সাহেবগঞ্জ থেকে বাকেরগঞ্জের দিকে গেলে ৪/৫ টা ঘর মিলে মুচিবাড়ি। ঘরে পরার সান্ডেল ওরাই বানিয়ে দিত। ভাল সান্ডেল বা স্যু আমরা বাবার সাথে বরিশাল গিয়ে কিনতাম। স্টিমার আর লঞ্চ দুইটাতেই যেতাম। তিন ঘণ্টা লাগত। আব্বা খুব চ্যুজি মানুষ ছিলেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ারসময় দেরাদুন আর্মি একাডেমিতে চান্স পেয়ে চলে যান। দাদা ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর, পোস্টিং ছিল চিটাগং। দাদীমা ছিলেন ডাক সাইটে। তিনি শেরে বাংলা ফজলুল হকের সাথে কথা বলে বাবাকে একাডেমি থেকে উইথড্র করিয়ে ফেরত নিয়ে আসেন। তখন সূর্যসেনের যুগ৷ দাদীমা তার ভক্ত ছিলেন। একাডেমি থেকে উইথড্র হবার পর বাবাকে চাকরি দেবার জন্য দাদিমা শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের সাথে দেখা করেন। আর ছেলেকে সাবরেজিস্টার করেই শেরে বাংলার রুম থেকে বেড় হন। গেজেটেড অফিসার এত অল্প বয়সে কমই হয়েছে।
বাবা ছিলেন ইউনিভার্সিটির হকি ব্লু। ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন। ছিলেন ক্রিকেট দলেরও ক্যাপ্টেন। আজ যেমন আবাহনী আর মোহামেডান; ঐ সময় ছিল ওয়ারী আর ভিক্টরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। বাবা ক্রিকেট খেলতেন ওয়ারি ক্লাবে। ছিলেন ওপেনিং ব্যাট আর উইকেট কিপার। আর ভিক্টোরিয়াতে ছিলেন ফুটবল অর হকি দলের ক্যাপ্টেন। তখন প্রতিদলেই ইংরেজ প্লেয়ার রা খেলত। সাবরেজিস্টার হবার কারণে ঢাকার বাইরে পোস্টিং হয়। খেলা তার মনে বাসা বেঁধেই ছিল। যেখানেই গেছেন সেখানেই ফুটবল দল করেছেন। ঢাকা থেকে মাকরানি ফুটবলার ওমর, মুসা, দেশি কবীর, জাকারিয়া পিন্টু , হাফিজ নূরন্নবি, গজনবী, রেমন্ড, প্যাট্রিকসহ সবাই খেলতে। এই গ্রাম উপশহরের জনগন দেশ শ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের হাতের কাছে পেত। বাবা এ জন্য দেশের ক্রীড়া উন্নয়নের দিকপাল বলা হতো।
গৌরনদীতে বাসা চারদিকে বিরাট জায়গা। উচু বাঁশের বেড়া গিয়ে ঘেড়া। একপাশে ক্রিকেট পিচ তৈরি করা হয়। আর এক পাশে সুপারি গাছে দিয়ে উঁচু বেড়া বানিয়ে তার ভিতর হরিণ রাখা হত। সারাদিন বাইরেই থাকত। সন্ধ্যার সময় ঐ খাঁচাতে ঢুকান হত। একদিন এক লোক খালি গা, ধুতি পরা, খাঁচা ধরে হরিণ দেখছে। একটু পর বাবার সাথে কথা বলতে দেখলাম। বাবা আমাকে ডাকলেন। তখন বয়স ৮/৯ হবে । বললেন উনাকে হাত দেখাও। না বুঝেই হাত দেখালাম, বলল আপনার এই ছেলে সেনাবাহিনীতে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ করে এম এ পড়ছি। আর মনে মনে ভাবছি- গণক বেটা কইছিল আর্মিতে যাব । এম এ পড়ে কেউ আর্মিতে যায়? অথচ হলো কিন্তু তাই...
(চলবে)
পথরেখা/আসো