• মৃণাল বন্দ্য
"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু ক্ষান্তিরূপেণ সংস্থিতা।”
"নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।”
"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু জাতিরূপেণ সংস্থিতা।”
"নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।”
প্রতিটি বাঙালি হিন্দু মানেই এই মন্ত্রের সুরে জেগে উঠে মন। মার চলে আসার সময় হয়ে এলো বাপের বাড়ি! বরণ ডালা নিয়ে তৈরি মেয়েকে স্বাগত জানাতে! চারদিকে আলোর রোশনাই, বেজে চলেছে ঢাক! এটা কেবল একটি উৎসব নয়, মিলনোৎসব বটে! স্নান সেরে নতুন জামা পড়ে মার সামনে অঞ্জলিতে দাঁড়ানো প্রতিটি বাঙালি হিন্দুর এক অন্য রকম আনন্দ। প্রতিটি বছর সবাই অপেক্ষায় থাকে এই মুহূর্তের জন্য। দশমীর দিন যেভাবে মা কাঁদিয়ে যায়, বছর ঘুরে এদিন সবার মুখে ফুটে উঠে হাসি আর আনন্দ।
দেবীপক্ষের সূচনা কিন্তু হয়ে গেছে। ২০ অক্টোবর "দুর্গাষষ্ঠী" এর মাধ্যমে জমে উঠবে শারদীয়া দুর্গাপূজা । সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই ৫ দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "দুর্গাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন সনাতনীরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। "
দুর্গার আগমন, প্রস্থানের বাহন ও তার ফলাফল নিয়ে বাঙালি সমাজে বহু কথা প্রচলিত আছে। দেবী দুর্গা ও তাঁর পুত্র-কন্যার নিজস্ব বাহন থাকলেও আগমন ও প্রস্থানের বাহনের কথা আলাদা করে পঞ্জিকায় উল্লেখ করা থাকে। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন নির্ধারণ করে মর্ত্যলোকে সারা বছর কেমন যাবে। প্রতিবছর দুর্গার আগমন ও প্রস্থান সাধারণত একই বাহনে হয় না। যদি কোনো বছর তেমন হয়‚ তাহলে তা খুবই অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। এ বছর দুর্গার আসা ও যাওয়া, দুটোই হবে ঘোড়ায়। ফলে আগামী এক বছর অশুভ প্রভাব থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শারদীয়া দুর্গাপূজাকে "অকালবোধন" বলা হয়। দুর্গাপুজোর সঙ্গে কত শতকের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এর নেপথ্যে কতই না লোক গাঁথা, পৌরাণিক গল্প আছে। পুরাণ অনুযায়ী বসন্তকাল হচ্ছে দেবী দুর্গার পুজো করার আসল সময়। কিন্তু রাবণকে বধ করার জন্য রামচন্দ্র দেবীর অকালে আবাহন করেন তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য। রাম যে দুর্গাকে পুজো করেছিলেন তাঁর দশটি হাত রয়েছে এবং তিনি মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। ফলে বরাবর আমরা যে উৎসবকে দুর্গোৎসব বলে জেনে আসছি সেটার আরেক নাম হল অকাল বোধন।
পূজোর এই কদিন মন ভরে যেমন মা দুর্গাকে পূজো করেন ভক্তরা, একই সাথে প্রার্থনা করেন সমগ্র মানবজাতির জন্য, এখানে কোন ভেদাভেদ নেই।
“সর্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।”
পথরেখা/আসো