পথরেখা অনলাইলাইন : বিশ্বকাপ খেলা একেকজন যে কথায় কতটা পটু সেটা আরেকবার বোঝা গেল তানজিদ হাসান তামিমের কথায়। জাতীয় দলে প্রথমবার সুযোগ পাওয়ার পর; নিজের মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা স্বপ্নটাও বলতে ভুল করেননি। বলা যায় ছোট তামিম হিসেবে পরিচিত পাওয়া হিসেবে বড় স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন। ছোটদের পর এবার বড়দের বিশ্বকাপ জিততে চান এই সেনসেশন। বাংলাদেশকে প্রথম কোনো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ দিয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপজয়ী দলের একজন সদস্য ছিলেন তানজিদ তামিম। চোটের কারণে তামিম ইকবাল নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় এশিয়া কাপের দলে সুযোগ পেয়েছিলেন জুনিয়র তামিম। অথচ এই বছরের শুরুতেও আলোচনায় ছিলেন না এ বাঁহাতি ব্যাটার। সর্বশেষ বিপিএলে যদিও সুযোগ পাননি তিনি। তবে নিজেকে প্রস্তুত করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) অসাধারণ পারফরম্যান্স করেন তামিম। গত মাসে ইমার্জিং এশিয়া কাপে দারুণ পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পথটা তৈরি করেন।
জাতীয় দলে তার সুযোগ পাওয়াটা একরকম অনুমিত ছিল। দলে সুযোগ পেয়ে ১৭ আগস্ট তামিম জানালেন, বাংলাদেশের হয়ে এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে চান তিনি। বাংলাদেশ দলে ডাক পাওয়ার পর এদিনই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এলেন তামিম। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন এল, তামিমসহ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের চার ক্রিকেটার, তাওহীদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম ও শামীম হোসেন পাটোয়ারি আছেন এবারের এশিয়া কাপের দলে। সবকিছু ঠিক থাকলে, তাঁদের সুযোগ আছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলেও জায়গা করে নেওয়ার। তবে চারজন যখন একসঙ্গে বসেন কিংবা দেখা হয়, কি আলোচনা হয় নিজেদের মধ্যে? জুনিয়র তামিমের সাহসী উত্তর, ‘আমরা যেটা অর্জন করছি সেটা তো অতীত এখন। সবার মধ্যে একটাই কথা হয়, একটা স্বপ্ন, বড়দের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা। সবারই যখন দেখা হয়, সামনে যেহেতু ওয়ানডে বিশ্বকাপ একটা জিনিসই মাথায় কাজ করে, আমরা এশিয়া কাপ বা যত টুর্নামেন্টই খেলি ব্যাক অব দ্য মাইন্ডে কিন্তু বিশ্বকাপ থেকেই যায়–ইনশা আল্লাহ চেষ্টা করব এবার। যদি কপালে থাকে ইনশা আল্লাহ হয়ে যাবে।’
যদিও মাঝে নিজের খারাপ সময়টা নিয়েও কথা বললেন, ‘আসলে দেখেন, প্রত্যেক ক্রিকেটারের জীবনে ভালো সময় খারাপ সময় আসবেই। এটা মেনে নিতে হবে। খারাপ সময়টা কীভাবে কাটিয়ে উঠব সেই জিনিসটা মূল ব্যাপার। চেষ্টা করছি ওই সময় খারাপ সময়টাই কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়। বিভিন্ন কোচের সঙ্গে কথা বলছি। আমার যেখানে সমস্যা-দুর্বলতা ছিল, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। ধীরে ধীরে এভাবে রানে ফিরছি। এই জিনিসগুলো নিয়ে কাজ করে।’ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য তামিম এশিয়া কাপ দিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দলে ডাক পেয়েছেন। এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকলেও জুনিয়র তামিমের ধ্যানজ্ঞানজুড়ে আসন্ন ভারত বিশ্বকাপ। যুব বিশ্বকাপের মতো এবার বড়দের বিশ্বকাপও জিততে চান তরুণ এই টাইগার ব্যাটার। জানালেন, কপালে থাকলে বিশ্বকাপ জিতবেন। সময়টা বেশ ভালোই যাচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটার তানজিদ হাসান তামিমের। কদিন আগেই ইমার্জিং এশিয়া কাপে নজর কেড়েছেন। সেখান থেকে ফিরেই ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। জাতীয় দলে উঠে আসার পথটা মোটেও সহজ ছিল না আর একইসঙ্গে এই ওপেনারের আশা তার নিজ এলাকা বগুড়া থেকে আরো অনেক ক্রিকেটার উঠে আসবে।
তামিম বলেন, ’সত্যি কথা বলতে কি অনেক ভালো লাগে। আমাদের উঠে আসা এতটা সহজ ছিল না। কারণ, আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে বিকেএসপি ছিল না। আমাদের অনেক ডিস্ট্রিক্ট, ডিভিশন তারপর ঢাকা লিগ খেলে এখানে উঠে আসতে হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ বগুড়ায় আরো অনেক ট্যালেন্টেড প্লেয়ার আছে ইনশাআল্লাহ ওরাও উঠে আসবে’। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতলেও তামিমের স্বপ্ন এখন বড়দের হয়েও বিশ্বকাপ জয়ের। এমন কি ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জয় করাটা অতীত হয়ে গিয়েছে বলছেন এই ওপেনার। সামনে এশিয়া কাপের খেলা থাকলেও তামিমের মাথায় বিশ্বকাপের চিন্তা। এই ওপেনার মনে করছেন কপালে এইবার বিশ্বকাপ জয়টাও হয়ে যেতে পারে। তামিম বলছিলেন, ‘আমরা যেটা অর্জন করছি, সেটা তো এখন অতীত। সবার মধ্যে এখন একটাই কথা, একটা স্বপ্ন যে বড়দের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা। সবারই যখন দেখা হয়, সামনে যেহেতু বিশ্বকাপ, একটা জিনিসই মাথায় কাজ করে, আমরা এশিয়া কাপ যত টুর্নামেন্টই খেলি না কেন, ব্যাক অব দ্য মাইন্ডে কিন্তু ওয়ার্ল্ড কাপ থেকেই যায়। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব এবার। যদি কপালে থাকে, ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে।’
এদিকে লিটনের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে তামিমকেই দেখছেন সুজন। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের হয়ে কারা ইনিংস উদ্বোধন করবেন, দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে অনেক আলোচনার মাঝে এটাও অন্যতম। এক প্রান্তে তো লিটন দাস আছেনই। তার সঙ্গী কে হবেন? চোটের কারণে এশিয়া কাপে খেলবেন না তামিম ইকবাল। তাতে কী? আরেক তামিম তো আছেন...। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে দারুণ পারফরম করে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। ‘ছোট’ তামিম খ্যাত এই তরুণকেই লিটনের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে দেখছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। মারমুখী ব্যাটার হিসেবে পরিচিত তামিমকে নিয়ে সুজন বলেন, ‘তানজিদ তামিমকে আমি দেখি আসলে... এ রকম যারা খেলে, তাদের থেকে আমরা কী আশা করি? দারুণ একটা সূচনা। তামিম ও রকমই ক্রিকেটার। সিনিয়র তামিমের ছোটবেলা যদি মনে করি, ও যে রকম ব্যাটিং করত, আমার মনে হয়, জুনিয়র তামিম একই রকম ব্যাটিং করে। তানজিদ তামিমের এটাই স্টাইল। ও যদি এটা ধরে রাখে আমি চাই ও ধরে রাখুক। ও যেন খুব একটা না বদলায়। আমরা যেন চাপ তৈরি না করি বাইরে থেকে।’
পথরেখা/আসো