বিশেষ প্রতিবেদন : বিশ্বকাপের দলে সুযোগ না পাওয়া তামিম ইকবালকে নিয়ে যেন আলোচনা থামছেইনা। বাংলাদেশ দল যখন গৌহাটি যাওয়ার জন্য বিশেষ বিমানে ওঠার অপেক্ষায় তখনি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে অব্যহতি দিয়ে তামিমকে দলে নিতে এমন নোটিশ করা হয়েছে। এদিকে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা বাংলাদেশ দল বিমানে ওঠার পর সর্ব সাধারনকে জানাতে এই বাহাতি ব্যাটসম্যান। এছাড়া তাকে দলে না নেওয়ার পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও আলোচনা চলছে। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে নিজের চোট নিয়ে সংশয়ের কথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) জানিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। এরপর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে গুঞ্জন ওঠে, ‘আনফিট’ তামিমকে চান না সাকিব আল হাসান ও চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সেই গুঞ্জনই সত্যি হয়েছে অঅর শেষ দল হিসেবে যখন বিসিবি অভিনবত্বের মাধ্যমে বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে, তখন তামিমকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা ভিন্ন কিছু জানিয়েছেন। সর্বশেষ চার বিশ্বকাপে খেলা দেশসেরা ওপেনারকে বাদ নয়, তামিম নিজেই দলে থাকতে চাননি বলে জানিয়েছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাশরাফি।
সাবেক অধিনায়ক বলেছেন, ‘একটা তথ্য হয়তো সবাই ভুল দিচ্ছে, তামিমকে বাদ দিয়েছে। আসলে সত্য হলো, তামিম দলে থাকতে চায়নি। দলে না রাখা আর থাকতে না চাওয়ার ব্যবধান অনেক। আমার মনে হয় এতটুকু সম্মান তামিমের প্রাপ্য।’ তবে তামিম কেন দলে থাকতে চাননি, তার উত্তর মাশরাফির কাছে নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। উত্তরটা শুধু তামিম দিতে পারবেন বলে সবশেষ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ বলেছেন, ‘এখন প্রশ্ন হতে পারে, তামিম কেন দলে থাকতে চাইল না। আসলে সে উত্তর আমার কাছে নেই। সেটা একমাত্র তামিমই বলতে পারে।’ গত ৬ জুলাই হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন তামিম। পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ক্রিকেটে ফিরলেও বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়েই নিলেন তিনি। অবসর ভেঙে খেলায় ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর যতটা না অবদান ছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি অবদান ছিল মাশরাফির। কিন্তু এবারও বিসিবির সঙ্গে তামিমের বৈঠকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকলেও বাংলাদেশের ওপেনারকে বিশ্বকাপে ফেরাতে পারলেন না তিনি।
২০০৭ সালে সাকিব বিশ্বকাপের ট্রেনে উঠেছিলেন। এরপর ২০১১, ২০১৫, ২০১৯ সালের পর ২০২৩-এর ঠিকানায় এসে পৌঁছেছে। একই ট্রেন ধরেছিলেন তামিম ইকবাল। সাকিবের মতো আগের তিন গন্তব্য অতিক্রম করেছেন একই ছন্দে। কিন্তু ২০২৩ এ এসে লাইনচু্যত হয়ে গেলেন! সমান্তরাল লাইনে মুশফিকুর রহিম আছেন সাকিবের সঙ্গী হয়ে। পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় থাকা তামিম নেই ভারত বিশ্বকাপে। যার নেতৃত্বে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে দুর্দান্ত খেলে সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ, সেই তিনিই নেই ১৫ জনের স্কোয়াডে। অথচ গত মাস তিনেক আগেও তাকে নিয়েই যত স্বপ্ন দেখা হয়েছিল। কিন্তু চোট, ফিটনেস এবং তার অবসর কান্ডে সব ওলটপালট। তামিম লাম্বার ফোর ও লাম্বার ফাইভের সংযুক্ত ডিস্কে দুটি ইনজেকশন নিয়েছিলেন গত আগস্টে। এরপর ফিরে এসে বিশ্বকাপে খেলার লড়াই চালাচ্ছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯০ মিনিট ক্রিজে থেকে ৪৪ রান করেছিলেন। ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাস পেলেও ফিটনেসে অস্বস্তি ছিল তার। তাতেইসব ওলটপালট।
ফিটনেসের কারণেই তামিম বাদ পড়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। মঙ্গলবার নির্বাচক প্যানেলের সংবাদ সম্মেলন হয়েছে মিনিট পনেরর মতো। পুরো সংবাদ সম্মেলন জুড়েই ছিলেন তামিম। দেশসেরা ওপেনারকে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠেও যেতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তবে তামিমকে নিয়ে খুব বেশি কথা বলেননি। সব কথায় ঘুরে ফিরে এসেছে তার ফিটনেস। বিশ্বকাপের সফর বেশ লম্বা। বাংলাদেশ নয় ম্যাচ খেলবে ছয় ভেনু্যতে। লম্বা সময়ের এই বিশ্বকাপে মনযোগ ধরে রাখা, ফিটনেস ঠিক রাখা কঠিন কাজ। বর্তমানে তামিমের যে ফিটনেস তাতে তার টিকে থাকা কঠিন হয়ে যেত। গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, তামিম নিজেও পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে রাজি ছিলেন না। সাকিব এমন কথা শোনার পর আনফিট তামিমকে বিশ্বকাপে নিতে চাননি! এমন কথা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচকও, ‘আমরা এ ধরণের জিনিস জানি না। মিডিয়ায় অনেক কিছু দেখেছি কিন্তু এ ধরণের কোনো তথ্য আমাদের কাছে ছিল না।’ তবে তামিমকে দলে না রাখার প্রক্রিয়াতে সাকিব যুক্ত ছিলেন তা নিশ্চিত করেছেন তিনি, ‘তামিমের বিষয়ে মেডিকেল টিমের সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যেখানে টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে অধিনায় আছে, হেড কোচ আছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করা হয়’।
পথরেখা/আসো