকে আসবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। সেখানে থাকবে সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররাও। উন্মুক্ত করা হবে সংবাদ মাধ্যমের সামনেও।
নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন আরও বলেন, ‘ট্রফি অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ডে আনা হবে। খেলোয়াড় ও আপনাদের জন্য দেখার ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের সংশ্লিষ্ট যারা আছে, আমাদের জাতীয় দলের সঙ্গে পরিকল্পনা আছে ফটো সেশনের।’ এ ছাড়াও ট্রফি নিয়ে আইসিসি’র ও বিসিবি’র পরিকল্পনা জানিয়ে বিসিবি’র সিইও বলেন, ‘এটা আইসিসিরই একটা চাহিদা যে, যেই দেশে ট্রফি যায়, সেই দেশের আইকনিক লোকেশনে একটা ফটোসেশন করা। এর আগে আমাদের জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে করা হয়েছিল। এবার যেহেতু আপনারা জানেন, পদ্মা সেতু আমাদের দেশের একটা গর্ব, একটা আইকনিক স্থাপনা। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, পদ্মা সেতুকে নিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফির একটা ফটোসেশনের ব্যবস্থা করা। আমাদের এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা রয়েছে একটি শপিংমলে এটি রাখার জন্য। এর আগেও এমন করা হয়েছিল। তো এটাকে আমরা চেষ্টা করবো যেন সর্বোচ্চ সময় সাধারণ মানুষ দেখতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা সম্ভবত ৮ বা ৯ তারিখের যেকোনো একটা সময়ে (শপিংমলে প্রদর্শনীর জন্য) দিয়ে দেবো। আমরা এরইমধ্যে দুটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সম্ভবত বসুন্ধরা শপিংমলেই আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এটা উনাদের সাপ্তাহিক একটা বন্ধের দিন আছে। হয়তো ওভাবে মানিয়ে নিয়েই আমাদের রাখতে হবে।’ বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ ট্রফি যাবে কুয়েতে।
এরপর ৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় শেষ হবে ট্রফির বিশ্বভ্রমণ। সবমিলিয়ে বিশ্বের ১৮টি দেশের ৪০ এর অধিক শহর ঘুরবে। ৫ই অক্টোবর থেকে ১৯শে নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের ১০টি শহরে হবে বিশ্বকাপের এবারের আসর। এছাড়া তিন নির্বাচক নিয়ে নাজমুল হাসান পাপনের বিশ্বকাপের জন্য আলাদা ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করা হয়েছে। মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে জাতীয় দলের ৩২ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াডের ক্রিকেটারদের মেডিকেল টেস্ট দিয়ে শুরু হয়েছে। সঙ্গে একাধিক ক্রিকেটার নিজেদের ব্যক্তিগত স্কিল অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শহরের একপ্রান্তে যখন শোনা যাচ্ছিল ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দ, ক্রিকেটাররা মূল দলে জায়গা পেতে ঝালিয়ে যাচ্ছিলেন নিজেদের, আরেক প্রান্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে চলছিল তাদের নিয়েই রুদ্ধদ্বার বৈঠক। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জাতীয় দলের তিন নির্বাচককে ডেকেছিলেন নিজের করপোরেট অফিসে। সেখানে ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, জাতীয় দলের তিন নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও আব্দুর রাজ্জাক রাজ উপস্থিত ছিলেন। নাজমুল হাসান পাপন কিছুক্ষণ পর তাদের সঙ্গে যোগ দেন। ক্রিকেটারদের ভাগ্য নির্ধারণের এই বৈঠক জুড়েই ছিল আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ। যেখানে বিশ্বকাপের লক্ষ্য ঠিক করে রোডম্যাপ তৈরি করেছেন নির্বাচকদের নিয়ে। এর আগে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও নির্বাচকদের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয়েছে নাজমুল হাসানের উপস্থিতিতে।
পথরেখা/আসো