পথরেখা অনলাইন : বড় স্বপ্ন নিয়ে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে খেলতে শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া সেরা মিশনে একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও দলের অধিনায়ক ও সেরা তারকা সাকিব আল হাসানকে অনুশীলনে পাওয়া যায়নি। কানাডা গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ও শ্রীলঙ্কান প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল) খেলে দলের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব আল হাসান। যোগ দিয়েই অবশ্য ব্যস্ত সময় পার করেন ক্রিকেটার ও টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বৈঠক করে। হেড কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহের সঙ্গে আলাপ করে ৩০ আগস্ট শুরু এশিয়া কাপে দলের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। এশিয়া কাপে দলকে সাফল্য পেতে কী করতে হবে, সে বিষয়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গেও আলোচনা করেন এই বাহাতি অলরাউন্ডার। ৬ জাতির এশিয়া কাপে সাকিব বাহিনী খেলছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান গ্রুপে। টাইগারদের প্রথম ম্যাচ ৩১ আগস্ট ক্যান্ডিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা এবং ৩ নভেম্বর লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সুপার ফোরে খেলতে লিগ পর্বে দুই দলের যে কোনো একটিকে হারাতে হবে। কঠিন কাজ। তারপরও আশাবাদী টাইগার অধিনায়ক সাকিব।
দেশ ছাড়ার আগে টাইগার অধিনায়ক দলের লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশকে এখন প্রমাণ করার সময়। ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে থাকা টাইগাররা প্রথমবারের মতো এশিয়ার সেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা-তিন চ্যাম্পিয়ন থাকার পরও বাস্তবতার সমীকরণে কি সেটা সম্ভব? এশিয়া কাপ শুরু ১৯৮৪ সালে। এবার বসছে ১৬তম আসর। বাংলাদেশ নিয়মিত খেলছে ১৯৮৬ সাল থেকে। তিন আসরে ফাইনাল খেলেছে। এশিয়া কাপ এখন দুই ফরম্যাটে হয়। ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপের খেলাগুলো হয় ৫০ ওভারের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে এশিয়া কাপে ম্যাচগুলো ২০ ওভারের। অক্টোবর-নভেম্বর ১০ জাতির বিশ্বকাপ। সে হিসেবে এবার এশিয়া কাপের ম্যাচগুলো হবে ৫০ ওভারের। এ সমীকরণের হিসেবে এবারের এশিয়া কাপ সাকিবদের জন্য বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে ধরাই যায়।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলেছে ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে। ২০১২ ও ২০১৬ সালে ফাইনাল খেলেছে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। ২০১২ সালে ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিল ২ উইকেটে। দুবাইয়ে ২০১৮ সালের ফাইনালে ভারতের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছিল। ২০২২ সালে লিগ পর্ব টপকাতে পারেনি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে এবং শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিল ২ উইকেটে। এবারও দুই দলের বিপক্ষেই খেলবে গ্রুপ পর্বে। এশিয়া কাপে দুই দলের বিপক্ষে পরিসংখ্যানে পিছিয়ে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপে ম্যাচ খেলেছে ১৫টি। টাইগারদের জয় সাকল্যে ৩টি। ২০১২ সালে ৫ উইকেটে, ২০১৬ সালে ২৩ রানে এবং ২০১৮ সালে ১৩৭ রানে জিতেছিল।
দর্শক-সমর্থকদের জিঞ্জাসা, এবার কি জিততে পারবে সাকিবরা? দুই দলের ওয়ানডে লড়াইয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। ১৪ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৮ এবং আফগানিস্তানের ৬। টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যানে আবার আফগানরা এগিয়ে। ১১ ম্যাচে টাইগারদের ৫ জয়ের বিপরীতে আফগানিস্তানের জয় ৬টি। এশিয়া কাপেও আফগানরা এগিয়ে। ২০১৪ সাল থেকে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলছে। ৪ মুখোমুখিতে সাকিবরা জিতেছেন ২০১৮ সালে। সুপার ফোরে জিতেছিলেন মাত্র ৩ রানে। গ্রুপ ম্যাচে হেরেছিলেন ১৩৬ রানে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে আফগানরা জিতেছিল ২৩ রানে এবং ২০২২ সালে সর্বশেষ এশিয়া কাপে রশিদ খানরা জিতেছিলেন ৭ উইকেটে। গ্রুপপর্ব টপকাতে সিনিয়র, জুনিয়রদের পারফরম্যান্স করতে হবে। এক্ষেত্রে অধিনায়ক সাকিব মিস করবেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে। যিনি পিঠের ব্যথায় নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। মিস করবেন ডান হাতি পেসার ইবাদত হোসেনকে। দুজনের জায়গায় প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন তানজিম হাসান তামিম ও তানজিদ সাকিবকে।
অনেকটা নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে সিনিয়র ও জুনিয়রদের নিয়ে গড়া দল নিয়েই এশিয়া কাপ খেলতে হবে সাকিবকে। যদিও পিছিয়ে যেতে পারে এশিয়া কাপ, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে! ক্রিকেট দুনিয়ায় আবারো করোনা আতঙ্ক। এশিয়া কাপ শুরু হতে আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। তার আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দুই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার। এবারের আসরের ফাইনালসহ বেশিরভাগ ম্যাচের ভেন্যু শ্রীলঙ্কায়। আর সে কারণে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি পিছিয়ে যেতে পারে এশিয়া কাপ? বড় টুর্নামেন্ট আসলেই কি যেন হয় শ্রীলঙ্কার। গত বছর এশিয়া কাপ শুরুর আগে একাদশ সাজানো নিয়েই বিপাকে পড়েছিল দ্বীপরাষ্ট্রটি। যদিও শেষমেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারাই। এবার এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগে আবারো মড়ক লেগেছে দলটির। একদিন আগেই কাঁধের চোটে পড়ে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেছেন লঙ্কান পেসার দুশমন্থ চামিরা। এছাড়া তারকা লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ফিটনেস নিয়েও আছে শঙ্কা। এর মধ্যেই খবর, দলটির উদ্বোধনী ব্যাটার আভিষ্কা ফার্নান্দো এবং উইকেট-কিপার কুশল পেরেরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এদিকে বাংলাদেশ দুর্বল দল বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অভিমন ব্যক্ত করেছেন সাবেক ক্রিকেটার তাপস বৈশ্য। সমালোচনার পর তিনি শুভকামনাও জানিয়েছেন।
পথরেখা/আসো