মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : নারী বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে মুখেঅমুখি হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড-স্পেন। ইংলিশদের যেখানে প্রায় ছয় দশকের আক্ষেপ ঘোচানোর মিশন সেখানে স্পেন চাইছে শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়তে। ইংল্যান্ডের মেয়েরা বিশ্বকাপে সব বাধা পেরিয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে। মিলি ব্রাইটদের হাত ধরেই কি আবারও বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পাবে ইংল্যান্ড! বিশ্বকাপ ফুটবলে ইংলিশরা গান গায় ‘ইটস কামিং হোম’। প্রতিবারই তারা স্বপ্ন দেখে, বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে আসবে। কিন্তু আসে না। ১৯৬৬ সালে ববি মুরদের হাত ধরে শিরোপার স্বাদ পূরণ করেছিল ইংল্যান্ড। এরপর অপেক্ষার প্রহর আর শেষই হচ্ছে না তাদের। এবার কি ঘুচবে ৫৭ বছরের আক্ষেপ! ইংলিশ ছেলেরা গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেই বিদায় নিয়েছে। তবে ইংলিশ মেয়েরা বিশ্বকাপে সব বাধা পেরিয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে। মিলি ব্রাইটদের হাত ধরেই কি আবারও বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পাবে ইংল্যান্ড! ইংল্যান্ডের সাফল্যের গল্প লিখছেন লরেন হেম্প, লরেন জেমস, মিলি ব্রাইট এবং অ্যালেসিয়া রুসোরা। বিশ্বকাপে লরেন হেম্প, লরেন জেমস এবং অ্যালেসিয়া রুসো প্রত্যেকেই তিনটি করে গোল করেছেন। ফাইনালে এই তিনজনের কোনো একজন আলো ছড়াতে পারলেই কেল্লা ফতে। শিরোপা হাতে বাড়ি ফিরতে পারে ইংল্যান্ড! সে লক্ষ্যেই ফাইনালটা খেলতে নামবে ইংল্যান্ড। তাদের কাছে জয় ছাড়া কোন ভাবনাও নেই।
গত বছর উয়েফা নারী চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। ফাইনালে তারা ২-১ গোলে পরাজিত করে জার্মানিকে। সেই জয়ে খেলেছিলেন মিলি ব্রাইট, লরেন হেম্প, জর্জিয়া স্ট্যানওয়ে, এলা টুন, অ্যালেসিয়া রুসোরা। ইউরোপসেরার মুকুট জয় করা এই মেয়েরাই কি বিশ্ব জয় করবেন? ইংলিশ মেয়েরা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এর আগে তাদের সেরা ফল ছিল বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছেন ডাচ কোচ সারিনা উইগম্যান। তার অধীনেই গত বছর ইউরোপসেরা হয়েছে ইংল্যান্ড। এদিকে ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্পেনও নিজেদেরকে ভালভাবেই প্রস্তুত করছে। ইংল্যান্ডের কোচ উইগম্যানের কাছে গত বছর ইউরোর শেষ আটে হেরেছেন স্পেনের কোচ বিল্ডা। ফাইনালটা তার জন্য প্রতিশোধের মিশন। জাভি, ইনিয়েস্তা, কার্লোস পুয়েলরা দারুণ একটা যুগ উপহার দিয়েছেন স্পেনের ফুটবলকে। ২০০৮ সালে ইউরো কাপ, ২০১০ সালে বিশ্বকাপ এবং ২০১২ সালে আবারও ইউরো কাপ জয় করে স্পেন। তাদের এ সাফল্যের পেছনে বড় অবদান ছিল বার্সেলোনার।
সে সময় জাতীয় দলের প্রথম একাদশের আটজনই ছিলেন বার্সেলোনার। জাভিদের সঙ্গে ছিলেন ডেভিড ভিয়া, জেরার্ড পিকে, সার্জিও বুসকেটস, সেস ফ্যাব্্িরগাস আর পেদ্রোরাও। নারী ফুটবলে স্পেনের সাফল্যের পেছনেও রয়েছে বার্সেলোনা। গত মৌসুমে উয়েফা নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছে বার্সেলোনা। ফাইনালে কাতালান মেয়েরা হারিয়েছিল জার্মানির উলফসবার্গকে। সে দলের আটজন বিশ্বকাপে স্পেনের জার্সিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আইতানা বোনমাতি, সালমা প্যারালুয়েলা, লায়া কোডিনা, অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস, ম্যারিওনারা দুর্দান্ত ফুটবল খেলছেন। বার্সেলোনার এ মেয়েদের হাত ধরেই কি বিশ্বকাপ শিরোপা স্পর্শ করবে স্পেন! নারী ফুটবলে স্প্যানিশদের বড় কোনো সাফল্য নেই। নারী ইউরো কাপে একবার তারা তৃতীয় হয়েছে (১৯৯৭ সালে)। এটাই এতদিন বড় সাফল্য ছিল স্পেনীয় মেয়েদের। এবার সরাসরি বিশ্বকাপটাই অর্জন করবে তারা! অথচ গত বছরের সেপ্টেম্বরে বর্তমান কোচ জর্জ বিল্ডার বিপক্ষে ১৫ জন ফুটবলার বিদ্রোহ করেছিলেন। স্প্যানিশ মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছিল, কোচকে বরখাস্ত করা না হলে তারা আর খেলবেন না। সেই কোচের অধীনেই বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেছে স্পেন। অতীতের সে বিদ্রোহের কথা এখন আর মনেই করতে চান না বিল্ডা।
এদিকে ৩২ দলের বিশ্বকাপ হওয়ায় খুশি হয়েছেন ফিফা সভাপতি। চার বছর আগে ফিফা নারী বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা ছিল ২৪টি। ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো দলের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩২টি করেন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফিফা নারী বিশ্বকাপে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে থাকা দলটা সুইডেনের কাছে টাইব্রেকারে হেরে যায়। ১৯৯১ সালে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে সেমিফাইনালের আগে কখনোই বিদায় নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ৩২ দলের টুর্নামেন্ট থেকে আর বাকি দুইটি দল। ফিফা নারী বিশ্বকাপ পেতে চলেছে নতুন এক চ্যাম্পিয়ন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে রোববার মুখোমুখি হবে নারী ফুটবলের দুই পরাশক্তি স্পেন এবং ইংল্যান্ড। এর আগে অবশ্য শনিবার ৩য় স্থান নির্ধারনী ম্যাচের জন্য লড়ে টুর্নামেন্টের অন্যতম আয়োজক অস্ট্রেলিয়া এবং র্যাঙ্কিংয়ের ৩য় স্থানে থাকা সুইডেন। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে সর্বমোট ১১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছে বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। যা আগের ২০১৯ আসরের তুলনায় তিনগুণ এবং ২০১৫ আসরের তুলনায় প্রায় ছয়গুগ বেশি। এবারের বিশ্বকাপজয়ী দল পাবে ৪২ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৭ কোটি টাকার কাছাকাছি। রানারআপ দলের জন্য থাকছে ৩০ লাখ ১৫ হাজার ডলার। তবে এখানেই থামছে না পুরস্কারের তালিকা। বিশ্বকাপে ৩২ দলের হয়ে অংশ নেওয়া সকল খেলোয়াড়ের জন্যই পুরস্কার বরাদ্দ রেখেছে ফিফা। হিসেব অনুযায়ী, এবারের টুর্নামেন্টে ৭৩২ জন নারী ফুটবলার অংশ নিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকেই দলীয় পারফর্ম্যান্স অনুযায়ী আর্থিক পুরস্কার পাবেন ফিফা থেকে। গ্রুপপর্বে বাদ পড়া দলের নারী ফুটবলাররাও পাবেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। আর চ্যাম্পিয়ন দলের নারী ফুটবলারদের জন্য আছে ২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া বিশ্বকাপের পর ফিফার সম্প্রচার স্বত্ব থেকে আয় হওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তিনি জানান, ‘বৈশ্বিকভাবে নারী ফুটবলারদের বেতন আনুমানিক ১৪ হাজার ডলার। তাই নতুন মডেলের অধীনে এবারের বরাদ্দকৃত অর্থ এসব খেলোয়াড়দের জীবন এবং ক্যারিয়ারে আরও অর্থপূর্ণ অবদান রাখবে।’
পথরেখা/আসো