মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : চতুর্থ দিন শেষে অপেক্ষা ছিল জয়ের। সেটা আসল পঞ্চমদিন শনিবার সকালেই। মূলত তাইজুল ইসলামের হাত ধরে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেল বাংলাদেশ। পূন্যভুমিকে জয়টাও আসে বড় ব্যবধানে, ১৫০ রানে। শেষ দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩ উইকেট। প্রথম সেশনেই নাঈম আর তাইজুল এই তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে। ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরষ্কার হাতে উঠে তাইজুলের হাতে। চতুর্থদিনে বাংলাদেশের দেওয়া ৩৩২ রানের টার্গেটে সেই লক্ষ্য ব্যাট করতে নেমে শুরতেই চাপে পড়ে কিউইরা। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় নিউজিল্যান্ড। ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রান সংগ্রহ করে চতুর্থ দিন শেষ করেছিল সফরকারীরা। নিউজিল্যান্ডের লড়াইয়ের শেষ আশা হয়ে ছিল ৪৪ রানে অপরাজিত ড্যারিল মিচেল। সকালে মিচেল তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ৯ম ফিফটি তুলে নেয়। ১২০ বলে ৫৮ রান করে নাঈম হাসানের বলে সুইপ করতে গিয়ে তাইজুলের হাতে ধরা পরেন এই ব্যাটার। এরপর মাঠে এসে পাল্টা আক্রমন করে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টিম সাউদি।
তাইজুলের বলে আউট হওয়ার আগে আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২৪ বলে ৩৪ রান করেন সাউদি। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন অনেকক্ষণ ধরে প্রতিরোধ গড়ে রাখা ইশ সোধি। তিনি ৯১ বলে ২২ রান করে তাইজুলের শিকার হন। ১৮১ রানে শেষ হয় নিউজিল্যান্ড এর দ্বিতীয় ইনিংস। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ নিয়ে ৭ম টেস্ট খেলল বাংলাদেশ। ৩ হার ও ৩ ড্রয়ের পর ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে এই প্রথম টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। আর তাতে দারুণ অবদান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের। নিউজিল্যান্ডের দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১০ উইকেট নিলেন তিনি। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন তাইজুল। ২০১৮ সালে টেস্টে প্রথমবারের মতো তাইজুল ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই সিলেটেই! নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে নিলেন ৬ উইকেট।
তবে সিলেট টেস্ট জয়ে ব্যাটসম্যানদের কথাও বলতে হবে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৮৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান। দ্বিতীয় ইনিংসে হাল ধরেছিলেন তিন ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন (১০৫), মুশফিকুর রহিম (৬৭) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (৫০*)। চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের স্পিনারদের তোপের মুখে পড়ে ৭ উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ৪৯ ওভার খেলে রান করেছে মাত্র ১১৩। ইনিংসের শুরু থেকেই কিউইদের চেপে ধরেছেন তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাইম হাসান। তাইজুল তুলে নিয়েছেন ৪টি উইকেট। মেহেদি আর নাইম শিকার করেছেন ১টি করে উইকেট। পেসার হিসেবে একটি উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম। এর আগে ম্যাচের চতুর্থ দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই একে একে সাজঘরে ফিরেছেন ৩ কিউই টপঅর্ডার। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খোলার আগেই টম ল্যাথামকে (৬ বলে ০) সাজঘরে ফেরত পাঠান শরিফুল ইসলাম। এই বাঁহাতি পেসারের ফুল লেন্থের বলে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ল্যাথাম।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দলের কাঁটা হয়ে ব্যাট করছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে উইলিয়ামসনকে সেটি করতে দিলেন না তাইজুল ইসলাম। এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ২৪ বলে ১১ করা এই কিউই ব্যাটারকে আউট করেন টাইগার স্পিনার। এরপর ব্যাট করতে নামা হেনরি নিকোলসে সাজঘরের পথ দেখান অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ২ রানে করে নাইম হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই কিউই ব্যাটার। কঠিন সময়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওপেনার ডেভন কনওয়ে। দেখেশুনে খেলে ৭৬ বলে ২২ করা এই ব্যাটারকে শাহাদাত হোসেনের ক্যাচ বানান তাইজুল। এরপর উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম ব্লান্ডেলকেও সাজঘরে ফেরত পাঠান এই বাঁহাতি স্পিনার। ১৬ বলে ৬ রান করে শর্টলেগে নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই কিউই ব্যাটার। গ্লেন ফিলিপসকে এলবিডব্লিউ করেছেন ডানহাতি অফস্পিনার নাইম। এই কিউই ব্যাটার করেছেন ২৬ বলে ১২ রান।তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন কাইল জেমিসন। ২৮ বলে ৮ রান করেন এই কিউই লোয়ার অর্ডার। এদিকে অসাধারণ এক জয়ে ২০২৩-২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রের শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড দুটি দলই এবারের সিরিজ দিয়ে ২০২৩-২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র শুরু করেছে। সিলেটে সিরিজের প্রথম টেস্টে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। ২০১৯-২১,২০২১-২৩ -দুই চক্রে পয়েন্ট তালিকার ৯ নম্বরে থেকে শেষ করেছিল বাংলাদেশ। ২০২১-২৩ চক্রে মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৩১০/১০ ও ৩৩৮/১০ ( নাজমুল হোসেন শান্ত ১০৫, মুশফিকুর রহিম ৬৭, মেহেদি হাসান মিরাজ অপরাজিত ৫০, শাহাদ হোসেন ১৮, এজাজ প্যাটেল ৪/১৪৮, ইশ সোধি ২/৭৪)
নিউজিল্যান্ড : ৩১৭/১০ ও ১৮১/১০ (ড্যারি মিচেল ৫৮, টিম সাউদি ৩৪, ডেভন কনওয়ে ২২, তাইজুল ৬/৭৫, নাইম হাসান ২/৪০, শরিফুল ১/১৩, মিরাজ ১/৪৪)।
ফল : বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ : তাইজুল ইসলাম (বাংলাদেশ)
পথরেখা/আসো