• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৩:৩৭
পাকিস্তানের রাজনীতি সমাচার

উত্থানপতনের গল্প

পথরেখা অনলাইন : পাকিস্তানের রাজনীতি সম্পর্কে একটি প্রবাদ বিশ্ব জুড়ে। বলা হয়, পৃথিবীর প্রতিটি দেশের সেনাবাহিনী রয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আছে একটি রাষ্ট্র। এই একটি প্রবাদেই বোঝা যায়, দেশটির রাজনীতির ইতিহাস মানের সেনাবাহিনীর অসংখ্য হস্তক্ষেপ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ইতিহাস। যেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশও।
 
সম্প্রতি আরও একবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক দল নিজ নিজ পেশিশক্তি প্রদর্শন করেছে। যেখানে আরও একবার পরাজয় হয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতির এবং বিজয়ী সেনাবাহিনী। পরাজিত সেই রাজনৈতিক শক্তিটি সম্প্রতি সময়ে আলোচিত রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), যার প্রধান ইমরান খান গ্রেফতার হয়েছেন। শুধু তাকে গ্রেফতার করেই শেষ হয়নি সেনাবাহিনীর পেশি প্রদর্শন, বরং ইমরান খানকে আগামী নির্বাচনেও অংশ গ্রহণ না করার বন্দোবস্ত চলছে দেশটিতে।
 
গেলো সপ্তাহে দেশটির জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে আনোয়ারুল হক কাকারের নাম। তাকে নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। পরবর্তী নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
 
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের রাজনীতি অনেক উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে গেছে। ৭৬ বছরে বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন। কখনো  রাজনৈতিক দলের শাসন, কখনো সামরিক শাসন চলেছে দেশটিতে।  পাকিস্তানে বরাবরই রাজনীতিবিদ ও সেনাবাহিনীর ভেতরে চলেছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। যখনই কোনো বেসামরিক সরকার এসেছে এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, কোনো না কোনোভাবে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। গত দুই দশকে ক্ষমতায় এসেছে যেসব রাজনৈতিক দল, তারাও  সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া সরকার গঠন করতে পারেনি। পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে এ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রীই তাদের ৫ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করতে পারেননি। দেশটি স্বাধীনতার ৭৬ বছরের ইতিহাসে সামরিক বাহিনী দ্বারা শাসিত হয়েছে ৩৩ বছর। গত দুই দশক ধরে সরাসরি পাকিস্তানের ক্ষমতায় না থাকলেও,পরোক্ষভাবে দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী ও এস্টাবলিশমেন্ট।
 
ধর্মের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের ২ বছরের মাথায় ভারত তার সংবিধান প্রণয়ন করে। সেখানে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন করা হয় ২৬ বছর পর ১৯৭৩ সালে। অর্থাৎ বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ১ বছর অতিক্রম করার আগেই গণ পরিষদের ভোটে সংবিধান প্রণয়ন করে। কিন্তু পাকিস্তান তারও ২ বছর পর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটে সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়। এর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসনভার মূলত ছিলো সেনা বাহিনীর হাতে।
 
১৯৭১ সালের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাজনৈতিক শাসনকে মোটা দাগে পাঁচভাগে ভাগ করা যেতে পারে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে প্রথম রাজনৈতিক শাসনামল, মেজর জিয়া উল হকের সামরিক শাসনামল, দ্বিতীয় রাজনৈতিক সরকারের শাসনামল (বেনজির ভুট্টো ও নওয়াজ শরীফ সরকার),পারভেজ মোশাররফের আধা সামরিক  শাসনামল এবং তৃতীয় বেসামরিক শাসনামল (আসিফ আলি জারদারি,নওয়াজ শরীফ, ইমরান খান সরকার)। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর সরাসরি বা প্রচ্ছন্ন সহায়তায় ক্ষমতায় আসতে হয়েছিলো প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে এবং প্রতিটি রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জনের পর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ব্যর্থ হয়েছে। এমনটি বেনজির ভুট্টোকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো তার জনপ্রিয়তার কারণেই। অনেকেই মনে করছেন, আন্তর্জাতিক চাপ না থাকলে একই পরিণতি হতে পারে ইমরান খানের।
 
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর  পাকিস্তানের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলি ভুট্টো। ১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্ট থেকে পাকিস্তানে তিনি নতুন সংবিধান কার্যকর করেন। এই সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে ইসলামকে উল্লেখ করা হয় এবং পাকিস্তানের নতুন নাম দেওয়া হয় ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তান। এই সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ দিকটি ছিল, যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। নতুন সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর ভুট্টো দেশটির প্রধানমন্ত্রী এবং ফজল ইলাহি রাষ্ট্রপতি হন।
 
১৯৭৭ সালের ৭ মার্চ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন জুলফিকার আলী ভুট্টো ও তার দল।  চার মাস পরেই ৫ জুলাই তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া-উল হক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং একজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেন। ৯০ দিনের ভেতর নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও জিয়া উল সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। জেনারেল জিয়ার অধীনে ১৯৭৭-১৯৮৮ পর্যন্ত পাকিস্তানে সামরিক শাসন বিদ্যমান থাকে।
 
১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল দুর্নীতি এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে এক বিতর্কিত বিচারে রাওয়ালপিন্ডিতে জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়া হয়। জেনারেল জিয়াই ভুট্টোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে গুজব রটে। বিশেষজ্ঞগণ এই ঘটনাকে 'জুডিশিয়াল মার্ডার' বা 'বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড' বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন।
 
জেনারেল জিয়া পাকিস্তানে হুদুদ অর্ডিন্যান্স, যাকাত আইন ও যাকাত ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। গোটা রাষ্ট্রকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত করার জন্য 'ইসলামাইজেশন' ঘটান। অবশেষে ১৯৮৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেনারেল জিয়া সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেন। এই নির্বাচনে মোহাম্মদ খান জুনেজো প্রধানমন্ত্রী ও জেনারেল জিয়া - উল হক রাষ্ট্রপতি হন। নতুন জাতীয় পরিষদ গত আট বছরে জেনারেল জিয়ার সকল কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দান করে। তিন বছর পর ১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট জেনারেল জিয়া-উল হক সহ আরও ৩১ জন যাত্রী এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। এই ঘটনার পেছনে জুলফিকার আলি ভুট্টোর ছেলে মুর্তজা ভুট্টো যুক্ত থাকতে পারেন এমন দাবি উঠলেও এটি আজও অমীমাংসিত রহস্যই রয়ে গেছে।
 
এর কিছুদিন পরে ১৯৮৮ সালের ১৬ নভেম্বর আবারও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা পিপিপি'র নতুন প্রধান বেনজির ভুট্টো এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ক্ষমতায় এসেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ডানপন্থী ইসলামি দলগুলোর জোট ইসলামী জামহুরি ইত্তেহাদের (আই জে আই) ব্যাপক তোপের মুখে পড়েন।
 
১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি গোলাম ইসহাক খান দুর্নীতির অভিযোগে বেনজির সরকারকে বরখাস্ত করেন। একই বছরের ২৪ অক্টোবর আইজেআই এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করে। প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরীফ৷ ১৯৯৩ সালের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোলাম ইসহাক খান দুর্নীতির অভিযোগে শরীফের সরকারকেও বরখাস্ত করেন। কিছুদিন পর গোলাম ইসহাক খান এবং শরীফ দুজনেই পদত্যাগ করেন।
 
১৯৯৩ সালে আবারও বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিছুদিন পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ফারুক লেঘারি। ১৯৯৬ সালে লেঘারি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বেনজির সরকারকে বরখাস্ত করেন। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরীফ। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নওয়াজ শরীফের বেসামরিক সরকারকে পতনের জন্য একটি অভ্যুত্থান ঘটান। ২০০০ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা দেশে এই সামরিক অভ্যুত্থানকে বৈধতা দেন। ২০০১ সালে সেনাপ্রধানের পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীনই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন জেনারেল মোশাররফ।
 
২০০২ সালের ৩০ এপ্রিল মোশাররফ আরও পাঁচ বছর রাষ্ট্রপতি হিসাবে থাকার জন্য জনসমর্থন আদায়ে গণভোট আয়োজন করেন। এই ভোটে জনগণের রায় তার পক্ষে যায়। একই বছর ১০ অক্টোবর  মোশাররফের সামরিক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কিউ সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়। জাফরুল্লাহ খান জামালী প্রধানমন্ত্রী হন।
 
প্রায় আট বছর নির্বাসনের পর ২০০৭ সালে জেনারেল মোশাররফের সাথে একটি পুনর্মিলন চুক্তি করেন বেনজির ভুট্টো। পাকিস্তানের পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণের আবেদন জানাতে পাকিস্তানে ফিরে এসেছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সে বছরই করাচিতে বেনজির ভুট্টো ও পিপিপির একটি সংবর্ধনা সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ১৮০ জন মারা যান ওই ঘটনায়।  কিছুদিন পরে ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডির লিয়াকত বাগে একটি প্রচার সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় বন্দুক ও বোমা হামলায় আততায়ীর হাতে খুন হন বেনজির ভুট্টো। ২০১৭ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ দাবি করেছিলেন,তার স্বামী আসিফ আলী জারদারি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ২০০৮ সালে পিপিপি সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় ইউসুফ রাজা গিলানি প্রধানমন্ত্রী এবং কিছুদিন পর বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ আলী জারদারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কারও মতে,বেনজির হত্যায় জড়িত থাকতে পারে তালিবানরা। সন্দেহের তীর অনেকের দিকে থাকলেও,এই ঘটনায় কারা জড়িত থাকতে পারেন,তা কেউ কখনো জানতে বা প্রমাণ করতে পারেননি।
 
এতদিন পর্যন্ত পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিদের ভেতর ক্ষমতা ধরে রাখার বিষয়টি নিয়ে ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল। সে কারণেই বনিবনা হচ্ছিল না দুই পক্ষের। অবশেষে ২০১০ সালে আসিফ আলী জারদারি সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন এবং দেশকে আধা-রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ সংসদীয় ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত করেন।
 
২০১২ সালে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট ইউসুফ রাজা গিলানিকে আদালত অবমাননার অভিযোগে তার পদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করেন। পিপিপির আরেক নেতা রাজা পারভেজ আশরাফ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
 
২০১৩ সালের মে মাসে সাধারণ নির্বাচনে পিএমএল-এন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো নওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এবারেও তিনি মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ২০১৭ সালে লন্ডনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিকানা সংক্রান্ত একটি দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তাকে অযোগ্য ঘোষণা করার পর শরীফ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ২০১৮ সালে লন্ডন থেকে লাহোরে ফিরে আসার পরে শরীফ এবং মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে গ্রেফতার করা হয়।
 
পাকিস্তানে সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। তেহরিক-ই-ইনসাফ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন দলটির চেয়ারম্যান ইমরান খান৷ ভুট্টো ও শরীফ পরিবার তন্ত্র থেকে তৃতীয় আরেকটি দল হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন হাওয়া নিয়ে এসেছিলেন ইমরান। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর সবসময়ই সেনাবাহিনী ও এস্টাবলিশমেন্টের  সমালোচনা করেছেন তিনি। সেনাবাহিনী যে তার ওপর ক্ষিপ্ত, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তা জানিয়েছিলেনও তিনি। ২০২২ সালের ১ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ায় ক্ষমতা হারান ইমরান খান।
 
চলতি বছরের ৯ মে তাকে কাদির ট্রাস্ট মামলায় গ্রেফতার করা হয়। দেশ জুড়ে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। ৫ আগস্ট তোশাখানা মামলায় দ্বিতীয়বারের মত গ্রেফতার হন তিনি। এই মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডসহ পাঁচ বছরের জন্য তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন আদালত। আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। ইতোমধ্যে ১৫০ এর বেশি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তাকে। সেনাবাহিনীর সমর্থন হারানোর পর এবং বিতর্কিত কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই তাকে সেনাবাহিনী সরিয়ে দিয়েছেন বলে ধারণা করেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। আসন্ন আদমশুমারির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে বিধায় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে কয়েক মাস। ফলে পাকিস্তানে আবারও সেনাশাসন ফেরার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
 
পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্র কখনো পূর্ণতা পায় নি। রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা,তাদের হত্যা ও সামরিক ক্যু দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। সেনাবাহিনী ও এস্টাবলিশমেন্টের ওপর ক্ষুব্ধ থাকলেও পাকিস্তানের জনগণ সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করতে পারেন না। এই জায়গাটিকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু ইমরানের উৎখাত ও গ্রেফতার প্রমাণ করে, আজও দেশটির ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয় পর্দার আড়ালে বসে থাকা সেনাবাহিনীর হাতেই।
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।