• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০১:৩০

পয়া মিরপুর যেভাবে অপয়া হয়ে গেল

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : একটা সময় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ছিল অপ্রতিরোধ্য আর দুরন্ত। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে এসে যেন সবকিছুই উলট পালট হয়ে গেছে। মিরপুরে একটার পর একটা ম্যাচ খেলছে আর হারছে। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একই পরিণতি হয়েছে লাল সবুজ প্রতিনিধিদের। পয়া মিরপুর যেভাবে অপয়া হয়ে গেল, সেটাই কোটি টাকার প্রশ্ন ক্রিকেট প্রেমিদের। ঘরের মাঠে শেষটা সুন্দর হলো না বাংলাদেশের জন্য। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট খ্যাত স্টেডিয়ামে বছরের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার মেনেছে বাংলাদেশ। দাপুটে বোলিংয়ে ম্যাচ জয়ের কক্ষপথেই ছিল টাইগাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়টা আর আসেনি স্বাগতিকদের পক্ষে। আর এরই মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালে ঘরের মাঠে ক্রিকেট শেষ করল বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গল্পটা এক অর্থে ব্যর্থতার। এরমাঝে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু লাগতে পারে মিরপুরের পারফরম্যান্স। নিজেদের প্রিয় মাঠে বাংলাদেশের এবছরের অবস্থা দেখে বলতেই হয়, মিরপুরের টোটকা আর কাজে লাগছে না টাইগার ক্রিকেটের জন্য।
 
পরিসংখ্যান মতে চলতি বছর নিজেদের প্রিয় মাঠে, নিজেদেরই প্রিয় ফরম্যাটে বাংলাদেশ রীতিমত লজ্জাজনক পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম বড় নাম হয়েও চলতি বছর ভুলে যাওয়ার মত সময় কেটেছে তাদের। ওয়ানডে ফরম্যাটে এই মাঠে কোন জয় না পেয়েই ২০২৩ সালকে বিদায় জানাচ্ছে বাংলাদেশ। শেষবার টাইগার ক্রিকেটে এমন ঘটেছিল ২০০৭ সালে। সেবার বিশ্বকাপ পরবর্তী সিরিজে বাংলাদেশকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল ভারত। এরপর থেকে প্রতি বছরই শের-এ বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অন্তত একটি করে জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়লো ২০২৩ সালে। চলতি বছর নিজেদের ঘরের মাঠে বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং আফগানিস্তানকে হারিয়েছে বটে। তবে আইরিশদের বিপক্ষে জয় এসেছে সিলেটে। আর ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় আসে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। মোট ৫ ম্যাচ খেলেছে মিরপুরে। তার মধ্যে ৪টিতেই আছে হার। আর ১টি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। এমনকি চলতি বছর নিজ দেশে টাইগারা ৪ টি ওয়ানডে সিরিজের ৩টিতেই হার মেনেছে।
 
আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। আর নিউজিল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছে ২-০ ব্যবধানে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ বরাবরই কিছুটা পিছিয়ে। তবে এবার হোম অব ক্রিকেটে সাদা পোশাকেই বরং উজ্জ্বল ছিলেন টাইগার ক্রিকেটাররা। তিন টেস্টের মাঝে দুটিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সেই দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তান। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল বাংলাদেশের। তবে বড় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্টটা শেষ সময়ে এসে হেরে গিয়েছে তারা। আর ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ভার্সন টি-টোয়েন্টিতে এবার শতভাগ জয়ের রেকর্ড হয়েছে শের-এ বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে এবার মিরপুরে দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিল বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচেই এসেছে জয়। এদিকে টেস্ট হারের সঙ্গে অবশ্য বাড়তি ‘প্রাপ্তি’ যোগ হয়েছে বাংলাদেশের খাতায়। দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪ উইকেটের হার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টেবিলে শান্তদের পিছিয়ে দিয়েছে।
 
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কিউইদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের জয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে ওঠে এসেছিল স্বাগতিকরা। এবার তার দুই ধাপ পিছিয়ে চারে নেমে গেছে। তবে তাদের পয়েন্ট ১২ একই রয়েছে। বিপরীতে দুইয়ে ভারত এবং তিনে উত্তীর্ণ হয়েছে নিউজিল্যান্ড। সিলেটে প্রথম ম্যাচ জয়ের পর ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে ছিল টাইগাররা। মিরপুরে জিতলে নিজেদের পয়েন্ট যেমন ২৪-এ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল, তেমনি তাদের সামনে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়েরও হাতছানি ছিল। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে আগে ব্যাট করতে নেমে কিউই স্পিনারদের দাপটে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে গ্লেন ফিলিপসের সুবাদে রান তোলে ১৮০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ১৪৪, কিউইদের লিড ৮ রান বাদ দিয়ে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৭। এর ভেতরও নিজেদের চেনা পিচের সুবিধা কাজে লাগিয়ে জয় তুলে নেওয়ার পথে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবারও মাত্র ১ রানে থাকাবস্থায় ক্যাচ ফসকে ফিলিপসকে দ্বিতীয় জীবন দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এই ব্যাটসম্যানই গলার কাঁটা হয়ে ওঠে শান্ত-মিরাজদের।
 
এদিকে ‘লজ্জার’ যে রেকর্ডে সবার ওপরে মুশফিকুর রহিম সেটা নিয়েই চলছে এখন আলোচনা। শেষ টেস্টে বাংলাদেশই কেবল হারেনি, একইসঙ্গে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের কাঁধেও লজ্জার এক রেকর্ড ভর করেছে! আর তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি হারের রেকর্ড। কিউইদের বিপক্ষে এদিন ক্যারিয়ারের ২৫৭তম হার দেখলেন মুশফিক। এর আগপর্যন্ত ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে তিনি এই রেকর্ড ভাগাভাগি করছিলেন। যদিও ভারতীয় তারকার ম্যাচ খেলার সংখ্যাটা মুশফিকের চেয়ে অনেক বেশি। সবমিলিয়ে ৬৬৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে শচীন হার দেখেছেন ২৫৬টিতে। বিপরীতে মুশফিক এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৪৫৫টি ম্যাচ। মুশফিক ও শচিনের পর ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারার তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে। তিনি তিক্ত হারের স্বাদ পেয়েছেন ২৪৯ ম্যাচে। এজন্য জয়াবর্ধনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৫২টি ম্যাচ খেলেছেন। ম্যাচ হারের দিক থেকে এরপর যথাক্রমে অবস্থান ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল (২৪১) ও আরেক লঙ্কান কিংবদন্তি সনাৎ জয়সুরিয়ার (২৪০)।
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।