পথরেখা অনলাইন : বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতির সর্বশেষ আসরে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। বৃহস্পতিবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। দুই দলই গুরুত্বপূর্ণ একাধিক খেলোয়াড়কে বিশ্রামে রেখে এই সিরিজ খেলতে নামছে। সাকিব আল হাসানের জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেবেন লিটন দাস। এছাড়া তাসকিন আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদরা থাকছেন না এই সিরিজে। বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিতেই এমনটি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যেমন করে নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের বদলে মাঠের নেতৃত্ব দেবেন লকি ফার্গুসুন। আর বিশ্বকাপের আগে জয়ে চোঁখ রেখে মাঠে নামবে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। এশিয়া কাপ দল থেকে ১০ জন ক্রিকেটারকে নিউজিল্যান্ড সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ওই টুর্নামেন্টের সাতজন ক্রিকেটার আছেন এই সিরিজে। বৃহস্পতিবার মিরপুরে কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু এশিয়া কাপ থেকে ফিরে এই সিরিজের জন্য খুব বেশি অনুশীলনও করতে পারেননি বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। বুধবার দুপুরে মিরপুরে আনুষ্ঠানিক অনুশীলনের কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মাঠে আদর্শ অনুশীলন করা কঠিন হতে পারে লিটন দাস-তামিম ইকবালদের জন্য।
মঙ্গলবারের মতো এদিনও ইনডোরে হয়তো নিজেদের একটু ঝালিয়ে নেবেন তাঁরা। মূল সারির ক্রিকেটাররা বিশ্রামে, মাঠে সেভাবে অনুশীলনও হয়নি। এশিয়া কাপে যাঁরা খেলেছিলেন, সেটি ছিল তাঁদের প্রস্তুতি। তবে কিউইদের বিপক্ষে অনাড়ম্বর প্রস্তুতির সিরিজে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী? এ ব্যাপারে এই সিরিজে বাংলাদেশ দলের অন্তবর্তীকালীন অধিনায়ক লিটন জানিয়েছেন, লকি ফার্গুসনদের বিপক্ষে ‘বুদ্ধির খেলা’ খেলতে চান তাঁরা। মিরপুরে সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলেছেন, ‘এত বড় দলের বিপক্ষে কাজ করার তো কোনো সুযোগ নেই। যা চিন্তা-ভাবনা মানসিকতা দিয়ে করা লাগবে। মাইন্ড গেমের খেলাই আমাদের খেলতে হবে। দেখি কতটুকু সফল হওয়া যায়। আমরা প্র্যাক্টিক্যালি কোনো কিছু করতে পারিনি। গত দুই দিন অনুশীলন করতে পারিনি। জানি না আজকে কতটুকু করতে পারব। অনুশীলন ছাড়াই হয়তো মূল ম্যাচ খেলতে হতে পারে। মানসিকভাকে ঠিক থাকতে হবে।’ নিজেদের মাঠে ২০১০ ও ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডকে দুটি সিরিজে ধবল ধোলাই করেছে বাংলাদেশ। তবে এবারের সিরিজ বাংলাদেশের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষারও।
এই সিরিজ দিয়ে অনেক দিন পর দলের ফিরলেন তামিম ইকবাল। চোট ও ফর্মের সঙ্গে লড়াইটা তাঁর। বিশ্বকাপের আগে রানে ফিরতে হবেএই বাঁহাতি ওপেনারকে। সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ফিরেছেন অনেক দিন পর। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে হলে সৌম্য-রিয়াদদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিরিজও এটি। দারুণ কিছু করতে হবে তাঁদের। জয়ের চেয়েও এই সিরিজের আরেকটা লক্ষ্য যেন কিছুটা ব্যক্তিগত অর্জনেরও। তবে অধিনায়ক লিটন সেটি মনে করেন না। যদিও তিনি নিজেও নেই ফর্মে। এ প্রসঙ্গে লিটন আরও বললেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না শুধু ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য। আমি যখন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি, আমার লক্ষ্য থাকবে প্রথমে ম্যাচ জেতা। স্বাভাবিক বিষয় খেলোয়াড়দের বাংলাদেশের হয়ে একই জিনিসই লক্ষ্য থাকবে। আপনি ১০০ করলেন, পাঁচ উইকেট পেলেন, দিন শেষে ম্যাচ না জিতলে ওই মূল্য থাকে না।’ লিটন এটিও মনে করিয়ে দিলেন, একইদিন বা সিরিজে সবাই পারফর্ম করতেও পারে না। দুই-একজন অবদান রাখবে। অন্তর্বতীকালীন অধিনায়ক বলেন, ‘অবশ্যই সব খেলোয়াড়ই চাইবে পারফর্ম করতে। আবার আপনি একদিনে সবাইকে পারফর্ম করাতেও পারবেন না। হয় তো এক-দুজন পারফর্ম করবে, এটাই ক্রিকেট, এটাই হবে, এটাই হয়ে আসছে। সবার চেষ্টা থাকবে পারফর্ম করা। যেদিন যার ভাগ্য ভালো থাকবে পারফর্ম করবে’।
এদিকে বাংলাদেশের স্পিনে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে নিউজিল্যান্ড। কয়েকবার আউট তো হলেনই, স্পিন খেলতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে একবার মাটিতেও পড়ে গেলেন ট্রেন্ট বোল্ট। স্মৃতিপটে তখন এক দশকের বেশি সময় আগের দুটি সিরিজ। ২০১০ ও ২০১৩ সালের সেই দুই ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিক স্পিনারদের বিপক্ষে খাবি খাচ্ছি অবস্থা সফরকারী নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের। দুই সিরিজেই ধবলধোলাই কিউইরা! আরেকটি সিরিজের আগে সেই দুঃস্মৃতি ভুলে যাওয়ার কথা নয় নিউজিল্যান্ডের! সেটি মাথায় রেখেই কিনা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে স্পিন জুজু কাটানোর চেষ্টা দেখা গেল সফরকারী দলের। স্পিন বেশ ধরে বলে অনেক অতিথি দলের কাছে ‘বাঘের ডেরা’র মতো পরিচিতি মিরপুরের। একবার পা রাখলে যেখানে বাঘের শিকার হতে হয়! বেশ লম্বা একটা সময় ধরে স্পিনের বিপক্ষে নেট অনুশীলন করলেন উইল ইয়ং-টম ব্লান্ডেলরা। স্পিনের বিপরীতে গুরুত্বসহকারে নেটে ব্যাট করতে দেখা গেল এলএন্ডার ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, কাইল জেমিসনদের। এবার সিরিজের পরিণতি কী হবে, সেটা সময়ই বলবে। তবে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। বিশেষ করে ৫ অক্টোবর ভারতে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে যেসব ব্যাটারের ওপরই নির্ভর করবে নিউজিল্যান্ড, তাদের বেশির ভাগই নেই এবারের বাংলাদেশ সফরে। তবে সফরে থাকা টেলএন্ডারদেরই দেখা যাবে বিশ্বকাপে। আর ভারতের স্টেডিয়ামগুলোর উইকেট সাধারণত হয়ে থাকে স্পিনসহায়ক।
বাংলাদেশের মাটিতে পরিসংখ্যানও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। দুই দলের ১৩ ওয়ানডের ৮টিতেই হেরেছে কিউইরা। ৬ টি-টোয়েন্টির তিনটিতে জয় ও তিনটিতে হার। ২০১০ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবার ধবলধোলাই হয়েছিল কিউইরা। সেবার চার ওয়ানডেতে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা, ৯ উইকেট নিয়েছিলেন পেসাররা। ২০১৩ সালে ৩ ওয়ানডের সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। পেসাররা নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। সফরকারী দলের বিপক্ষে স্পিনারদের রাজত্ব ছিল ২০২১ সালে হওয়া পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। সেই সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন স্পিনাররা, পেসাররা নিয়েছিলেন ১৫ উইকেট।
পথরেখা/আসো