মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনের সকালটাই শুধু বাংলাদেশের হয়ে কথা বলেনি। টিম সাউদি আর কাইল জেমিনসন মিলে দলের রান ২৬৪ থেকে ৩১৬ তে নিয়ে থাকেন। এই দুজনের ৫২ রানের জুটিতে ৭ রানের লিড নিয়ে ৩১৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। যেখানে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখেন বোলার মুমিনুল হক। তার ৪ রানে ৩ উইকেট দখল বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অনেকটা সাবধানী শুরু করেন মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। ব্যক্তিগত ৪৬ বলে ৮ আর দলীয় ২৩ রানে রান আউটে কাটা পড়েন জয়। জাকির হাসানও ১৭ রানের বেশি করতে পারেনি। তৃতীয় উইকেট জুৃটিতে মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই দুজনের ৯০ রানের জুটি ভাঙ্গে মুমিনুলের ৪০ রানে রান আউট হওয়ার মধ্যদিয়ে। এরপর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ৯৬ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক শান্ত। দিন শেষে ১০৪ রানে আপরাজিত থেকে ২০৫ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। মুশফিক অপরাজিত রয়েছেন ৪০ রানে। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাজঘরে ফিরেছিলেন বাজে শটে। দ্বিতীয় ইনিংসে এসে সেই আক্ষেপ ঘুচালেন। ১৯২ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন তিনি।
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করলেন শান্ত। যা বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম। দুইশ রানের উপরে লিডে সাথে বাংলাদেশের হাতে আছে ৭ উইকেট। দ্বিতীয় দিনে ছিল ক্যাচ মিসের মিছিল। যার খেসারতও দিয়েছে বাংলাদেশ দল। ৭ রানের লিড নিয়ে প্রথম ইনিংস শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। এবার আজ তৃতীয় দিন বাংলাদেশের ‘দুঃখ’ হয়ে গেল রান আউট। অল্প রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। ২৬ রানের মধ্যে ড্রেসিংরুমে ফেরেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয়। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় সেশন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ দল। বিরতি থেকে ফিরেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে জাকির। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও তাঁকে ফেরান এজাজ প্যাটেল। জাকিরের বিদায়ে ভাঙে ২৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। পরের ওভারেই দুর্ভাগ্যজনক রান আউট হলেন আরেক ওপেনার জয়। শান্তর স্ট্রেইট ড্রাইভ হাত ছুঁয়ে যায় টিম সাউদির, বল এসে লাগে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে।
ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা জয় রান আউটের ফাঁদে পড়ে নেন বিদায়। দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে শান্ত ও অভিজ্ঞ মুমিনুল হকের ব্যাটে মোটামুটি বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে। টেস্ট মেজাজে তারা বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন লিড। ২ উইকেটে ১১১ রানে দ্বিতীয় সেশনের চা বিরতিতে যান তাঁরা। কিন্তু বিরতি থেকে ফিরেই রান আউটে কাটা পড়লেন মুমিনুল। প্যাটেলের হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া বেরিয়ে এসে অন ড্রাইভ করলেন। বল গেল সোজা মিড অনে থাকা হেনরি নিকোলসের হাতে। তার আগেই রানের জন্য ছুটে পিচের মাঝামাঝি চলে যান মুমিনুল। অন্যপ্রান্তে শান্ত তখন নিজের ক্রিজে দাঁড়িয়ে। সোজা ফিল্ডার কাছে যাওয়ায় রান নেওয়ার সুযোগও ছিল না। বিপদ বুঝতে পেরে মুমিনুল নিজের ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করলেও সফল হননি। নিকোলসের থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেল। তাঁর বিদায়ে ভাঙে ৯০ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। এর আগে বোলার মুমিনুলকে মেহেদি হাসান মিরাজের স্যালুট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সিলেট টেস্ট শুরুর আগে মিরপুরে নিজেদের প্রস্তুত করছিল বাংলাদেশ দল। তেমনি একটি অনুশীলন শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে হঠাৎ দাঁড়িয়ে বিসিবির কার্যালয়ের দিকে স্যালুট দিতে দেখা যায় মুমিনুল হককে। সাবেক টেস্ট অধিনায়কের স্যালুটটি ছিল জানালার ফাঁক দিয়ে কথা বলা খালেদ মাহমুদ সুজনকে উদ্দেশ্য করে। এবার সেই মমিনুলই সিলেট টেস্টে স্যালুট পেলেন সতীর্থের কাছ থেকে। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বাঁহাতি ব্যাটারকে স্যালুট দিয়েছেন মিরাজ। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী মিরাজের স্যালুট যেন পাওনাই ছিল মুমিনুলের। লিডের আশায় সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নবম উইকেটে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে সেই আশা ধূলিসাৎ করে দেন দ্বিতীয় দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার কাইল জেমিসন ও টিম সাউদি। দুজনে মিলে ৫২ রানের জুটি গড়েন। এক ঘণ্টারও বেশি সময় বাংলাদেশ দলকে অস্বস্তিতে ফেলা এই জুটি ভাঙতে পারছিলেন না জেনুইন বোলাররা।
ঠিক তখনই মুমিনুলের ওপর আস্থা রাখলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ১০২তম ওভারে বোলিংয়ে এসে জোড়া আঘাত হানলেন তিনি। তাঁর জোড়া আঘাতে অলআউটও হয়ে যায় কিউইরা। শুরুটা করেন বোলিং অলরাউন্ডার জেমিসনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। সেটিও ওভারের প্রথম বলেই। চার বল পর প্রতিপক্ষদের ইনিংস মুড়িয়ে দেন অধিনায়ক সাউদিকে বোল্ড করে। এর পরেই সেই মুহূর্তটির জন্ম দেন মিরাজ। কিউইদের অলআউট করতে অবদান রাখায় মুমিনুলকে সম্মান জানিয়ে স্যালুট দেন তিনি। আর ৪ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাইজুল ইসলামকে পিঠ চাপড়ে সাবাশ দেন। মুমিনুলের ধাক্কায় ৭ রানের বেশি লিড নিতে পারেননি কিউইরা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩১০ রানের বিপরীতে ৩১৭ রান করে সফরকারীরা। সব মিলিয়ে ৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার-সেরা বোলিংও করেছেন টেস্টের সাবেক অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৩১০/১০ এবং দ্বিতীয় ইনিংস ২১২/৩, ৬৮ ওভার (শান্ত ১০৪*, মোমিনুল ৪০, মুশফিকুর ৪৩*, জাকির ১৭)
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ২১২/১০, ৬৮ ওভার
পথরেখা/আসো