পথরেখা অনলাইন : ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে যাওয়া শ্রীলংকার ক্রিকেট দলের যেন সুখবর বলতে কিছু নেই। ভারতের বিপক্ষে মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হওয়ার পর হারে ৩০২ রানের বড় ব্যবধানে। এরপরই চারিদিকে শোরগোল উঠে। শুরুতে বোর্ডের সেক্রেটারি পদত্যাগ করেন। এরপর ভেঙ্গে দেওয়া হয় পুরো বোর্ডই। এরপর অন্তবর্তীকালীন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স ১৯৯৬ সালের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার। সাত ম্যাচে মাত্র দুই জয়। তার ওপর ভারতের কাছে লজ্জাজনক হার। এমন হার মেনে নেওয়া কঠিন। দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী রোশান রানাসিংহে বিষয়টি মেনে নেননি। ক্রিকেট বোর্ডের সবাইকে বরখাস্ত করেছেন। বর্তমানে ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক রানাতুঙ্গাকে। ক্রীড়ামন্ত্রীর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ক্রীড়ামন্ত্রী রোশান রানাসিংহে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের অন্তবর্তী কমিটি গঠন করেছেন। সাত সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও একজন সাবেক বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
এর আগে ভারতের কাছে লজ্জাজনক হারের পর রানাসিংহে জনসম্মুখে পুরো বোর্ডের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কার বোর্ড কর্মকর্তাদের আর দায়িত্ব থাকার মতো নৈতিক অধিকার নেই। তাদের এখন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত। তার আগে তিনি বোর্ড কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। ভারতের কাছে হারের পর জনরোষ থেকে রক্ষার জন্য বোর্ডে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যদিও বিশ্বকাপের দিন কয়েক আগেই এশিয়া কাপের সেমিফাইনাল খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। সেই ম্যাচ জিতে ফাইনালেও উঠেছিল তারা। যদিও ফাইনালে একেবারেই হতাশ করেছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। হতাশার সেই ধারা বজায় রয়েছে বিশ্বকাপেও। ইংল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতলেও খুব বড় কিছু করা হয়নি তাদের। পুরাতন কমিটিকে বরখাস্তের পরপরই সাত সদস্যের নতুন একটি অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশটির ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৭৩ সালে প্রণীত শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া আইন অনুযায়ী ক্রীড়ামন্ত্রী এই নিয়োগ দিয়েছেন।
সাত জনের এই কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সাবেক প্রেসিডেন্ট উপালি ধর্মদাসা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এস আই ইমাম, রোহিণী মারাসিংহে ও ইরাঙ্গানি পেরেরা, আইনজীবী রাকিথা রাজাপক্ষে এবং ব্যবসায়ী হিশাম জামালদিন। যদিও বেশ কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট প্রশাসকদের ওপর বিরক্ত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী। বিরক্তি চরমে ওঠে বিশ্বকাপে একের পর এক ম্যাচে দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখার পর। তবে ভারতের বিপক্ষে বিশাল হারের পরেই চলমান বোর্ডকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ক্রীড়ামন্ত্রী এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের গভর্নিং বডিকে ’বশ্বাসঘাতক এবং দুর্নীতিবাজ’ অভিহিত করে বলেন, বোর্ড সদস্যদের পদত্যাগ করা উচিত। এরপরেই পদত্যাগ করেছিলেন ক্রিকেট বোর্ড সেক্রেটারি মোহন ডি সিলভা। আর তার দুদিন পরেই পুরো ক্রিকেট বোর্ড বরখাস্তের নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল। এছাড়াও এসএলসি শ্রীলঙ্কার কোচিং স্টাফ-নির্বাচকদের শোকজ করে একটি নোটিশ পাঠায়। যেখানে কুশল মেন্ডিসের দলের লজ্জাজনক পারফরম্যান্সে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে ক্রিকেট বোর্ড।
২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে হলে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড-দুটি দলের বিপক্ষেই লঙ্কানদের জয়ের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বকাপজুড়ে একের পর এক ইনজুরিতে ‘হাসপাতালে’ পরিণত হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এর ভেতর মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে আসে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার। এরপর থেকে লঙ্কান ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ ও নির্বাচকদের নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। জানা গেছে দল গঠনে কখনো হস্তক্ষেপ করে না এসএলসি ম্যানেজমেন্ট। তারা স্বাধীনভাবে কোচিং স্টাফ ও নির্বাচকদের কাজ করার সুযোগ দিয়ে আসছে। তারপরও বিশ্বকাপের মতো একটি মর্যাদাপূর্ণ আসরে শ্রীলঙ্কা দলের এমন ভরাডুবির কারণ এবং তা থেকে উত্তোরণের ব্যাখ্যা দিতে হবে। এদিকে, বছরখানেক ধরেই বোর্ডের সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রীর দ্বন্ধ চরমে। এর কারণ গত বছরের অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ ও অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্টের আর্থিক বিষয়াদি। ক্রীড়ামন্ত্রীর সমালোচনার জবাবে পাল্টা জবাব দিচ্ছিলেন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড অফিশিয়ালরাও। তবে এবার বিশ্বকাপ দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যায়। এসএলসির সাত সদস্যের অন্তবর্তীকালীন কমিটি- অর্জুনা রানাতুঙ্গা (চেয়ারম্যান), এস আই ইমাম, রোহিনি মারাসিঙ্গে, ইরাঙ্গানি পেরেরা, রাকিথা রাজাপক্ষে, হিশাম জামালদীন ও উপালি ধর্মদাসা।
পথরেখা/আসো