পথরেখা অনলাইন : অনেকটা প্রত্যশার বিপরিতে থেকে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই অনেকটা প্রতিরোধহীন পরাজয় হয়েছে টাইগারদের। ছয় দলের এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচে পরাজয়ের পর আরেকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে সাকিব আল হাসানের দল। এমন হারের ফলে টাইগারদের সুপার ফোরে খেলার সমীকরণও অনেক জটিল হয়ে গেছে। প্রতিটি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল সুপার ফোরে যাবে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় শর্ত হলো, পরবর্তী ম্যাচটা অবশ্যই জিততে হবে এবং আরও কিছু শর্ত পূরণ করেই জিততে হবে। শ্রীলঙ্কা থেকে শুক্রবারই পাকিস্তানের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বাংলাদেশ দল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে লাল সবুজ বাহিনী। তবে এমন ভ্রমণ ক্লান্তি কাটিয়ে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত থাকতে পারবে তা নিয়েই আছে সন্দেহ! তার ওপর নামতে হবে বড় সমীকরণের খড়গ মাথায় নিয়ে। পাল্লেকেলেতে প্রথম ম্যাচে একা হাতে লড়ে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই বাহাতির ৮৯ রান সত্ত্বেও এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২ দশমিক ৪ ওভারে ১৬৪ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।
এরপর ৫ উইকেট পড়লেও ১১ ওভার বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কানরা। এমন হার সাকিবদের সুপার ফোর পর্বে যাওয়ার সমীকরণ জটিল থেকে জটিলতর করে তুলেছে। সমর্থকদের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে, আফগানদের বিপক্ষে জিতলে কি শেষ রক্ষা হবে? পার হতে হবে অনেক ‘যদি-কিন্তু’র বাঁধা। দুই গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে যাবে দুটি করে দল। ‘বি’ গ্রুপ থেকে সেরা চারে যেতে হলে আফগানদের হারানোই শুধু যথেষ্ট নয়, অনেক বড় ব্যবধানে জয়ও প্রয়োজন হবে। গ্রুপের তিন দলই একটি করে ম্যাচ জিতলে এবং পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে পরের পর্বে যাওয়ার টিকিট হয়ে উঠবে রানরেট। সেখানে এশিয়া কাপের শুরুতেই বেশ পিছিয়ে যাওয়ায় সেরা চারও অনিশ্চিত টিম টাইগার্সের জন্য। আফগানিস্তানকে হারাতে হবে এবং শ্রীলঙ্কার কাছেও রশিদ-মুজিবদের হারতে হবে। তাহলে আর কোনো সমীকরণে যেতে হবে না বাংলাদেশকে। দ্বিতীয়ত, আফগানদের বড় ব্যবধানে হারাতে হবে। গ্রুপের তিন দলই যদি একটি করে ম্যাচ জিতে এবং পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে তখন পরের পর্বে যাওয়ার টিকিট হয়ে উঠবে রানরেট।
চোটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সারির দলের কাছে লজ্জার হারের পর আদৌ পূর্ণশক্তির আফগানদের হারাতে পারবে বাংলাদেশ? যারা কি না পাকিস্তানের কন্ডিশনের সঙ্গে খুবই পরিচিত। বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের আরেকটা প্লাস পয়েন্ট হলো, তারা সম্প্রতি বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছে! শান্ত অবশ্য এখনই অত দূর ভাবতে রাজি নন। তিনি বরং আশাবাদী, বাংলাদেশ এখনো সুপার ফোরে খেলতে পারবে, ‘অবশ্যই সুপার ফোরে খেলা সম্ভব। তবে এত দূর চিন্তা না করে আমাদের এখন পরের ম্যাচটা কীভাবে জিততে পারি, সেটা নিয়েই পরিকল্পনা করতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা ওই ম্যাচটা জেতার জন্যই খেলব। ম্যাচটা যদি জিতি, তাহলে কি পরিস্থিতি দাঁড়ায়, সেটা তখনই দেখা যাবে।’ মূলত অনভিজ্ঞতায় ভরাডুবি হয়েছে বাংলাদেশের, এমনটাই মনে করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। টস জিতে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন পাল্লেকেলের অতীত রেকর্ড আর শুকনো উইকেট দেখে। এই উইকেটে টিকে গেলে বড় স্কোর না হওয়ার কোনো কারণই নেই। তবে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক মনে করিয়ে দিয়েছিলেন মেঘলা আবহাওয়াও। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে যতটা ভাবা হচ্ছে, তত বড় স্কোর না-ও হতে পারে। হয়নি।
বাংলাদেশের ব্যাটাররা পারেননি বোলারদের লড়াইয়ের বিপক্ষে বড় পুঁজি এনে দিতে। বাংলাদেশ ব্যাটিং অর্ডার ধাক্কা খেয়েছিল এশিয়া কাপের বেশ আগেই। প্রথমে চোটের কাছে হার মেনে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তামিম ইকবাল। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ওপেনারকে হারিয়ে বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল লিটন দাসের দিকে। তামিমের পর এই পজিশনে তাঁর পরিসংখ্যানই সমৃদ্ধ। কিন্তু কপাল মন্দ হলে যা হয়, জ্বরে দলের সঙ্গে এশিয়া কাপে রওনা দিতে পারেননি লিটন। তাঁর জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলেও জ্বর থেকে সেরে না ওঠায় বিকল্প ভাবতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। দুই অভিজ্ঞ ওপেনারের অনুপস্থিতি বেশ ভালোভাবেই টের পেল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একপ্রকার ধসেই পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। শ্রীলঙ্কার অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপের কোনো জবাবই যেন ছিল না সাকিব আল হাসানের দলের কাছে। সাত ব্যাটারের রান দুই অঙ্কে পৌঁছানোর আগে ফেরা বাংলাদেশের জরাজীর্ণ স্কোরকার্ডই বলে দিচ্ছে লঙ্কান বোলারদের সামনে কতটা অসহায় ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। শান্তর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান আসে তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে। এর জন্য অবশ্য ৪১ বল খেলতে হয়েছে তাঁকে। সর্বোচ্চ আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চের মাঝে পার্থক্যই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশ স্কোরকার্ডের আসল চিত্র। বাংলাদেশের ইনিংসে দুই অঙ্ক পার করেছেন আর মাত্র দুজন। ওপেনার নাঈম শেখ ১৬ ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ রান। নাঈম এর আগে খেলেছেন মাত্র চারটি ওয়ানডে। আরেক ওপেনার তানজীদ হাসান তামিম মাত্রই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখলেন। তাঁর শুরুটাও হয়েছে ভুলে যাওয়ার মতো। লিটন দাসের পরিবর্তে তুলনামূলক অভিজ্ঞ এনামুল হক বিজয়কে উড়িয়ে নেওয়া হলেও লঙ্কানদের বিপক্ষে মাঠে নামানো হয়নি তাঁকে। সব মিলিয়ে পরের ম্যাচের জন্য একটা বার্তা এটা।
পথরেখা/আসো