পথরেখা অনলা্স্পইন : ফুটবলে অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রাক বাছাইপর্বের ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হবে। বিশেষ করে তপু বর্মন, শেখ মোরসালিনের মতো ইনফর্ম খেলোয়াড়দের বাইরে রেখে দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে গেছে জামাল ভুইয়ার দল। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে খেলতে এই মালেতে গিয়েছিল খেলোয়াড়রা। সেখান থেকে ফেরার পথে বিমানবন্দর থেকে টোল ফ্রি মদ বহন করার দায়ে কিংস কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষনা করে তাদের। বাচা-মরার এই ম্যাচের জন্য তাই বেশকিছু নতুন খেলোয়াড়কে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই ম্যাচ জিতলে কোটি টাকা বোনাসও ঘোষনা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। তাই জয়ের পাশাপাশি বড় রকমের বোনাস জয়েরও সুযোগ রয়েছে তাদের। ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ ফুটবল ফাইনালে মালদ্বীপকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর দুই দেশের লড়াই হলেও বাংলাদেশ হেরেই চলেছিল। শেষ পর্যন্ত ২০ বছর পর মালদ্বীপকে হারায় বাংলাদেশ। বেঙ্গালুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৩-১ গোলে জিতেছিল জামাল ভূঁইয়ারা।
এবার আবারও মালদ্বীপের বিপক্ষে লড়াই। মিশন ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্ব। মালে স্টেডিয়ামে অ্যাওয়ে ম্যাচে লড়বে লাল সবুজের দল। এরপর ১৭ অক্টোবর বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় জামালদের হোম ম্যাচ। দুই ম্যাচে যারা এগিয়ে থাকবে তারাই প্রথম পর্ব পেরিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাবে। বাংলাদেশ জাতীয় দল মালেতে ম্যাচের আগের দুদিন হালকা অনুশীলন করে লড়াইয়ে নামবে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। ১৯৮৬ সাল থেকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলছে বাংলাদেশ। প্রতি আসরেই হতাশাজনক ফলাফলে মিশন শেষ করেছে। এবারও একই পুনরাবৃত্তি ঘটবে, এ নিয়ে সংশয় নেই। তবে বাংলাদেশের টার্গেট মালদ্বীপকে হারিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া। ঢাকা ছাড়ার আগে কোচ ক্যাবরেরা সে রকমই প্রত্যাশার কথা বললেন।
অধিনায়ক জামাল ভুইয়া নিজেদের পরিকল্পনার সম্পর্কে ম্যাচের আগেরদিন বলেন, ‘মালদ্বীপ অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। আমার দলে নির্ভরযোগ্য অন্তত তিন ফুটবলারকে নেওয়া হয়নি বিশেষ কারণে। তারপরও বলব সেরা খেলাটা খেলতে পারলে মালদ্বীপের মাটিতেই মালদ্বীপকে হারানো সম্ভব। অবশ্যই আমরা চাইব মালদ্বীপকে হারিয়ে সুবিধাজনক স্থানে থাকতে। আমাদের সেই সামর্থ্য রয়েছে।’ বিশ্বকাপ ২০২৬ এর বাছাই পর্বের রাউন্ড-১ এর অ্যাওয়ে ম্যাচ। সবার নজর এখন অ্যাওয়ে ম্যাচে-মালেতে কি করবে বাংলাদেশ? এক সময় ছিল মাঠে নামলেই মালদ্বীপকে হারাতো বাংলাদেশ। জয়ের ব্যবধানও হতো বড়। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে পরপর দুই সাফ গেমসে মালদ্বীপের বিপক্ষে জয় ছিল ৫-০ ও ৮-০ গোলে। সেই মালদ্বীপ এখন বাংলাদেশের কঠিন আর প্রবল এক প্রতিপক্ষ। টানা হারের বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে মালদ্বীপ উল্টো বাংলাদেশকে হারাতে শুরু করে ১৯৯৯ সাল থেকে। তারপর দুই দেশের লড়াই মানেই ফিফটি ফিফটি সম্ভাবনা।
কখনো ম্যাচের ভাগ্য ঝুলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে, কখনো মালদ্বীপের। ২০২১ সাল থেকে দুই দেশ চারবার মুখোমুখি হয়েছে, দুটি করে ম্যাচ জিতেছে দুই দল। তবে বাংলাদেশ কখনো মালদ্বীপ গিয়ে তাদের হারাতে পারেনি। ২০০০ সালে প্রথম মালেতে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-মালদ্বীপ। গোল্ডেন জুবলি টুর্নামেন্টে ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল ম্যাচটি। ২৩ বছরে আরো ৩ বার মালেতে দেখা হয়েছে দুই দেশের। তিনবারই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫-০ গোলে হারিয়ে লজ্জা দিয়েছিল মালদ্বীপ। এটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় দ্বীপ দেশটির। ২০২১ সালে মালেতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে ও গত বছর মার্চে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে বাংলাদেশ ২-০ গোলে হেরেছিল। মালেতে মালদ্বীপকে কখনো হারাতে না পারার এই বৃত্ত ভেঙ্গে বাংলাদেশ কি জয়ের দরজা খুলতে পারবে? জিতলে কেবল একটা গিট্টুই খুলবে না বাংলাদেশের, বিশ্বকাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হবে।
মালে থেকে বাংলাদেশ জয় নিয়ে ফিরতে পারলে ঘরে ড্র করলেই উঠে যাবে বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়ারা মালদ্বীপের মাটিতে প্রথমবারের মতো তাদের হারানোর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে দ্বীপ দেশটিতে গেছে। বছরের সবচেয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করা এটিকে। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিততে চায়। জিততে হবেই তো। তাই তো বাফুফে সভাপতি এই ম্যাচের জন্য কোটি টাকা বোনাস ঘোষণা করেছেন। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে মিলিয়ে বাংলাদেশ যদি বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে যেতে পারে তাহলে ফুটবল দলের জন্য অপেক্ষা করছে এক কোটি টাকা বোনাস। এর আগে ১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনাল খেলার পুরস্কার হিসেবে অর্ধকোটি টাকার বেশি পেয়েছে ফুটবল দল। এবার আরো বড় পুরস্কারের হাতছানি। কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা দলের জন্য বড় অনুপ্রেরণা বলেই মনে করেন অনেকে। কেউ কেউ আবার পুরস্কার ঘোষণা ভালোভাবে নেয়নি। তাদের মন্তব্য ‘মালদ্বীপকে হারাতে যদি টাকা দিতে হয় তাহলে এই ফুটবল খেলে লাভ কি?’ সবকিছুর বাইরে এই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জয় পেলে তো কথাই নেই, যদি এক পয়েন্টও পায় তাহলে ঘরের মাঠে কিছুটা এগিয়ে থেকে মাঠে নামতে পারবে।
পথরেখা/আসো