পথরেখা অনলাইন : বাংলাদেশের ক্রিকেটে একের পর এক দুঃসংবাদ আসছে। জ্বরের কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেছেন লিটন দাস। তার জায়গায় লংকায় উড়াল দিয়েছেন এনামুল হক বিজয়। এর আগে এশিয়া সেরা আসর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। এবার ইনজুরির থাবায় পড়ে বিশ্বকাপটাই মিস করতে যাচ্ছেন এবাদত হোসেন। শুরুতে এশিয়া কাপের দলে না থাকলেও এবার বিশ্বকাপটাই তার খেলা হচ্ছেনা। এক মাসের বেশি সময় পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নতি হয়নি এই পেসারের। ফলে শেষ পর্যন্ত লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করাতে হলো তাঁকে। তাতেই শেষ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন।
অস্ত্রোপচার, নাকি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিট হবেন এবাদত, এটাই ছিল সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। কিন্তু লন্ডনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচারই করাতে হলো। বুধবার সকালে লন্ডনের ক্রমওয়েল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। সেখান থেকেই নিজের ফেসবুক পোস্টে এবাদত লিখেছেন, ‘জীবনে প্রথমবার অপারেশন টেবিলে কাটাদে হয়েছে আমাকে। আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ ভরসা।’
এবাদতের অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবির প্রধান চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘হ্যাঁ, ইবাদতের একটা অস্ত্রোপচার চলছে। অস্ত্রোপচারটা শেষ হলে আমরা পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করব।’ জানা গেছে, ইবাদতের পুনর্বাসনের জন্য ছয় মাস সময় লাগতে পারে। যেকোনো অস্ত্রোপচার হয়ে গেলে লম্বা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। ইবাদতের বেলায়ও ব্যতিক্রম নয়। এক মাস পর ভারতে শুরু হবে বিশ্বকাপ। এই মেগা ইভেন্টে ইবাদতকে বাংলাদেশ পাচ্ছে না, তা নিশ্চিত। দেবাশীষ অবশ্য স্পষ্ট করে না বললেও জানিয়েছেন, অপারেশন হয়ে গেলে তো কিছু করার নেই (বিশ্বকাপে নিয়ে)। গত ৮ জুলাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের সময় বাঁ হাঁটুতে চোট পান ইবাদত। বোলিং অসমাপ্ত রেখেই মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। এরপর আফগানদের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে ছিটকে যান তিনি। গত এক বছরে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ইবাদতের পারফরম্যান্স ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল। এই সময়ে ১২ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাই এশিয়া কাপে ইবাদতকে হারানো বড় ধাক্কা বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এটা একটা হতাশাও বটে।
বলা যায়, এশিয়া কাপের ম্যাচে মাঠে নামার আগেই বড় এক ধাক্কা খাচ্ছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচের মাত্র একদিন আগে লন্ডন থেকে ভেসে এলো দুঃসংবাদ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরী। শুরুতে দেশের মাটিতেই চলেছিল চিকিৎসা। কিন্তু চোট সেরে না ওঠায় বাড়তে থাকে দুশ্চিন্তা। সেই দুশ্চিন্তাই যেন সত্য হলো। অপারেশন থিয়েটারে যাবার খবর এসেছে খানিক আগে। এবার জানা গেলো, হাঁটুর এই চোটের কারণে বিশ্বকাপটাই মিস করতে চলেছেন তিনি। অপারেশনের পর পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে লম্বা সময়ের জন্য মাঠের ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকতে হবে তাকে। যার অর্থ বিশ্বকাপে নিশ্চিতভাবেই এই পেসারের সার্ভিস মিস করবে বাংলাদেশ। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেন, ‘বুধবার এবাদতের অপারেশন হয়েছে। এরপর রিহ্যাব আছে, সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে লম্বা সময় লাগতে পারে।’ তবে ঠিক কতদিন পর তাকে আবার মাঠে দেখা যাবে তা নিশ্চিত করেননি প্রধান নির্বাচক। সাধারণত এমন ইনজুরির কারণে ৬ থেকে ৮ মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয় খেলোয়াড়দের। এর আগে এবাদত নিজেই জানিয়েছেন তার অস্ত্রোপচারের কথা।
ঘরের মাঠে আফগান সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে চলাকালে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন এবাদত। আফগানিস্তানের ইনিংসের ৪২তম ওভারের তৃতীয় বলটি করার সময় লাফ দিতে গিয়ে আম্পায়ার গাজী সোহেলের কাঁধে বাড়ি খায় এবাদতের হাত। আর এমন ধাক্কা খেয়ে রানআপে নিজেকে ঠিকঠাক থামাতে পারেননি। ফলে পেছন ঘুরে পড়ে যান মাটিতে, তখনই পায়ে আঘাত পান এবাদত। এরপর তাকে ৪৮ ঘন্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কিন্তু এই সময়ে চোট গুরুত্বর অনুধাবন করতে পেরে এই পেসারকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করেন ফিজিও। ধারণা করা হয়েছিল, এশিয়া কাপ দিয়ে আবারও মাঠে ফিরবেন তিনি। তবে পুরোপুরি ফিট না হওয়ায় তাকে নিয়ে আর ঝুঁকি নেয়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। অথচ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যেই ছিলেন ইবাদত হোসেন। দলের সতীর্থরা যখন ফিটনেস টেস্ট দিচ্ছিলেন, তখন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় কঠিন পরীক্ষা দিতে দেখা যায় এই পেসারকে। এশিয়া কাপের ১৭ জনের দলেও ছিলেন তিনি। সতীর্থদের সঙ্গে নিয়মিত মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এলেও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার বাইরে অনুশীলনে ঘাম ঝরাতে দেখা যায়নি তাঁকে। সবকিছু মিলে শেষ মুহূর্তে এসে যোগ হলো, এশিয়া কাপে ইবাদতকে নিয়ে শঙ্কা। ইবাদত পুরোপুরি ফিট হয়ে ওঠেনি ইবাদত। এশিয়া কাপে খেললে পুরোপুরি সেরে ওঠা কঠিন হবে তাঁর। বিশ্বকাপ বিবেচনায় কোনো ঝুঁকিও নিতে চায় না টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে ঝুকি নেওয়ার আগেই এশিয়া ও বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন এবাদত।
এখন এবাদতকে যদি না পাওয়া যায়, তানিজম হাসান সাকিব কিংবা সৈয়দ খালেদ আহমেদ বিবেচনায় রয়েছেন নির্বাচকদের। গত মাসে ইমার্জিং এশিয়া কাপ ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী সাকিব। খালেদ ও সাকিব দুজনই আছেন বিসিবির এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে। যেহেতু বিশ্বকাপের দল ঘোষনায় আরও কিছুটা সময় বাকি আছে তাই নতুন কোন চমকও থাকতে পারে। সেখানে কে আসবে সেটাই দেখার বিষয়।
পথরেখা/আসো