- |
- |
- জাতীয় |
- আন্তর্জাতিক |
- বিনোদন |
- ক্রীড়া |
- মত-দ্বিমত |
- শিক্ষা-স্বাস্থ্য |
- বিজ্ঞান-প্রযুক্তি |
- কৃষি বার্তা |
- অর্থ-বাণিজ্য-উন্নয়ন |
- সাহিত্য-সংস্কৃতি-সংগঠন |
- সারাদেশ |
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হাজার বছর ধরে চলে আসা লড়াই-সংগ্রামরত বাঙালি জাতিকে মুক্তিমন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয়। যা বাঙালির ইতিহাস ও গৌরবের সবচেয়ে বড় মুকুট। ইতিহাসের পাতায় পাতায় বাঙালি জাতির নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও সফলতা অর্জনের প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর শক্তি, সাহস, প্রেরণা ও ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বঙ্গমাতা। এ দেশের মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষেপে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা অবিস্মরণী। সাহসী, দুরদর্শী, ধৈর্যশীল, শান্ত, স্থির, প্রজ্ঞাবান অপরিসীম বুদ্ধিদীপ্ত মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ বাস্তবায়নের বিশ্বস্ত সহচর, সহযোগী ও সহযাত্রী ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের শক্তি, সমর্থন ও সাহস দিয়েছেন এবং সব দুঃখ ও নির্যাতনকে বরণ করে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণের পেছনে ধৈর্য জুগিয়েছেন এবং প্রেরণা দিয়েছেন বঙ্গমাতা। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সহধর্মিণী, সহকর্মী ও সহযোদ্ধা। ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সাহস ও অসীম ধৈর্যের গুণাবলিতে আসীন মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন অসীম ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতীক। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমার জীবনে দুটি বৃহৎ অবলম্বন- প্রথমটা হলো আত্মবিশ্বাস, দ্বিতীয়টি হলো আমার স্ত্রী’। বঙ্গমাতার স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। বঙ্গবন্ধু স্ত্রীর কাছ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিভিন্ন ঘটনার দিন তারিখ ও সময় যাচাই করে নিতেন। এজন্য বঙ্গবন্ধু তাকে জীবন্ত ডায়েরি বলতেন। (বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, পৃ: ২৬)
বঙ্গবন্ধুর জীবনে তার স্ত্রীর অপরিসীম অবদান ছিল। তিনি বঙ্গমাতার মতামতকে গুরুত্ব দিতেন এবং তার পরামর্শ গ্রহণ করতেন। যেটি বঙ্গবন্ধু নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন ‘রেনু আমার পাশে না থাকলে, আমার সব দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলেমেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না’। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনী ও লেখনীতে রেণু নামেই অসংখ্যবার সম্বোধন করেছেন তাকে। দেশভাগের আগে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নের সময় থেকেই তরুণ শেখ মুজিব অখণ্ড বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্নেহধন্য ছিলেন। বঙ্গমাতা সম্পর্কে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘গঁলরন, ঝযব রং ধ াবৎু ঢ়ৎবপরড়ঁং মরভঃ ঃড় ুড়ঁ ভৎড়স এড়ফ, উড়হ’ঃ হবমষবপঃ যবৎ, ঢ়ষবধংব’. (আবদুল গাফফার চৌধুরী, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিশ শতকের একজন শ্রেষ্ঠ মহিয়সী, পৃষ্ঠা-২০)
বঙ্গমাতা অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও ১৯৪৬ সালে স্বামীকে দাঙ্গা উপদ্রুত বিহার এলাকায় কাজ করতে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন। তার চিন্তা-চেতনায় বঙ্গবন্ধুর চিন্তা, আদর্শ ও কাজকে সমর্থন করেছেন। স্বভাবতই নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের স্বার্থ ও মানুষের স্বার্থ তার কাছে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। দুবার মন্ত্রী হওয়ার পরেও ঢাকায় নিজ পরিবারের কোনো বাড়ি বা বাসস্থান ছিল না। স্বৈরাচার আইয়ুব সরকার ১৯৫৮ সালে মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হলে অনেকেই তখন পাকিস্তানি স্বৈরাচার সরকারের ভয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে বাড়ি ভাড়া দিতে চান নাই। বঙ্গবন্ধু আন্দোলন-সংগ্রামে নিয়োজিত থাকায় দীর্ঘসময় তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। সেই দুর্যোগ আর দুর্দিনে বঙ্গমাতা অসীম সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিবার ও রাজনীতির হাল ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬০ সালে ব্যাংকঋণ নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বঙ্গমাতা বাড়ি নির্মাণকাজে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতেন এবং নির্মাণকাজ তদারকি করতেন। এ নির্মাণকাজে তেইশ জন শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। এ সময় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের চোখ এড়াতে নেতাকর্মীরা শ্রমিকদের ছদ্মবেশে বাড়িতে যেত। বঙ্গবন্ধুর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো কর্মীদের মাধ্যমে নেতাদের কাছে পাঠানো হতো। এভাবেই বঙ্গমাতা দেশ ও জাতির প্রয়োজনে আন্দোলন ও সংগ্রামে গেরিলা হয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য দিকনির্দেশনা পাঠাতেন।
বঙ্গবন্ধু ছয় দফা আন্দোলনের পক্ষে জেলায় জেলায় উদ্বুদ্ধ করায় বারবার কারাবন্দি হন। বঙ্গমাতা দৃঢ়তার সঙ্গে ছয় দফার পক্ষে অবস্থান নেন এবং দেশব্যাপী ছয় দফার আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে দুঃসাহসী ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র্রদ্রোহের অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তীব্র আন্দোলনের মুখে সে সময়ের সরকার ভয় পেয়ে লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বঙ্গমাতা প্যারোলের বিপক্ষে অটল থাকেন। প্যারোলের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার বার্তাটি বঙ্গমাতা বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে দিয়ে কারাগারে বঙ্গবন্ধুর কাছে পাঠিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুও প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের অনেকের স্ত্রীরা মাঝে মাঝে হতাশায় ভেঙে পড়তেন। মামলার দিন আদালতে এসে তারা কেঁদে ফেলতেন। বঙ্গমাতা তাদের কাছে গিয়ে বসতেন, সান্ত¡না দিতেন, চোখের পানি মুছে দিতেন এবং কারো কারো মুখে খাবার তুলে দিতেন। বঙ্গমাতার কথায় তারা প্রাণ ফিরে পেতেন, নতুন আশায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠতেন। আদালত থেকে ফেরার সময় সবাইকে আগে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি সবার শেষে রওনা হতেন।
এ প্রসঙ্গে আমার একটি স্মৃতি মনে পড়ে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে ১৯৬৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আমি এবং গজারিয়া ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হাফিজ আহমেদ ও ছাত্রনেতা সালাউদ্দিন সেলিম নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে নৌকা ও মাইক ভাড়া করে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার উদ্দেশে রওনা হই। যাত্রাপথে আমরা ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’- স্লোগান দিতে দিতে যাই। স্লোগান শুনে নদীর দুপাড়ের জনগণ ভিড় করে এবং আমাদের স্বাগত জানায়। তখন আমি ছিলাম গজারিয়া থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা মহিলা সম্পাদক। তার পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ভবেরচর ঈদগাহ মাঠে আমরা সভা করি। সেখানে ব্যাপক জনসমাবেশ হয়। ওই সভায় গজারিয়া থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাফিজ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ও অনেক ছাত্রজনতা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭০ সালে ভোটের আগে ভাত চাই দাবি করা হলে বঙ্গমাতা ভোটের পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। যার ফলে ১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। মুজিবনগরে এই সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে এবং বহির্বিশ্বে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলে। বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে বঙ্গমাতার এসব অবদানকে বঙ্গবন্ধুও স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমার সংগ্রামী রেণু সেই কোন ছোটবেলা থেকে আমার সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে। সে আজ মিশে গেছে জনতার সঙ্গে। এভাবে মিশে যাওয়ার জন্যই তো রেণু তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছে। রেণু তো আজ মাত্র ৫টি সন্তানের জননী নয়, রেণু আজ বাংলাদেশের লাখ লাখ সন্তানের জননী’ (আনোয়ারা সৈয়দ হক, আমার রেণু, পৃষ্ঠা- ১৬৮)।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের বক্তব্য কী হবে- তা নিয়ে নানাজন তাকে লিখিত-অলিখিত নানা পরামর্শ দিতে থাকেন। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে বলেন, ‘সমগ্র দেশের মানুষ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার ভাগ্য আজ তোমার ওপর নির্ভর করছে। …তোমার মনে যে কথা আসবে সে কথা বলবে। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে তোমার যে স্বপ্ন সেই কথাগুলো তুমি স্পষ্ট করে বলে দিবে’। ব্যক্তিজীবনে বঙ্গমাতা যে কতটা সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তা আমি নিজ চোখে দেখেছি। তিনি নিজে তরকারি কাটা, রান্না করা, নেতাকর্মীদের চা পরিবেশন করতেন। এক পেঁচে সাধারণ শাড়ি পরতেন। তিনি সাধারণের মাঝেও অসাধারণ ও অনন্য ছিলেন। তার ব্যক্তিত্বের অসাধারণ ও অনন্য গুণাবলি খুব কাছ থেকে বহুবার দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাজে প্রায়ই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যেতাম। বহু রাজনৈতিক কর্মী তার স্নেহ ও মমতা লাভ করেছেন। আমিও তার স্নেহ ও মমতা থেকে বঞ্চিত হইনি। এ প্রসঙ্গে বঙ্গমাতার সঙ্গে আমার চিরস্মরণীয় স্মৃতি রয়েছে। ১৯৭৪ সালে আমি ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস, ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলাম। সে সময়ে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনে কমিটি ঘোষণায় ঐক্যমত হতে পারে নাই। ফলে মন খারাপ করে আমরা কয়েকজন টিএসসির মাঠে বসেছিলাম। তিনি হয়তো আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন। বঙ্গমাতা আমাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসায় যাওয়ার জন্য লোক পাঠিয়েছেন। তখন ঢাকা মহানগরীর ছাত্রলীগের মহিলা সংগঠনের দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী আমার মতো একজন ক্ষুদ্র কর্মীকে যেতে বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র কামাল ভাই যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন। ভয়ে ভয়ে আমি ও কয়েকজন কর্মীসহ বাসায় গেলাম। দরজা খুলতেই দেখি বঙ্গমাতাকে। আমি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে ভয়ে ভয়ে বললাম, আপনি আমাকে আসতে বলেছেন। বঙ্গমাতা বললেন হ্যাঁ, তোমরা তো এখনো খাওনি, মুখটা তো শুকিয়ে গেছে। হাত মুখ ধুয়ে আগে খেয়ে নাও, পরে কথা হবে’। আমাদের খাবার টেবিলে বসালেন। তিনি নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করলেন। আমি ভয়মুক্ত হলাম। আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম। একজন জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী অথচ এত নিরহংকার, আন্তরিক, অমায়িক, ভদ্র, নম্র, অতিথিপরায়ণ ও কর্মীবান্ধব যা শুধু মনের গভীরতা দিয়েই অনুভব করা যায়, কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ছিলেন কর্মীবান্ধব, নারীবান্ধব এবং একজন উদার মমতাময়ী মা। সে দিনটি ছিল আমার জীবনে একটি অবিস্মরণীয় দিন।
স্বাধীনতার পর বঙ্গমাতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত ও আত্মত্যাগী নারীদের পুনর্বাসনের জন্য নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। তাতে বঙ্গমাতার ছিল অসাধারণ ভূমিকা। তিনি নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বঙ্গমাতার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের নামকরণ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল করা হয়েছে এবং কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসন সুবিধা স¤প্রসারণের লক্ষ্যে দশ তলা বিশিষ্ট নবনির্মিত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২১ সাল থেকে বঙ্গমাতার জন্মদিনে অস্বচ্ছল নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন ও নগদ টাকা প্রদান করে আসছে। এ বছরও সারাদেশে অস্বচ্ছল ও অসহায় নারীদের প্রায় পাঁচ হাজার সেলাই মেশিন এবং ষাট লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হচ্ছে।
২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী জাতীয় দিবস ঘোষণা এবং বঙ্গমাতা পদক প্রদানের প্রস্তাব করেছিলাম। ৮ আগস্ট ২০২০ সালে বঙ্গমাতার ৯০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আমি ২০২১ সালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বঙ্গমাতা পদক প্রদানের প্রস্তাব করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে ২০২১ সাল থেকে এ পদক প্রদান করা হচ্ছে। ২০২০ সালে ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিবসকে ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস ঘোষণা এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপনের দায়িত্ব প্রদান করায় মন্ত্রিপরষদ ধন্যবাদ জানায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
মহীয়সী বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে সরকার ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পাঁচজন বিশিষ্ঠ নারীকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক প্রদান করছে। এ বছর চারজন বিশিষ্ট নারী ও একটি প্রতিষ্ঠানকে পদক প্রদান করা হচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। ফলে সর্বস্তরের মানুষ মহীয়সী এ নারীর দেশপ্রেম, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, মহানুভবতা, উদারতা, মানবকল্যাণ ও ত্যাগের মহিমা বাঙালিসহ বিশ্ববাসী জানতে পারছে। আমি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, এমপি : প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গবেষক ও রাজনীতিবিদ।
পথরেখা : আমাদের কথা