আব্বার পোস্টিং হল সাহেবগঞ্জে। এলাকাটির বাকেরগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের স্কুল বাকেরগন্জ জীবন সিংহ বিদ্যালয়, বাবা আবার স্কুল সেক্রেটারিও। যেতে ৩০/৩৫ মিনিট লাগে। পথ প্রায় শুনসান। আধা মাইল দুরে স্টিমার অফিস। ওটা বাকেরগঞ্জের নদীর পারে সরিয়ে নেয়াতে এখন এলাকাটা একদমই নীরব। সুন্দরবনের কাছাকাছি হওয়াতে নদী পার হয়ে ছোট ছোট বাঘ দেখা যেত। যাকে এলাকার লোক ঘেত্রা বলে। সে গুলি গ্রামের বসত বাড়ির গরু-ছাগল মারতে নদী পার হয়ে চলে আসত।
বাবা বনেদী। পালতেন হরিণ। তাই হরিণ বাঁচাতে খুব সতর্ক থাকতেন। বাবার বন্দুক উইম্বলি এন্ড স্কট ওজনে হাল্কা তবে খুবই কার্যকর। সন্ধ্যা বেলা বাসাতে এলাকা অনান্য অফিস কর্তারা আসত চলত জমপেশ আড্ডা। আমার ভাইদের মধ্যে মেজ ভাই সফির টিপ ছিল দুর্দান্ত। একদিন বাসার সন্ধ্যার আড্ডাতে আলোচনা উঠল এলাকা থেকে ৮/৯ মাইল দূরে বাঘ এসে গরু, খাসি মেরে আখ ক্ষেতে ঢুকে যায়। এলাকার লোক ভয়ং আছে। ওসি কাকা মাকে বললেন- যেন বাবাকে বন্দুক নিয়ে বাঘ শিকারে যায়। মা দুম করে না বলে দিলেন। বললেন আপনারা যান। অথচ বাবা রাজি। কিছুতেই মা রাজি না, তখন ছেলেদের চাইলেন। মা তো রাগে উনাদের বলেই ফেললেন অনেক রাত হল আজ তাইলে আসুন। মার অগ্নিমূর্তি দেখে বলেল, তাইলে বন্দুকটাই দেন। থানার রাইফেল ত আছেই। ওতে সিংগল বুলেট, মিস হবার সম্ভাবনা বেশী। বাবা তখন মেজ ভাইকে বললেন, ইলি কার্টিজ এর চার আর ডাবল বি গোটা ছয়েক গুলি দিয়ে দিতে। বন্দুক আর গুলি নিয়ে চলে গেলেন।
পরদিন খুব ভোরে বাঘ হত্যা হবে। এখানে প্রায় প্রতি ২/৩ মাইল এলাকাতে বাঘ ধরার খাচা পেতে রাখে। খাচাটার পিছনে একটা ছাগল থাকে, ছাগল টা খুব শক্ত বেড়ার ভিতর থাকে। সামনে থাকে দরজা, সেটা উচুতে উঠানো, ফাঁকা দরদাতার মধ্যে থাকে একটা দড়ি, বাঘ ছাগল খেতে ঢুকলে ঐ দড়িটাতে ধাক্কা লাগলেই উচিত্ উঠানো ট্রাপ্ ডোরটা ঝপাস করে পরে যায়। লোকজন আঁশে পাশেই থাকে তারা আলগা মোটা মোটা মাটির ঢেলা দিয়ে খাঁচার চারপাশে বসিয়ে দেয়, নইলে আটকা পরা বাঘ যেভাবে দাপাদাপি করে তাতে খাচা উলট পালট খাবেই।
বহুবার খাঁচায় পরা বাঘ দেখেছি, একবার স্কুল থেকে ফেরার পর শুনলাম মুচিবাড়িতে বাঘ ধরা পরেছে। গেলাম খাঁচার পাশে। লোক জন নাইই বলা চলে। খাঁচার কাছে গিয়ে দেখি চারিদিকে মাটির ঢেলা থাকাতে খাঁচার ভিতর আধো অন্ধ কারে বাঘ একদম পিছনে, চোখ দুটি জ্বল জ্বল করছে। কিছুটা দুরে থাকাতে ভাল করে দেখতেই পারছিলাম না, স্কুলের ব্যাগ থেকে স্কেল বেড় করে খাঁচার ভিতর ঢুকিয়ে নাড়াতেই বাঘটা এত দ্রুত ঝাপাবে তা বুঝিই নাই। ফ্যাচ ফ্যাচ আওয়াজ করে একদম খাঁচার লোহার শিকে আছরে পরল। আমি চিৎপটাং। গায়ে আচর লাগে নি। পিঠাপিঠি ভাই আমরা, বললাম বাসাতে না জানাতে। এসে বলে দিল। মা শুনল, বাবা এসে বাঘেরেত আর মারতে পারে না, আমাকেই ধুমাধূম। ছোট বাঘ হলেও বাঘ। ঠিক হয়নি শাষিয়ে দিলেন। বাঘ মারতে সব্বাই চলল ৮/৯ মাইল দূরের শিবপুরে।(চলবে)
পথরেখা/আসো