পথরেখা অনলাইন : সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। মাঝে-ফাঁকে এক চিলতে রোদ। আবার মেঘাকাশ। ঠিক এমন ভিন্ন পরিবেশেই ২৫ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার, মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশ শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার মালখানগর কলেজের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় পর্ষদের সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হাসান।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের স্বপ্নদ্রষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্ম অসাম্প্রায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। বাঙালির চেতনায় উদ্বূব্ধ করতে হবে। মোদ্দাকথা আমাদের মনে রাখতে হবে- সবার ওপরে মানুষত্ব; তাহার উপরে নাই। সবায়কে মানবিক চেতনায় পড়ে তুলতে হবে।’বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন ২০১০ সাল থেকে মাটির নীচের প্রত্নত্ত্ত্ব আবিস্কার করার জন্য প্রথম জরিপ করি। বজ্রযোগীনির রঘুরামপুরের খনন করে হাজার বছরের পুরানো বৌদ্ধবিহারের সন্ধান পাই। এটার নাম বিক্রমপুর বিহার। এখানে বিশাল একালা জুড়ে এই বিহার রয়েছে। আমরা অল্প কিছু অংশ আবিস্কার করেছি। এলাকায় যেভাবে জনবসতি হয়েছে; তাতে সবটা আবিস্কার করা খুবেই কঠিন কাজ। আমাদের ধারণা এখানেই জ্ঞানতাপস অতীশ দ্বীপঙ্কর পড়াশুনা করতেন। আমরা অদূরেই মাটির নীচ থেকে নাটেশ্বরে খুঁজে পেয়েছি প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধদের বিশাল স্মৃতিচিহ্ন, দেউল [দেবালয়]। এ দেউল (দেবালয়) বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস সন্ধানে নতুন পথ খুলে দিয়েছে। এটি বৌদ্ধদের বিহার বা বেশ কয়েকটি মন্দিরের সমষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ ইতিহাসের অনেকেই বলেছেন পদ্মার গর্ভে বিক্রমপুরের সব কৃষ্টি-ইতিহাস-ঐতিহ্য বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশ প্রমাণ করেছে তারা ভুল বলেছেন।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে শোকের মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ভবানিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রধান শিক্ষক মো. আমিন শেখ। বক্তব্য শুরুর আগে অগ্নিবীনা ললিতকলার সংগীত শিল্পীরা উদ্বোধনী ও স্বাগত সংগীত পরিবেশন করেন।
হেলেনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের দপ্তর ও পরিসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক আরিফ সোহেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবু হানিফ, মুন্সিগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান ঐক্য পরিষদদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর চক্রবর্তী, মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. সামছুল হক, মালখানগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ খান, সিরাজদিখান উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি সুব্রত দাস রনক, এ্যাডভোকেট মো. সহিদুল ইসলাম এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মালখানগর কলেজের অধ্যক্ষ মো. সফিউদ্দিন হাওলাদার।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় পর্ষদের সদস্য, টঙ্গিবাড়ি উপজেলা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, মুন্সিগঞ্জ কেন্দ্রের প্রভাষক মো. মামুন, অন্যান্য কেন্দ্রের সম্মানিত সদস্য, স্হানীয় সুধীজন, সিরাজদিখান উপজেলা শাখার কাউন্সিলরগণ এই সম্মিলনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ২০২৩-২০২৬ সালের জন্য ৩ বছর মেয়াদী নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নির্বাহী কমিটিতে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন হেলেনা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ ইসলাম শেখ।
পথরেখা/আসো