পথরেখা অনলাইন : ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই দেখা যায় কোচদের পছন্দের কিছু খেলোয়াড় থাকেন। তবে অন্য দেশে যেমন তেমন বাংলাদেশে বিষয়টি যেন একরকম ওপেন সিক্রেট। সবাকে কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো যেমন নাজমুল হোসেন শান্তকে অতিমাত্রায় পছন্দ করতেন, আবার অপছন্দ করতে ইমরুল কায়েসের মতো খেলোয়াড়দের। এবার যখন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে আসেন তখন তার পুরনো প্রেমগুলো জেগে ওঠে। যেমন করে অফ ফর্মে থাকলেও সৌম্য সরকারকে ইমার্জিং এশিয়া কাপের দলে নেওয়া হয়। এখন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের দলে এই বাহাতি ব্যাটারের থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে কোনভাবেই পছন্দ করছেন না হাথুরু। এর কারণ ক্রিকেটপ্রেমিরা খোজার চেষ্টা করছেন। এর আগে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফিটনেস টেস্ট শেষ হয়েছে ক্রিকেটারদের। মিরপুরে জিম, রানিং আর ফুটবল নিয়ে নিজেদের মতো করেই সময় কাটিয়েছেন এশিয়া কাপের প্রাথমিক দলে থাকা ক্রিকেটাররা। ৩২ সদস্যের প্রাথমিক দল এরই মধ্যে ছোট হয়ে আসার কথা ছিল। নতুন ওয়ানডে অধিনায়কের নামসহ দল দিতে চায় বিসিবি।
এখন সে কারণেই মূলত অপেক্ষা। বিসিবির নির্বাচক প্যানেলের এক সদস্য বলছিলেন, ‘আসলে ঠিক জানি না, বোর্ড কবে দল দিতে চাচ্ছে সেটাও পরিস্কার নয়। তবে আমাদের দিক থেকে দল তৈরি।’ এদিন একসঙ্গে তিন নির্বাচকই বিসিবিতে এসেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, দল নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত সময় যাচ্ছে তাঁদের। স্কিল ক্যাম্পের আগে ২০-২২ জনের একটি দল দিতে হবে নির্বাচকদের। ১২ আগস্টের মধ্যে এই দলকে আরও ছোট করে আনতে হবে। এশিয়া কাপের মূল দল জমা দিতে হবে ১২ আগস্টের মধ্যে। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘খুব দ্রুতই ২২ জনের দল দু-এক দিনের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে। আর ১২ আগস্টের আগেই আশা করি চূড়ান্ত দল দিয়ে দিতে পারব।’ ছোট হয়ে আসা দলে খুব বেশি চমকের সুযোগ নেই। সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজের দলে থাকা বেশির ভাগ ক্রিকেটারই থাকার কথা। তবু একটা নাম বিশেষভাবে আলোচিত, সেটি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দল ঘোষণার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তাঁকে নিয়ে ততই আলোচনা বাড়ছে। কারণ এই সিনিয়র ক্রিকেটারকে নিয়ে কোচের অবস্থান পরিস্কার নয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশে ফেরার পর রিয়াদ দলের বাইরে রয়েছেন। গত মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে ‘বিশ্রাম’ দেওয়া হয়। পরের কয়েকটি সিরিজেও অভিজ্ঞ ব্যাটারকে আর দেখা যায়নি। বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে যদি এশিয়া কাপের দলে রাখার ভাবনাই থাকত, তাহলে আগের সিরিজগুলোয় সুযোগ দেওয়া লাগত তাকে। অন্তত সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন ওয়ানডে সিরিজ হয়েছে, মাহমুদউল্লাহ তখন হজে ছিলেন। বিষয়টি অবশ্য তিনি বিসিবিকে জানিয়ে গেছেন। গত কয়েক মাসে ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি এমন কিছু করেননি, যেটা তাঁর ফেরার দাবি জোরালো করবে। মাহমুদউল্লাহর বিপক্ষে যাচ্ছে তাঁর স্লো ফিল্ডিংও। যেটা গত কয়েক সিরিজে বাংলাদেশ দলের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। এখানে সাত নম্বরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সম্ভাব্য, ‘প্রতিদ্বন্ধী’ আফিফ হোসেন ধ্রুব, শামীম হোসেন পাটোয়ারি কিংবা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ঢের এগিয়ে থাকছেন। আর তিনি আগের মতো লোয়ার মিডল অর্ডারে গিয়েই ঝড় তুলতে পারেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
তুলনামূলক স্লো ফিল্ডার, গিয়েই স্লগ করতে পারছেন না, সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজে ছিলেন না, এসব মাহমুদউল্লাহর বিপক্ষে গেলেও তাঁর সবচেয়ে ‘প্লাস পয়েন্ট’ হচ্ছে অভিজ্ঞতা। সূত্র জানাচ্ছে, এ কারণেই এখনো তাকে একেবারে সমীকরণের বাইরে রাখতে চাইছেন না নির্বাচকেরা। দল ঘোষণায় কিছুটা দেরি হওয়ার পেছনে এটিও একটি কারণ। তবে নির্বাচকেরা মনে করেন, হাথুরুর ভাবনায় মাহমুদউল্লাহ যদি না থেকেও থাকেন, তা পুরোটাই ক্রিকেটীয় কারণে; এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নেই। আরেক নির্বাচক তাই বলছিলেন, ‘কোনো কোচ যদি কাউকে বাদও দিতে চায়, তাতে ব্যক্তিগত বিষয় থাকে না। সবটাই ক্রিকেটীয়।’ সবাই যখন এশিয়া কাপের দল ঘোষণার অপেক্ষায়, তখন তামিম ইকবালের ব্যস্ততা চোট কাটিয়ে ওঠায়। ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার দুদিন পর বিসিবিতে এসেছিলেন তিনি। বিসিবির মেডিকেল বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছেন তামিম। এক সপ্তাহের পুরোপুরি বিশ্রামের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবেন তিনি। এদিকে বিসিবির মেডিকেল বিভাগে শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে মানদন্ড ১৮.৪ ধরেছেন তাঁরা। তবে ৩ ভাগের এক ভাগ অংশ খেলোয়াড় স্কোর করেছেন মানদন্ডের নিচে। ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও মানদন্ড পর্যন্ত স্কোর নিয়ে যেতে পারেননি। ইয়ো ইয়ো পরীক্ষায় মাহমুদউল্লাহ স্কোর করেছেন ১৭.৬। তবে বয়স বিবেচনায় এই স্কোরকে ভালো বলে ধরা হচ্ছে। গত কিছুদিন ধরেই অনুশীলনে বেশ সিরিয়াস তিনি। অপেক্ষা করছেন বিসিবি নির্বাচকরা তাকে অন্ততঃপক্ষে একটা সুযোগ হলেও দেবেন।
পথরেখা/আসো