পথরেখা অনলাইন : শীত ও পিঠা একে অপরের সঙ্গে পুরোনো দিনের সম্পর্ক। শীতের হাওয়া বইবে আর চারদিকে পিঠা উৎসব হবে না এমনটি ভাবা যায় না। গোলায় নতুন ধান উঠবে। সে ধান সেদ্ধ করে হবে চাল। সে মিষ্টি ঘ্রাণের চালে বানানো হবে বাহারি স্বাদের পিঠা। এ হচ্ছে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা পিঠাতেই যেন লুকিয়ে হাজারও শৈশব।
শহুরে জীবনে বাসার ভেতর এমন দৃশ্যের দেখা পাওয়া মুশকিল। তবে কার্তিক-অগ্রহায়ণের শুরুতেই ব্যস্ত শহরের ফুটপাতে রংবেরঙের পিঠা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। যেন পিঠার মহোৎসব। ফুটপাতের দোকানের বড় আকর্ষণ চিতই আর ভাপা পিঠা। ধোঁয়া ওঠা ভাপা আর চিতইের সঙ্গে থাকে ভর্তা। সরিষা , ধনিয়া, শুঁটকিসহ বাহারি পদের ভর্তা। তবে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্ব গতিতে কমেছে পিঠার মান। পিঠার আকার হয়েছে ছোট। ২০০৪-২০০৫ সালে যেই পিঠা বিক্রি হতো ১-২ টাকা সেই পিঠাই এখন বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকায়। সামান্য গুড় ও নারকেল দিলে ভাপা ১০ আর বাড়িয়ে দিলে ২০ টাকা। গতবছরও এই দাম ছিল তবে এই বছর দামে পরিবর্তন না আসলেও গুড় ও নারকেলের পরিমাণে পরিবর্তন এসেছে।
নানু বাড়ির কথা বলি। সেখানে শীতকাল এলেই নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা বানাতো। নভেম্বরের শেষ দিকে স্কুল ছুটি তাই এই সময় গ্রামে বেশি যাওয়া হতো। পিঠা বানানোর দিন পুরো বাড়ি জুড়ে উৎসব মুখর পরিবেশ। সকাল থেকেই নানু ও মামীরা থাকতেন চাপের উপর । কেননা ঘরে পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা , চিতই পিঠা, নকশি পিঠা, তেলে পিঠা, ভাপা পিঠা খাওয়ার লাইন শেষই হতো না।
রাজধানীতেও বইছে শীতের আমেজ। ভোর রাত হলেই খানিকটা টের পাওয়া যায়। তাই ফুটপাতে চারপাশ জুড়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বসছেন মাটির চুলা নিয়ে। তাদের প্রধান আকর্ষণ ভাপা, চিতই ও ডিম চিতই। তবে কেউ কেউ শুধু চিতই বিক্রি করেন, সঙ্গে নানা পদের ভর্তা। চিতই বিক্রি হয় ৫ টাকায় আর কোথাও কোথাও এখন ১০ টাকা, আর ডিম চিতই ২০ টাকা দরে। ভর্তার লোভেই ভিড় জমান অনেকে।
ভোজনরসিক বাঙালির কাছে শীত মানেই পিঠা খাওয়ার মৌসুম। তাই শীত আসতে না আসতেই নানা পদের ভর্তা দিয়ে পিঠার স্বাদ নিতে মানুষ ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। বেড়ে যাচ্ছে পিঠা বিক্রেতাদের ব্যস্ততা। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর একটি ফার্মগেট। এখানেই এক খালা লাকড়ির চুলা বানিয়ে বিক্রি করতেন ভাপা আর চিতই। লোকের সমাগম চোখে পড়ার মতো।
যান্ত্রিক এ শহরে সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়। ফলে ঢাকা শহরে কিছু পরিবার বাদে কেউই ঘরে পিঠা বানায় না। কিনে আনা পিঠার প্রসার বেড়েছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না কীভাবে পিঠা বানাতে হয়। এভাবে চললে রাজধানী থেকে হারিয়ে যাবে বাঙালির এই গ্রামীণ ঐতিহ্য। সময়ে-অসময়ে এখনো পিঠা খাই। গ্রামের স্নিগ্ধ পরিবেশে নয় , কোলাহোলপূর্ণ রাজধানীতে। দাম বাড়ায় কমেছে পিঠা খাওয়ার পরিমাণ। তবে নানুর হাতের পিঠা খাওয়ার স্বাদ আর মনের তৃপ্তি কোথাও খুঁজে পাই না।
পথরেখা/অআ