পথরেখা অনরাইন : সিলেট টেস্টের প্রথমদিনে ৩১০ রানে ৯৮ উইকেট নিয়ে শেষ করেছিল। দ্বিতীয়দিন সকালে আর কোন রান যোগ না করেই বাকি উইকেটের পতন ঘটে। এরপর ব্যাট করতে নেমে ভালই জবাব দিচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। অনেকবার জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি করা কেন উইলিয়ামসন মাথা ব্যথার কারণ হলেও দিন শেষে কেটে গেছে সেই হতাশা। ১০৪ রানে সাবেক এই অধিনায়কের বিদায়ের পর ৮ উইকেটে ২৬৬ রান করে দিন শেষ করেছে। আলোর স্বল্পতার কারণে এদিন ১০ ওভার কম খেলতে হয়েছে দু’দলকে। নয়তো বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে অলআউট করার স্বাদ পেত। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের লিড নেওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় ছিলেন উইলিয়ামসন। একটা প্রান্তে ধরে জুটির পর জুটি গড়ে যাচ্ছিলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৯তম সেঞ্চুরিও তুলে নেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। অবশেষে উইলিয়ামসনকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ডিফেন্স করেও বোল্ড হয়ে গেছেন উইলিয়ামসন। ২০৫ বলে ১০৪ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসে ১১টি বাউন্ডারি হাঁকান কিউই তারকা। দিন শেষে কাইল জেমিসন ৭ আর টিম সাউদি ১ রানে অপরাজিত আছেন। তার আগে স্পিনার ইশ সোধি ফিরে যান কোন রান না করেই।
রানের হিসেবে কিউইরা এখনও পিছিয়ে আছে ৪৪ রানে। দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে ৪৪ রানের মাথায় ২ উইকেট হারায় কিউইরা। সেখান থেকে ম্যাচ দখলে রাখেন কেন উইলিয়ামসন। জুটি গড়েন হেনরি নিকোলস, ড্যারেল মিচেল ও টস ব্লান্ডেলের সঙ্গে। একে একে সবাইকে ফেরান তাইজুল-মিরাজ-শরিফুল-নাইমরা। তবে ফেরাতে পারেননি আঠার মতো লেগে থাকা উইলিয়ামসনকে। এই ডানহাতি ব্যাটারের সঙ্গে জুটি গড়া নিকোলস ১৯ রান করে পেসার শরিফুলের শিকার হয়ে ফেরত যান। মিচেল আউট হন তাউজুলের ঘূর্ণিতে (৫৪ বলে ৪১)। নাইম হাসানের বলে আউট হওয়ার আগে ব্লান্ডেল করেছেন ৬ রান। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ওপেন করেন ডেভন কনওয়ে ও টম ল্যাথাম। তাইজুল-মিরাজের ঘূর্ণিতে সেটি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি তারা। দলীয় ৩৬ রানের মাথায় ল্যাথাম ও ৪৪ রানের মাথায় আউট হয়ে যান কনওয়ে। ল্যাথামকে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তাইজুলকে সুইপ খেলতে গিয়ে ফাইন লেগ অঞ্চলে নাইম হাসানের হাতে ক্যাচ হন ল্যাথাম। এরপর কনওয়েকে ফেরান অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ।
এই অলরাউন্ডারের বলে খেই হারিয়ে শর্টলেগে শাহাদাত হোসেনের তালুবন্দি হন এই কিউই ওপেনার। মধ্যাহ্নভোজের পর আউট হন নিকোলস। ৪২ বলে ১৯ রান করে শরিফুলের বলে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ হন তিনি। তার আগে উইলিয়ামসনের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি করেছিলেন নিকোলস। একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন কেন উইলিয়ামসন। একের পর এক জুটি গড়ে গেছেন। নিকোলসের সঙ্গে ৫৪, মিচেলের সঙ্গে ৬৬ রানের পর গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটেও ৭৬ রান যোগ করেন তিনি। কিছুতেই জুটিটা ভাঙছিল না। অবশেষে কিউই ইনিংসের ৭৫তম ওভারে মুমিনুল হকের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আর বল হাতে নিয়েই অধিনায়ককে উইকেট উপহার দেন মুমিনুল। টার্ন করা বল ফিলিপসের (৪২) ব্যাটে লেগে প্রথম স্লিপে গেলে নিচু ক্যাচ দারুণভাবে লুফে নেন শান্ত। বাংলাদেশকে পেলেই যেন জ্বলে ওঠে কেন উইলিয়ামসনের ব্যাট। ভেন্যু বদলায়, সংস্করণ বদলায়-উইলিয়াসনের ব্যাটে দেখা যায় রানের ফোয়াড়া। আর জীবন পেলে তিনি যে কতটা ভয়ংকর হয়ে ওঠেন, সেটা যে তাঁর ভালোই জানা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বেশ কিছু রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন উইলিয়ামসন।
জবাব দিতে নেমে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামা নিউজিল্যান্ডের ৩৬ রানে পড়ে যায় প্রথম উইকেট। এরপরই তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন উইলিয়াসন। তিনি আসার পর দলীয় ৪৪ রানে হারায় দ্বিতীয় উইকেট। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকেন উইলিয়ামসন। পরিস্থিতি অনুযায়ী কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়, সেটা তাঁর যেন ভালোই জানা। ৭৫ বলে তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩৪ তম ফিফটি। ফিফটি করলে তা সেঞ্চুরিতে পরিণত করার অভ্যাস তো উইলিয়াসমনের অনেক আগে থেকেই। সেখানে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পথে তাইজুল ইসলামকে একটা ধন্যবাদ তিনি দিতেই পারেন। ৪৯ তম ওভারের শেষ বলে নাঈম হাসানকে স্লগ সুইপ করতে যান উইলিয়ামসন। মিড উইকেটে সেই সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন তাইজুল। ৫৯ রানে জীবন পাওয়া উইলিয়ামসন টেস্টের ২৯ তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ৭৬ তম ওভারের চতুর্থ বলে নাঈমকে স্কয়ার লেগে ঠেলে পৌঁছে যান তিন অঙ্কে। ১৮৯ বল লেগেছে এই সেঞ্চুরি করতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ ৪ সেঞ্চুরি এখন উইলিয়ামসনের। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা টম লাথাম করেছেন ৩ সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও রেকর্ড গড়েন উইলিয়ামসন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৮৭ রান এখন তাঁর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে) , বাংলাদেশ : ৩১০/১০
নিউজিল্যান্ড : ২৬৬/৮ কেন উইলিয়ামসন ১০৪, গ্লেন ফিলিপস ৪২, ডারে মিচেল ৪১, তাইজুল ইসলাম ৪/৮৯, মুমিনুল হক ১/২, শরিফুল ইসলাম ১/৪৪, মেহেদি হাসান মিরাজ ১/৫৭, নাইম হাসান ১/৬১।
পথরেখা/আসো