পথরেখা অনলাইন : বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার গত রবিবার বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। একাধিক সুযোগ পেলেও ম্যাচটা জিততে পারেনি জাম,াল ভুইয়ার দল। ৭ সেপ্টেম্বর প্রীতি সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। একই ভেন্যুতে ম্যাচটি শুরু হবে বিকাল ৫টায়। প্রথম ম্যাচে না হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে চোঁখ স্বাগতিক দলের। যদিও একইদিনে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে ক্রিকেট দল জিতে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে জায়গা করে নিয়েছে। সেই জয়ের পর এবার ফুটবলে জিতে মাঠ ছাড়তে চায় হ্যাবিয়ের কাবরেরার দল। ফিফা প্রীতি ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেখ মোরসালিন-রাকিব হোসেনরা সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন। তবে দ্বিতীয় ও শেষ প্রীতি ম্যাচে আর আগের ভুল করতে চাইছে না। প্রথম ম্যাচের পর ফিনিশিং নিয়ে তারা কাজ করেছে। অনুশীলনে কোচ কাবরেরা আক্রমণভাগে আরও জোর দিয়েছেন। দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন অনুশীলন শেষে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘প্রথম ম্যাচে ব্যর্থতার পর সেট পিস ও অন্যান্য দিক নিয়ে কাজ হয়েছে। ওরা প্রথমার্ধে কিছু বদল করে খেলেছে। আমরাও সামনের দিকে সেভাবে তাদের বিপক্ষে খেলার চেষ্টা করবো। আমরা এখন লড়াই করতে জানি।’
তবে প্রথম ম্যাচের ভুল আর তারা করতে চান না। মামুনের প্রত্যাশা মোরসালিন-রাকিবরা প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে, ‘গত ম্যাচগুলোতে একটা সিস্টেমে খেলতে পেরেছি। সমীহ আদায় করেছি। আফগানিস্তান দলে কিছু নতুন খেলোয়াড় ঢুকবে। অধিনায়কও খেলবে। আমরা সেভাবে খেলবো। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মালদ্বীপ ম্যাচকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। মোরসালিন-রাকিবরা জানে তাদের ভুল কোথায় ছিল। আশা করি, একই ভুল তারা বার বার করবে না। ম্যাচে ভালো করতে পারবে।’ বাংলাদেশের খেলার ফর্মেশনে এখন আর নম্বর নাইন কেউ নেই। হাসান আল মামুন বলেছেন, ‘দলের এখনকার ফর্মেশনে নম্বর নাইন নেই। টোটাল ফুটবলে যে কেউ গোল করবে। যে বল পাবে সে যেন শেষ করতে পারে। যতটুকু শক্তি আছে সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করবো।’ মোদ্দকথা নাম্বার নাইন না থাকলেও জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে দল।
তবে একটা অস্বস্থি রয়ে গেছে জামাল ভুইয়াকে নিয়ে। ৭০ মিনিটের পারফরমার বাংলাদেশ কাপ্তান, এমন কথা এখন দেশের ফুটবলে কা পাতলেই শোনা যায়। এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জাতীয় দলে খেলছেন ২০১৩ সাল থেকে। লাল-সবুজ জার্সিতে সবচেয়ে বেশি ৭৬ ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে ৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলারের। ৭৬ ম্যাচে তার গোল একটি। ২০১৮ সাল থেকে মাঠে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন জাতীয় দলকে। অনেকের মতে, জামাল ভূঁইয়ার পারফরম্যান্স ভাটার দিকে। ৯০ মিনিট মাঠে খেলার শারীরিক সামর্থ্য এখন তার আর নেই। জাতীয় দলের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচ এবং শেষ হওয়া ঘরোয়া মৌসুমে জামাল ভূঁইয়ার পারফরম্যান্সের গ্রাফই বলে দিচ্ছে কোথায় দাঁড়িয়ে তিনি। ঘরোয়া ফুটবল হোক কিংবা জাতীয় দল, জামাল ভূঁইয়া এখন সর্বোচ্চ ৭০ মিনিটের খেলোয়াড়। গত ফুটবল মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ মিলিয়ে ৩১টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে লিগের ২০টি। বাকি ১১ ম্যাচ স্বাধীনতা ও ফেডারেশন কাপে। জামাল ভূঁইয়া লিগের একটি ম্যাচে দলে ছিলেন না কার্ড সমস্যায়। অন্য ম্যাচগুলোতে তিনি স্কোয়াডে থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটা সময় গিয়ে তাকে বসিয়ে দিয়েছেন কোচ।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২০ ম্যাচের একটিতে সাসপেন্ড ছিলেন। বাকি ১৯ ম্যাচের একটিতে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। ২০ জানুয়ারি লিগের ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে জামালকে একাদশের বাইরে রেখেছিলেন রাসেলের কোচ। ৬৮ মিনিটে মো. সোহেল রানার বদলি হিসেবে অধিনায়ককে মাঠে নামিয়েছিলেন কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। প্রিমিয়ার লিগের ১৬ ম্যাচেই জামাল ভূঁইয়াকে পরিবর্তন করেছেন কোচ। তিনি শেখ রাসেলের জার্সিতে লিগে খেলেছেন গড়ে ৭২ মিনিট করে। কোনো গোল নেই। ঘরোয়া ফুটবলে জামালকে নিয়ে তাই আগ্রহ নেই কোনো ক্লাবের। সমর্থকপুষ্ঠ মোহামেডান-আবাহনীর মতো ক্লাব কখনো তাকে পাওয়ার আগ্রহ দেখায়নি। এবারতো কোন ক্লাবই চায়নি তাকে নিতে। শেষ পর্যন্ত শেখ রাসেলে ৩০ ভাগ পারিশ্রমিক কমিয়ে খেলার অঙ্গীকার করেছিলেন জামাল। পরে তিনি যোগ দিয়েছেন আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিভাগের ক্লাব সোল দ্য মায়োতে। গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ খেলেছে ৪ ম্যাচ। এর মধ্যে গ্রুপপর্বে ভুটানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে জামালকে ৯০ মিনিট খেলিয়েছিলেন কোচ ক্যাবরেরা। গ্রুপের অন্য দুই ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে ৫৭ মিনিটে তাকে বসিয়ে মো. হৃদয়কে ও মালদ্বীপের বিপক্ষে ৬৩ মিনিটে তাকে উটিয়ে দেয়।
বদলি হিসেবে মোরসালিনকে নামিয়েছিলেন কোচ। সেমিফাইনালে কুয়েতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও জামালকে পূর্ণ সময় মাঠে রাখতে পারেননি ক্যাবরেরা। ৬৯ মিনিটে জামালকে বসিয়ে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে মাঠে নামান তিনি। সাফে চার ম্যাচে তিনি খেলেছেন ২৭৯ মিনিট। যার গড় ৭০ মিনিট। সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের ৬০ মিনিটে জামালকে বসিয়ে দেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। প্রায় প্রতি ম্যাচে অধিনায়ক বদল। মাঠে দাঁড়িয়ে আর্মব্যান্ড পরিবর্তন, বাংলাদেশ দলে এমন দৃশ্য এখন নিয়মিত। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবলের শেষ ম্যাচগুলোতে পরিষ্কার জামালের ৯০ মিনিট খেলার শারীরিক সামর্থ্য নেই। বল রিকভারির সক্ষমতা নেই বললেই চলে। এসব পরিসংখ্যান আর আগামীতে সময়মতো তাকে না পাওয়ার অনিশ্চিয়তা মিলে টিম ম্যানেজমেন্ট অধিনায়ক হিসেবে জামাল ভূঁইয়ার বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। জামালও নিশ্চিতভাবে চাইবেন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দলে জায়গা পাকা করতে।
পথরেখা/আসো