পথরেখা অনলাইন : আলোচনার কেন্দ্রে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবার শেষবারের মতো সুযোগ পেলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সারির বাংলাদেশ দলে নেওয়া হয়েছে সাবেক অধিনায়ককে। এছাড়া সৌম্য সরকারকেও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মূলত বিশ্বকাপের দল গড়তে তাদেরকে বাজিয়ে দেথতেই এমনটি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় দলে যাওয়া-আসার মধ্যে থাকলেও অভিষেকের পর একটা আইসিসি টুর্নামেন্টও সৌম্য সরকার মিস করেননি। এবার যেন বিশ্বকাপের ঠিক আগেই সৌম্য সরকার আরেকটা ‘লাইফ লাইন’ পেলেন। সুযোগ পেলেন আসন্ন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্য সরকার সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন গত বছরের নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া সেই বিশ্বকাপের পর বিরতি ১০ মাসের। বাংলাদেশ এই সময়ে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, টেস্ট এই তিন সংস্করণ মিলে খেলেছে ৩২ ম্যাচ। সৌম্যর কোনো ম্যাচ খেলা তো দূরে থাক, কোনো সিরিজের দলেই ডাক পাননি। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেললেও তিনি ছিলেন অনুজ্জ্বল। এ বছরের বিপিএলে তিনি ঢাকা ডোমিনেটরসের হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৭৪ রান। করেছেন একটা মাত্র ফিফটি। বিপিএলের পর তিনি সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়েও বলার মতো কিছু করতে পারেননি। দলের শেষ ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন যদিও।
আর এতে করে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়েছেন আরও একবার। এ বছর শ্রীলঙ্কায় হওয়া ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপেও ‘শনির দশা’ তাঁর পিছু ছাড়েনি। তরুণদের ভিড়ে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়েও নিজেকে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। ৪ ম্যাচে ১০৪.৩৯ স্ট্রাইকরেটে ৯৫ রান করলেও সেটি দলের জয়ে তেমন অবদান রাখেনি। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চাওয়ায় এশিয়া কাপের আগে বিসিবির বিশেষ ক্যাম্পে তিনি ছিলেন। বিশ্বকাপের ঠিক আগে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে লোয়ার মিডল অর্ডার। ৬-৭ উইকেট পড়ে গেলে ৫০ ওভার খেলাই যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে বাংলাদেশের জন্য। মেহেদী হাসান মিরাজ ‘নাম্বার সেভেন’ ব্যাটার হিসেবে পরিচিতি পেলেও এই পজিশনে মাত্র এক ম্যাচ খেলেছেন। এই জায়গায় সুযোগ পেয়েও নিজেকে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব, শামীম হোসেন পাটোয়ারীর মতো তরুণ ব্যাটাররা। লোয়ার মিডল অর্ডারে সমাধান খুঁজতেই অভিজ্ঞ সৌম্যকে পরখ করতে চাইছেন হাথুরু।
ওপেনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পুরোনো জায়গায় ফেরার সুযোগ নেই তাঁর। তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তর মতো ক্রিকেটাররা আছেন এই পজিশনে। জাতীয় দলে সৌম্যর পথচলা শুরু হয়েছিল ধ্রুবতারার মতো। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। এক ম্যাচ খেলেই তিনি ডাক পেয়ে যান ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে। এই বিশ্বকাপ দিয়েই অন্যভাবে নিজেকে চেনানো সৌম্য ২০১৫ সালটা স্মরণীয় করে রেখেছিলেন। বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। ২০১৬ থেকেই তিনি যেন খেই হারিয়ে ফেলেন। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হতে পারেননি নিয়মিত। তবে সুযোগ পেয়েছেন অসংখ্য। এবার আরেকটি সুযোগ তাঁর সামনে। সৌম্য কি পারবেন এটিকে ‘ক্যারিয়ার সেভিং চান্স’ হিসেবে কাজে লাগাতে? এদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সামনে স্লগ ওভারের পরীক্ষা সামনে চলে এসেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের দলে ব্যাপক রদবদলে গুঞ্জনের ডালপালা মেলেছে। বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে ঘোষিত দলে রাখায় ক্রিকেট অনুরাগীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুখরোচক আলোচনার সুযোগ পেয়ে গেছেন। কেউ কেউ তো বিশ্বকাপ দলে বড় পরিবর্তনের সুযোগ দেখছেন।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়দের পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিশ্বকাপ দলে বড় কোনো পরিবর্তনের সুযোগ নেই। মূলত একটি জায়গার জন্য লড়াই হবে মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকারের মধ্যে। কারণ বিশ্বকাপ দলের বাকি ১৪ জন ঠিক হয়ে আছে। ক্রিকেটারদের চোট মুক্ত রাখতে নিয়মিত দলের ছয়জনকে বিশ্রাম দিয়েছে বিসিবি। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলামকে কিউইদের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচের দলে রাখা হয়নি। লিটন কুমার দাসের নেতৃত্বে তামিম ইকবালরা ভালো করলে শেষ ম্যাচেও হয়তো খেলবেন না তারা। মূলত এই ছয় ক্রিকেটারের শূন্যস্থান পূরণ করতে পুল থেকে ক্রিকেটার নেওয়া হয়েছে। যেখানে এনামুল হক বিজয়, নুরুল হাসান সোহানকে নেওয়া হয়েছে। এভাবে বিশাল পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, ‘বিশ্বকাপ ভাবনা, বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ মাথায় রেখে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কিছু ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পাঁচ-ছয়জন খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেওয়ায় তাদের জায়গায় কাউকে না কাউকে তো নিতে হতো। নির্বাচকরা সেদিক থেকে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়েছেন। আর পেস বোলারদের বিশ্রাম দেওয়া খুবই প্রয়োজন ছিল। প্রায় সব দেশের পেস বোলাররা চোটে পড়ছে। বিশ্বকাপ অনেক লম্বা জার্নি, দেড় মাসের মতো খেলতে হবে’।
পথরেখা/আসো