পথরেখা অনলাইন : ভাল কিছু করার সম্ভাবনা থাকলেও ব্যাটারদের উইকেট বিলিয়ে দেওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। সিলেট টেস্টের প্রথমদিন শেষে ৩১০ রান করেছে ৯ উইকেট হারিয়ে। এখন শুধু অলআউট হওয়াই বাকি রয়েছে। সান্তনা বলতে কেবল তিনশ পার হতে পারা। আক্ষেপ ৮৬ রান করে আউট হওয়া মাহমুদুল হাসান জয়ের। এছাড়া বলার মতো রান কেবল নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক সৌরভের ৩৭ রান। এছাড়া ছোট ছোট ইনিংসের কল্যানে এই রান করা সম্ভব হয়েছে। উইকেটে থিতু হয়েও স্পিন আক্রমণের জবাবে আগ্রাসী মেজাজে খেলছিলেন কাপ্তান শান্ত। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বাজে শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন এই বাহাতি। উইকেটে টিকে গিয়েও টাইগার ব্যাটারকে এভাবে আত্মাহুতি দিতে দেখে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না গ্লেন ফিলিপস! এরপর মুশফিক যখন ক্রিজে এলেন, দেখেশুনে খেলে দলীয় পুঁজিটা বড় করার দায়িত্ব অনেকটা ছিল তার ওপর। কিন্তু উইকেট ছুড়ে এলেন তিনিও। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল। সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি স্বাগতিকদের। দুই দলে স্পিনারের ছড়াছড়ি দেখেই আঁচ করা যাচ্ছিল।
সিলেটের উইকেটে থাকতে পারে স্পিনের বাড়তি সুবিধা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পতন হওয়া ৯ উইকেটের আটটিই তুলে নিয়েছেন কিউই তিন স্পিনার এজাজ প্যাটেল, ইশ সোধি এবং গ্লেন ফিলিপস। এ ছাড়া একটি উইকেট জেমিসনের দখলে গেছে। তবে উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে কিউই বোলারদের চেয়ে টাইগার ব্যাটারদের ‘অবদান’ কম নয়। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। যদিও ইনিংসের শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিলেন ওপেনার জাকির। শেষমেশ টাইগার ওপেনারকে মুক্তি দেন এজাজ প্যাটেল। ইনিংসের ১৩তম ওভারে প্যাটেলের অফ স্ট্যাম্পে পিচ করা ডেলিভারি পেছনের পায়ে ভর করে খেলতে চেয়েছিলেন জাকির। কিন্তু টার্ন করা বলটি সরাসরি আঘাত করে অফ স্টাম্পে। সমাপ্তি ঘটে জাকির হাসানের অস্বস্তিকর ইনিংসের। ১ চারে ৪১ বলে ১২ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। সাবধানী ব্যাটিংয়ে ৮৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তার বিদায়ে ভাঙে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি।
এরপর আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে লড়তে থাকেন শান্ত। দুজনের ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ে রানটাও বাড়ছিল বাংলাদেশের। তবে লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে বাজে শট খেলতে গিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। গ্লেন ফিলিপসের ফুল টস ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে চেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। মিড-অনে ক্যাচ তালুবন্দী করেন কেন উইলিয়ামসন। ফেরার আগে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ বলে ৩৭ রান করেন শান্ত। অধিনায়কের বিদায়ের পর রানের গতি কিছুটা কমলেও মুমিনুলকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন জয়। তাদের মধ্যে ভালো একটি জুটি গড়ে ওঠে। মুমিনুলের আউটে ভাঙে তাদের ১৭১ বলে ৮৮ রানের জুটি। প্রিয় কাট শট খেলতে গিয়ে মুমিনুলের ব্যাটের কানায় লেগে বল আশ্রয় নেয় কিপারের গ্লাভসে। শান্তর মতো মুমিুনলও থামলেন ব্যক্তিগত ৩৭ রানে। মুমিনুলের আউটের রেশ কাটতে না কাটতেই বিদায় নেন মাহমুদুল হাসান জয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ৭৮ রানের।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের দারুণ সেই ইনিংসটি আজ সিলেটের মাটিতে ছাড়িয়ে গেলেন জয়। সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে। তবে ইশ সোধির বলে কটবিহাইন্ড হয়ে ফিরতে হলো ব্যক্তিগত ৮৬ রানের মাথায়। ১৬৬ বল খেলে ১১ চারের মারে এই রান করেন তিনি। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা নড়বড়ে অবস্থানে থেকেই চা বিরতির পর শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। মুশফিকুর রহিম ও অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন দীপুর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় দলীয় দুইশ পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। তবে এরপরই আবারও ধাক্কা। এবার আঘাত হানলেন এজাজ প্যাটেল। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়েছিলেন মুশফিক। ধরা পড়ে যান মিড অফে দাঁড়ানো উইলিয়ামসনের হাতে। ২২ বলে ১২ রান করেন মুশফিক। মুশফিকের পর অভিষিক্ত দিপুকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ছিলেন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত কাইল জেমিসনের শর্ট বলের এক ডেলিভারিতে আর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলেন না টাইগার এই অলরাউন্ডার। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে। ৩০ বলে ২০ রান করেছেন মিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর [প্রথম দিন শেষে]
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস ৩১০/৯ ,৮৫ ওভার [মাহমুদুল হাসান জয় ৮৬, নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৭, মুমিনুল হক সৌরভ ৩৭, নুরুল হাসান সোহান ২৯, শাহাদাদ হোসেন দিপু ২৪; গ্লেন ফিলিপস ৪/৫৩]
পথরেখা/আসো