মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : নানা কারণেই প্রতিনিয়তই বিতর্কের মধ্য দিয়ে পথ চলতে থাকেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তার প্রভাব মাঠের ক্রিকেটে এতটুকুও পড়েনা। এই যেমন এশিয়া কাপ চলাকালীন ভারত ম্যাচের আগে বিরতি পেয়ে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন। রাজধানীতে শো রুম উদ্বোধনের কাজ থাকায় তার এই ছুটি নেওয়া। এরপর ভারত ম্যাচে ৮২ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশে ফিরে বিশ্বকাপের দল ঘোষনার আগে ও পরে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেলেও সাকিব যেন নিরুত্তোর ছিলেন।
শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এবারের মিশন। সেখানে নিশ্চিতভাবেই দলটির অন্যতম ভরসার নাম এই সাকিব। মূলত বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্স বিবেচনায় এমনটি করা হচ্ছে। অনেকেই বলে থাকেন, বিশ্বকাপ মানেই আগুনে সাকিব। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ। ক্রিকেট দুনিয়াকে চমকে দেয় বাংলাদেশ দল। পোর্ট অব স্পেনে শিরোপাপ্রত্যাশী ভারতকে অনায়াসে হারায় তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে লক্ষ্য তাড়ায় হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন বাংলাদেশের তিন তরুণ ব্যাটার।
তাদের একজন এই সাকিব আল হাসান। সেসময় তার বয়স ছিল ২০ ছুঁইছুঁই। ১৬ বছরের ব্যবধানে সেই সাকিবের নেতৃত্বে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠেয় এবারের বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাঝে আরও একবার তিনি বিশ্বকাপে দলের অধিনায়কত্ব করেছিলেন। ২০১১ সালের ওই আসরের সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশও। দেশের মাটিতে সেবার অবশ্য ভক্ত-সমর্থকদের ভীষণ হতাশ করেছিল দল। বাদ পড়ে গিয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকেই। মাঠের বাইরের নানা ঘটনার কারণে এবার পরিস্থিতি বাংলাদেশের পুরোপুরি অনুকূলে নেই। সেসব দূরে ঠেলে সাকিবের নেতৃত্বে এই দফায় বিশ্বকাপে দল ভালো কিছু উপহার দেবে- এমন প্রত্যাশা থাকছেই। আর সাকিব নিজেই থাকছেন বাকিদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে। ইংল্যান্ডে আয়োজিত গত ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সাকিবের যে পারফরম্যান্স ছিল, সেটা অনন্য। তেমন কিছু আগে কখনোই দেখা যায়নি ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরের মঞ্চে।
এখন কেবল তা-ই নয়, টানা পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া সাকিব ব্যাটিং ও বোলিং- দুই বিভাগের অর্জনেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে শীর্ষে। বিশ্বকাপের এক আসরে অন্তত ৬০০ রান করা ও ১০ উইকেট নেওয়া একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব। ২০১৯ সালে ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান তোলার পাশাপাশি ৩৬.২৭ গড়ে ১১ উইকেট পান তিনি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক সাকিব। ২৯ ম্যাচে ৪৫.৮৪ গড়ে তিনি করেছেন ১১৪৬ রান। তার স্ট্রাইক রেট ৮২.২৬। দুটি সেঞ্চুরির সঙ্গে ১০টি ফিফটি আছে তার। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। ২৯ ম্যাচে ৩৫.৯৪ গড়ে ও ৫.১১ ইকোনমিতে ৩৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। একবার করে পেয়েছেন ৪ উইকেট ও ৫ উইকেট। বিশ্বকাপে অন্তত ৫০ রানের ইনিংস সবচেয়ে বেশিবার খেলার তালিকায় যৌথভাবে দুইয়ে আছেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার পাশাপাশি তিনিও ১২ বার এই স্বাদ নিয়েছেন। ২১ বার কমপক্ষে ৫০ রানের ইনিংস খেলে শীর্ষে আছেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। বিশ্বকাপের এক আসরে অন্তত ৫০ রানের ইনিংস সবচেয়ে বেশিবার খেলার তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে আছেন সাকিব।
গত ২০১৯ সালে তিনি সাতটি পঞ্চাশোর্ধ্ব (দুটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি ফিফটি) ইনিংস খেলেছিলেন। তার আগে ২০০৩ সালের আসরে শচীন খেলেছিলেন সমানসংখ্যক পঞ্চাশোর্ধ্ব (একটি সেঞ্চুরি ও ছয়টি ফিফটি) ইনিংস। বিশ্বকাপের একই ম্যাচে ফিফটি করা ও ৫ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় খেলোয়াড় সাকিব। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫১ রানের ইনিংস খেলার পর ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এর আগে ২০১১ সালের আসরে ভারতের যুবরাজ সিং ৩১ রানে ৫ উইকেট দখলের পর ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগারের মালিক সাকিব। ২০১৯ সালে আফগানদের বিপক্ষে ১০ ওভারে একটি মেডেনসহ ২৯ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নেন তিনি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে ৫ উইকেট শিকারের প্রথম নজির গড়েন সাকিব (আফগানিস্তানের বিপক্ষে)। এই তালিকায় তিনি ছাড়া আছেন কেবল মুস্তাফিজুর রহমান (দুবার)। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ সালে টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেট করে পান তিনি। বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি আছে সাকিবের। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৪ রান করেন তিনি।
বিশ্বকাপে সাকিবের যত কীর্তি
-
বিশ্বকাপের এক আসরে অন্তত ৬০০ রান করা ও ১০ উইকেট নেয়া একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব। ২০১৯ সালে আট ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান তোলার পাশাপাশি ৩৬.২৭ গড়ে ১১ উইকেট পান তিনি।
-
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক সাকিব। ২৯ ম্যাচে ৪৫.৮৪ গড়ে তিনি করেছেন ১১৪৬ রান। তার স্ট্রাইক রেট ৮২.২৬। দুটি সেঞ্চুরির সঙ্গে ১০টি ফিফটি আছে তার।
-
বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। ২৯ ম্যাচে ৩৫.৯৪ গড়ে ও ৫.১১ ইকোনমিতে ৩৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। একবার করে পেয়েছেন ৪ উইকেট ও ৫ উইকেট।
-
বিশ্বকাপে অন্তত ৫০ রানের ইনিংস সবচেয়ে বেশিবার খেলার তালিকায় যৌথভাবে দুইয়ে আছেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার পাশাপাশি তিনিও ১২ বার এই স্বাদ নিয়েছেন। ২১ বার কমপক্ষে ৫০ রানের ইনিংস খেলে শীর্ষে আছেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার।
-
বিশ্বকাপের এক আসরে অন্তত ৫০ রানের ইনিংস সবচেয়ে বেশিবার খেলার তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে আছেন সাকিব। ২০১৯ সালে তিনি সাতটি পঞ্চাশোর্ধ্ব (দুটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি ফিফটি) ইনিংস খেলেছিলেন। তার আগে ২০০৩ সালের আসরে শচীন খেলেছিলেন সমানসংখ্যক পঞ্চাশোর্ধ্ব (একটি সেঞ্চুরি ও ছয়টি ফিফটি) ইনিংস।
-
বিশ্বকাপের একই ম্যাচে ফিফটি করা ও ৫ উইকেট নেয়া দ্বিতীয় খেলোয়াড় সাকিব। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫১ রানের ইনিংস খেলার পর ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এর আগে ২০১১ সালের আসরে ভারতের যুবরাজ সিং ৩১ রানে ৫ উইকেট দখলের পর ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন।
-
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগারের মালিক সাকিব। ২০১৯ সালে আফগানদের বিপক্ষে ১০ ওভারে একটি মেডেনসহ ২৯ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নেন তিনি।
-
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে ৫ উইকেট শিকারের প্রথম নজির গড়েন সাকিব (আফগানিস্তানের বিপক্ষে)। এই তালিকায় তিনি ছাড়া আছেন কেবল মোস্তাফিজুর রহমান (দুবার)। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ সালে টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেট করে পান তিনি।
-
বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি আছে সাকিবের। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৪ রান করেন তিনি।
-
বিশ্বকাপের এক আসরে অন্তত ৬০০ রান করা ৫ ক্রিকেটারের তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন সাকিব। বাকি চারজন হলেন ভারতের শচীন (৬৭৩ রান, ২০০৩ সালে), অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেন (৬৫৯ রান, ২০০৭ সালে), ভারতের রোহিত শর্মা (৬৪৮ রান, ২০১৯ সালে) ও অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার (৬৪৭ রান, ২০১৯ সালে)।
-
বিশ্বকাপের এক আসরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাকিব (৬০৬ রান)। দুইয়ে আছেন মুশফিকুর রহিম। ২০১৯ সালে তিনি আট ম্যাচে ৫২.৪২ গড়ে ৩৬৭ রান করেন।
-
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। তিনি, মুশফিক ও তামিম ইকবাল খেলেছেন সমান ২৯টি করে ম্যাচ।
পথরেখা/আসো