মৃণাল বন্দ্য : সিরিয়ার তিন বছরের যুদ্ধাহত সেই শিশুটির কথা মনে আছে? ভুলে যাবার কথা তো নয়! মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বলেছিল, ‘আমি আল্লাহকে গিয়ে সব বলে দেবো।’ তার এই কথাটি নাড়া দিয়ে গেছে পুরো পৃথিবীতে। বিশ্ববাসীর ওপর কি প্রচণ্ড অভিমান আর ক্ষোভ ঝরে পড়েছিলো তার এই ছোট্ট একটা কথায়। ক্ষমতার লোভ আর আধিপত্য বাড়ানোর এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রতি মুহূর্তে এভাবেই বলি হচ্ছে নিরপরাধ শিশুরা।
প্রতিদিন কোথাও না কোথাও আছে শিশু হত্যার খবর। সিরিয়া, ইউক্রেন ছাড়িয়ে এবার শিশু হত্যায় শীর্ষে গাজা। গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৫৩০০ এর বেশি শিশু নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা মোট নিহত মানুষের সংখ্যার ৪০ শতাংশ।গাজায় আরও ১২০০ শিশুর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, তারা হয়তো বোমায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, নয়তো নিখোঁজ। গাজা উপত্যকার জীবিত সব শিশু খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় আছে। শিগগিরই তা বিপর্যয়পূর্ণ পুষ্টির সংকটে রূপ নিতে পারে। ইউনিসেফের হিসাব অনুসারে, আগামী কয়েক মাসে গাজায় শিশুদের তীব্র অপুষ্টির মাত্রা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থার (ইউনিসেফ) প্রধান ক্যাথেরিন রাসেল গাজা সফর করেছেন। তিনি গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন একই সাথে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছেন। যদিও সাময়িক যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে দু’পক্ষ, তবে শিশুদের রক্ষার ব্যাপারে কতোটা ভূমিকা রাখাবে এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি তা বলাই বাহুল্য। চারপাশে লাশের সারি। এদিক থেকে ওদিকে ছুটছে মানুষ। সেখানে শিশুরা সবচেয়ে অসহায়। ওরা তো রাজনীতি বোঝে না, ওরা বোঝে না ক্ষমতার লড়াই। ওরা বোঝে না কোনটা তোমার আর কোনটা আমার। ওরা হাসতে চায়, খেলতে চায়। সুন্দর এই পৃথিবীর বুকে আনন্দের ঝড়না হয়ে বইতে চায়।
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ধারণ করবে আজকের শিশুরা। পৃথিবীর এক প্রান্তে শিশুদের রাজকীয় বিলাসিতা, অন্যদিকে মৃত্যুর মিছিল, এই অসমতা মানুষের নির্মিত হলেও,প্রকৃতি ক্ষমা করবে কি! যাকে রক্ত গঙ্গায় বড় হতে হচ্ছে,আর যাকে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতে তারা কেও কি ভালবাসা, প্রেম, দয়া-মায়া,মানবতা ফেরি করবে? তারা ও হিংস্রতায় একে,অন্যকে ছাড়িয়ে যাবে।
সাময়িক যুদ্ধ বিরতি কোন সমাধান নয়। মানবতার বিপর্যয় যুগে যুগে মানুষের দ্বারাই তৈরি হয়েছে, চরম হিংস্রতা মানুষ ই দেখিয়েছে। কি হবে আরো সভ্য হয়ে, উন্নতির শিখরে গিয়ে! যদি না নিশ্চিত করা যায়, পৃথিবীর প্রতিটি কোণে এই নিষ্পাপ শিশুদের হাসিমুখ। সূর্যের আলো নিয়ে হাসবে ওরা। অস্ত্র, মাদক, ধর্ম, ভূমি দখল, জাতীয়তাবাদ সবকিছু র উর্ধে গিয়ে মানবতা হউক একমাত্র হাতিয়ার।
mrinalbanday@gmail.com