বাংলাদেশ : ৩১০ ও ৩২৮
নিউজিল্যান্ড : ৩১৭ ও ১৮১
ফল : বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী
আরিফ সোহেল : তাইজুলেরর হাত ধরে জয়ের টোটাল আবহ চতুর্থদিনই তৈরি ছিল। বাকি ছিলে আজ, ২ ডিসেম্বর শুভ সকাল দেখার। সেই তাইজুল লেজটুকু ছেটে দিয়েছেন। অবশ্য সকালের প্রথম ধাক্কা ছিল নাইমের। তবে সেখানেও তাইজুল জড়িয়ে। দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেছেন তাইজুল। ঘুর্ণিবাজ তাইজুল একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসের ৪ উইকেটের সাথে মোট হলো ১০। তাইজুলময় ম্যাচে বাংলাদেশেরে জয় ১৫০ রানের।
কিউইদের সঙ্গে ১৭ টেস্টে বাংলাদেশ মাত্র একটিতে জিতেছিল। তাও আবার সেটি তাদের মাঠ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে একাধিকবার ওয়ানডেতে হারালেও টেস্টে ছিল না। তেমনটা আশা করা কঠিন, শান্ত-তাইজুলরা অন্তত খরা ঘুচিয়ে ঘরের মাঠে ইতিহাসের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে। স্পিনবান্ধব হয়ে পড়া উইকেটে চতুর্থ দিন তার ঘূর্ণিতে ১১৩ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। শনিবার প্রথম টেস্টের শেষ দিনে নেমেই ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন আগেরদিন ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা ড্যারিল মিচেল। অবশ্য এরপর তিনি আর চোখ রাঙাতে পারেননি সেভাবে।
মিচেলের বিদায়ের পর বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন কিউই অধিনায়ক টিম সাউদি। তবে সেই দৌড় তাদের বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেছেন মিচেল। বাংলাদেশের হয়ে তাইজুলের ৬টি ছাড়াও নাঈম হাসান ২টি, মেহেদি মিরাজ ও শরিফুল একটি করে শিকার ধরেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ হেরেছিল ১৩ টেস্টে। ৩টি টেস্ট ড্র হয়েছিল। সিলেটের এই টেস্টে জিততে হলে ইতিহাসই গড়তে হতো কিউইদের। নিজেদের ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড পাকিস্তানের বিপক্ষে, ক্রাইস্টচার্চে। ৩২৪ রান তাড়া করে তারা ১৯৯৪ সালে জিতেছিল। এই ম্যাচে তাদের সামনে বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য ছিল ৩৩২ রানের।
চতুর্থ দিন শেষে ৭ উইকেট হারালেও সফরকারীরা আভাস দিয়েছিলেন। লড়াই হলেও, তাদের জয়ের স্বপ্ন দেখা ছিল অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো। তবে তার দাবি অমূলকও নয়, ক্রিজে ছিলেন স্বীকৃত ব্যাটার মিচেল। শেষদিনে দ্রুত কিউই ইনিংস থামাতে তার উইকেটই সবার আগে প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। মিচেল দিনের খেলা শুরুর ১০ম ওভারেই সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন। নাঈম হাসানের বলটি উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে তাইজুলের হাতে বন্দি তিনি। এর আগে মিচেল ১২০ বলে ৫৮ রানে করেন। ইশ সোধির সঙ্গে ৯১ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েছিলেন মিচেল।
ততক্ষণে হার প্রায় নিশ্চিত কিউইদের, ফলে শেষ চেষ্টা হিসেবে ব্যবধানটা কমিয়ে আনতে আক্রমণাত্মক খেলার মানসিকতা নিয়ে নামেন কিউই অধিনায়ক। সাউদির আগে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে কেউ ছক্কা মারেননি। শেষ পর্যন্ত ২ ছক্বা ও ১ চারে ২৪ বলে ৩৪ রানে ফিরেন তিনি। তাকে ফিরিয়ে টেস্টে ১২তম বারের মতো এক ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল।
এরপর শেষ উইকেটটা ভাঙেন বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞ বাঁ-হাতি স্পিনার। তার বলে সিলি পয়েন্টে দাঁড়ানো জাকির হাসানকে ক্যাচ তুলে দেন সোধি (৯১ বলে ২২)। ৩১ বছর বয়সী তাইজুল নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। এবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে নিলেন ৬ উইকেট।
বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের শুরুতেই প্রতিপক্ষ শক্তিমত্তা-পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড। অভিজ্ঞ কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে কিংবা ড্যারিল মিচেল-কে নেই সফরকারীদের দলে। অন্যদিকে, ঠিক বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের। অভিজ্ঞ তিন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও অধিনায়ক সাকিবকে ছাড়াই সিলেটে খেলতে নামে লাল-সবুজের দল। সাকিবের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের নেতৃত্বভার ওঠে শান্তর কাঁধে। তরুণ নেতৃত্ব ও দল নিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে দারুণ শুরুর পথে স্বাগতিকরা।
সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩১০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে কেইন উইলিয়ামসনের লড়াকু সেঞ্চুরিতে ভর করে তাদের সংগ্রহ ছিল ৩১৭। ৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দারুণ জবাব দেয় বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং শেষে আজ কিউইদের সামনে ৩৩২ রানের পাহাড়সম টার্গেট ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ১০৪, মুশফিকুর রহিম ৬৭ ও মেহেদি হাসান মিরাজ অপরাজিত ৫০ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার এজাজ প্যাটেল সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস ৩১০/১০, ৮৫.১ ওভার (জয় ৮৬, শান্ত ৩৭, মুমিনুল ৩৭, সোহান ২৯; ফিলিপ্স ৪/৫৩, এজাজ প্যাটেল ২/৭৬, জেমিসন ২/৫২) এবং দ্বিতীয় ইংনিস ৩২৮/১০; ১০০.৪ ওভার (শান্ত ১০৫, মিরাজ ৫০*, মুশফিকুর ৬৭ মুমিনুল ৪০; এজাজ ৪/১৪৮, সোধি ২/৭৪)।
নিউজিল্যান্ড : ৩১৭/১০; ১০১.৫ ওভার (কেন উইলিয়ামসন ১০৪, ড্যারিল মিচেল ৪১, গ্লেন ফিলিপস ৪২, টিম সাউদি ৩৫, তাইজুল ৪/১০৯, মুমিনুল ৩/৪, শরিফুল ১/৫৪) এবং দ্বিতীয় ইনিংস ১৮১/১০; ৭১.১ ওভার (মিচেল ৫৮, সোধি ২২, সাউদি ৩৪, কনওয়ে ২২; তাইজুল ৬/৭৫, নাঈম ২/৪০, মিরাজ ১/৪৪, শরিফুল ১/১৩)।
ফল : বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী।
পথরেখা/আসো