• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৩:৩৫

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

  • মত-দ্বিমত       
  • ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩       
  • ৫৭
  •       
  • ০১-১২-২০২৩, ২২:৪৬:২৫

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় খুঁজে বের করার জন্য বিশ্ব নেতারা এখন দুবাইতে কোপ২৮ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে সমবেত হয়েছেন। সম্মেলন চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নেবেন বিশ্বের ১৯৮টি দেশের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। ঠিক এ সময় প্রকাশিত নিবন্ধটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় খুঁজতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। 


লেটস পুট ব্যাক পিপল অ্যাট দ্য হার্ট অফ ক্লাইমেট অ্যাকশন
শেখ হাসিনা এবং প্যাট্রিক ভারকুইজেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিখ্যাত আমেরিকান সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন নিউজউইকে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের সিইও প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। 
 
জলবায়ু পরিবর্তন হল একটি বৈশ্বিক বিপর্যয়, যা গরীবদের ওপর ধনীরা চাপিয়ে দেয় এবং ক্রমবর্ধমান হারে এটি তাদের নিজেদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। দুবাইতে কোপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনের জন্য আমন্ত্রিত বিশ্ব নেতাদের বুঝতে হবে যে, তাদের টপ-ডাউন (উপর থেকে নিচে) পদ্ধতি কখনই কাজ করতে পারে না। বরং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লড়াইয়ের জন্য আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে এবং এই লড়াইয়ে তাদের অর্থায়ন করতে হবে।
 
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতাদের মতদ্বৈততায় জলবায়ু বিপর্যয় থেমে থাকবে না। এর ফলে ইতোমধ্যেই জনপদের ওপর টাইফুন এবং বন্যা হচ্ছে। খরার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়ছে। জলবায়ু তহবিলের একটি ক্ষুদ্র অংশই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করা লোকেদের কাছে পৌঁছায়। তাদের নিজেদের এবং জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংস্থান ছাড়া তারা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। জলবায়ু অনাচার ও বৈষম্য আরো বাড়ছে। 
 
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রথম সারিতে থাকা মানুষকে রক্ষায় সাহায্য না করলে বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু কার্যক্রমের কোনো মানে হয় না। আমাদের স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উদ্যোগের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় তহবিল দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে হস্তান্তর করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য নতুন চিন্তাভাবনা এবং একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনার প্রয়োজন। কোপ২৮-এ, বিশ্বকে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত তহবিলটি অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হতে হবে, যাতে আমরা অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং জলবায়ু প্রভাবগুলোর সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে খাপ খাইয়ে নিতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে দ্রুত এবং জরুরিভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
 
মুভিং ফরম গ্লোবাল টু লোকাল 
গ্লাসগোতে কোপ২৬-এর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অভিযোজন অর্থের প্রবাহ দ্বিগুণ করে ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে অর্থ প্রদানকারীদের অবশ্যই ২০২২ এবং ২০২৫ এর মধ্যে বার্ষিক অভিযোজন প্রবাহ গড়ে কমপক্ষে ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। তবুও অভিযোজন অর্থায়ন প্রবাহ বিকাশে দেশগুলো ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ কমে ২১.৩ বিলিয়ন হয়েছে। এই অর্থ খুবই সামান্য। তবুও এই অর্থের ৬ শতাংশেরও কম, এবং সম্ভবত ২ শতাংশের কম স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে জলবায়ু-স্থিতিস্থাপকতা প্রকল্পগুলোতে পৌঁছায়। সঠিকভাবে ট্র্যাকিং এবং অর্থ প্রবাহের প্রতিবেদন না করার কারণে অনুমান পরিবর্তিত হয় এবং এটির উন্নতি করা দরকার। এর কারণ জলবায়ু নীতি-কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ উপর থেকে নিচে প্রবাহিত হয়। কোন শহর, রাস্তা, মাঠ এবং বাড়ি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তা যারা জানে, তারাই সেখানে বসবাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই তাদের একত্রিত হতে এবং তাদের নিজস্ব প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে উৎসাহিত করতে হবে এবং ক্ষমতায়িত করতে হবে। 
 
এটি বলা সহজ, করা কঠিন। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলো পরিচালনা করার জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রায়শই সময় এবং দক্ষতার অভাব হয়। প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করার জন্য তাদের সাহায্য এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তহবিল সুবিধা নেওয়ার জন্য তাদের মৌলিক জিনিসগুলোর প্রয়োজন যেমন-আইনিভাবে গঠিত সংস্থা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
 
বাংলাদেশ সবসময়ই স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন জলবায়ু অভিযোজনে একটি শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে এবং সম্প্রতি সরকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে জলবায়ু সহায়তা পৌঁছানোর বিভিন্ন উপায় অন্বেষণ করছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অভিযোজনের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা সহজ করে তোলে, অভিযোজনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সম্প্রদায় এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল রয়েছে, সবুজ ব্যাঙ্কিং পরিষেবাগুলো প্রসারিত করে এবং বাস্তুতন্ত্র পরিষেবাগুলোর জন্য অর্থপ্রদানকারী সম্প্রদায়গুলোকে অন্বেষণ করে। 
 
ঢাকায় গ্লোবাল হাব অন লোকালি লিড অ্যাডাপ্টেশনের মাধ্যমে সরকার সমাধান জোরদারে এবং বিশ্বের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময় করতে সহায়তা করছে। এই প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে নাটকীয় সাফল্য অর্জন করেছে। 
 
চ্যালেঞ্জ থেকে সম্ভাবনা 
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলায়, মেয়র এবং বাসিন্দারা তাদের জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগ চিহ্নিত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। অন্যান্য বড় শহরগুলোর মতো, মংলা জলবায়ু অভিবাসীদের একটি বড় আগমন দেখেছে যদিও এটি ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে।  
 
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলস্বরূপ-শহরের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকে দূষিত হচ্ছে। মংলা জনবসতির মানচিত্র তৈরি করছে, জলবায়ুর প্রধান দুর্বলতা চিহ্নিত করছে এবং স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের উন্নয়ন করছে। ব্র্যাক, একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং এটি যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সরকারের সহায়তায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের মাধ্যমে কাজ করছে। এটি আশা করা যায় যে, মংলার জনগণের অভিযোজন পরিকল্পনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া অন্যান্য শহর ও শহরগুলোর জন্য একটি ব্লুপ্রিন্ট হয়ে উঠতে পারে।
 
এটি আমাদের দেখায় যে, স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজনই এগিয়ে যাওয়ার পথ। কিন্তু আমাদের এই পদ্ধতিগুলো ব্যাপকভাবে জোরদার করতে হবে। এজন্য দাতাদের জন্য অযাচিত ঝুঁকি তৈরি না করে আমাদের স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে অর্থায়ন করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থাগুলোসহ বৃহৎ অর্থদাতাদের পোর্টফোলিওতে জনগণের অভিযোজন পরিকল্পনাগুলোকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি ট্রান্সমিশন বেল্ট হিসাবে কাজ করার জন্য শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী সংস্থাগুলো এখানে মূল্যবান হতে পারে। 
 
কোপ২৮ তখনই সফল হবে, যখন এটি জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির জন্য প্রকৃত সুবিধা অর্জন করবে। এই বছরের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র সম্প্রদায়ের কাছে অর্থ প্রবাহ এবং স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব, উপযুক্ত এবং কার্যকর অভিযোজন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি এটি অর্জন করতে পারি, তাহলে সেটি হবে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর অবিচার প্রতিকারের একটি বড় পদক্ষেপ। 
পথরেখা/আসো   # সূত্র : বাসস 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।