পথরেখা অনলাইন : মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক (এমভিসি) দেশের ৩৬০টি উপজেলায় তৃণমূল পর্যায়ে গৃহপালিত গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগির জরুরি চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের ৪৬৬টি উপজেলা এবং নয়টি বড় শহরে এই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।
জরুরি হটলাইন নম্বর ১৬৩৫৮-এ ফোন করে বিনামূল্যে এ পরিষেবা পাওয়া যায়। এই নম্বরে ফোন পেলে ট্রানকুইলাইজাসহ প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম এবং ওষুধসহ ভেটেরিনারি সার্জন এবং তাদের সহকারীরা এম্বুলেন্সের মত ভ্রাম্যমান গাড়ি নিয়ে সাধারণ কৃষক বা বাড়িতে গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি পালনকারীদের দোরগোড়ায় হাজির হন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জনের সাথে গাড়ির মাঝখানে এবং সামনে চালকের পাশে একজন কম্পাউন্ডার বা ড্রেসার বসেন। রাষ্ট্র-পরিচালিত ন্যাশনাল অ্যানিমেল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম (এনএএইচএমএস) জানায়, ২০১৬ সালে গবাদি পশুর মৃত্যুর হার ৩.১ শতাংশ ছিল যা ২০২০ সালে ১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তাদের অনুমান, ২০১২ হাঁস-মুরগির মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ১২.৬ শতাংশ ছিল। তালুকদার বলেন, ‘জরুরী চিকিৎসা সুবিধার অভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি মরে যাওয়ার প্রেক্ষিতে তা মোকাবেলায় এমভিসি ব্যবস্থা চালু করা হয়।’
কৃষকদের মতে, গর্ভাবস্থা, প্রসব, জরায়ু স্থানচ্যুতি এবং দুধজ্বর সম্পর্কিত জটিলতা দেখা দিলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের অসুস্থ গবাদি পশু নিয়ে যথা সময়ে উপজেলা পর্যায়ে পশু চিকিৎসকের কাছে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। যার ফলে তাদের মূল্যবান গরু, মহিষ, ছাগল বা ভেড়া মারা যায়। ডিএলএস প্রধান বলেন, অসুস্থ গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগির পাশে পশুচিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘শেখ হাসিনার উপহার, প্রাণির পাশে ডাক্তার’ স্লোগানের সাথে মিল রেখে গত বছর এই পরিষেবাটি চালু করা হয়। তালুকদার বলেন, এ সেবার অংশ হিসেবে ডিএলএস গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগিকে ১৭ ধরনের টিকা দেয় এবং মোবাইল ভ্যান ব্যবহার করে অন্যান্য জরুরি চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে থাকে। ডিএলসি’র ২০২২-২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ২ কোটি ৪৮ লাখেরও বেশি গরু, ২ কোটি ৬৯ লাখ ছাগল এবং ৩৮ লাখ ২৭ হাজার ভেড়া দেশে ৩১ কোটি ৯৩ রয়েছে। লাখ মুরগি এবং ৬ কোটি ৬০ লাখ হাঁস রয়েছে। ডিএলএস’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জিডিপিতে প্রাণিসম্পদের অবদান রয়েছে ১.৮৫ শতাংশ যার পরিমাণ ৭৩,৫৭১ কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে এর পরিমান ১৬.৫২ শতাংশ।
অথচ বৈশ্বিকভাবে কৃষি খাতে প্রাণিসম্পদের অবদান ৪০ শতাংশের বেশি যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। প্রকল্পের প্রধান কারিগরি সমন্বয়কারী ডা. মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, ডিএলএস’র আওতায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি) এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই ৬১টি জেলার ৩৬০টি উপজেলায় ১৮৪ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে এই পরিষেবাটি চালু করা হয়েছে। রাব্বানী বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে নয়টি সিটি করপোরেশন এলাকাসহ বাকি উপজেলাগুলোতে আরও ১১৫টি এমভিসি স্থাপন করা হবে।
এলডিডিপি কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদককে একটি এমভিএসের সরঞ্জামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে একটি ছোট রেফ্রিজারেটর, পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, বৈদ্যুতিক ম্যাস্টাইটিস ডিটেক্টর, বৈদ্যুতিক অস্ট্রাস ডিটেক্টর, সার্জিক্যাল কিট বক্স, ম্যানিপুলটিভ ডেলিভারির যন্ত্রপাতি, পোস্টমর্টেম, ডিহর্নিং, অর্থোপেডিক চিকিৎসা এবং স্টমাক টিউব। ভ্যানটিতে পরিমাপের টেপ, ছোট ওজনের স্কেল, সাব-ক্লিনিক্যাল ম্যাস্টাইটিস সনাক্তকরণ প্যাডেল, ছোট স্টিলের ক্যাবিনেট এবং দড়ি এবং চেইন, গাম বুট, অ্যাপ্রন এবং স্যালাইন স্থাপনের জন্য স্ট্যান্ডের মতো উপকরণ রয়েছে।
পথরেখা/আসো