আর্মিতে যাওয়াটা ঘটল হঠাৎ করেই। আমার বাবা শামসুদ্দিন চাকলাদার পড়া শোনা করেছেন ভোলা গভমেন্ট স্কুলে। ওই সময় বাবার সহপাঠী ছিলেন মেজর হাফিজের বাবা ডা. আজাহার উদ্দিন, তিনি ২৯৬৮ সেন পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশন্যাল কাউন্সিলের সদস্য হন। বাবা যখন ভোলাতে সাবরেজিস্টার আবার ফুটবল দল ও তৈরি করলেন তখন শুধু মেজর হাফিজের খেলা দেখতেই মাঠ ভিড় থাকত। চমৎকার ছন্দের খেলা উপভোগ উপস্থিত ফুটবলপ্রেমীরা। মেজর হাফিজ সেনাবাহিনী থেকে রিটায়ার করে খেলতেন মোহামেডান ক্লাবে। আমি হকি প্রাকটিস করে চলে যেতাম মোহামেডান ক্লাবে, ক্লাবের পিলারে পিঠ দিয়ে ঢেলান দিতে অনেক গল্প করতেন। একদিন বললেন, তুমি আর্মিতে যাও না কেন? বললাম, হাফিজ ভাই আমি এমএ পড়ছি। উত্তরে বললেন আমি মাস্টার্স করেই আর্মিতে ঢুকেছি। পরদিন ক্লাবে যাবার পর তিনি আমাকে ডগার্স ব্রাদার্সে বই দিলেন। আমার জন্য নিউমার্কেট থেকে নিয়ে এসেছিলেন। বললেন, এমএ পাশ তাই পাসড আউটের সময় আর্মি এডুকেশন কোরে (এইসি) দিবে। বিএমএতে পিটিতে ভাল করতে হবেই। আবেদন করলে ইনফ্যানট্রিতে দিবে।গণকের কথা বলছিলাম তাকে।
আর্মিতে তখন বিভিন্ন পার্টি হতো। এয়ারফোর্সের এক গালা নাইটে এক অফিসারের বোনের সাথে বেশ ঝাকানাকা যোগাযোগ হল। ওই অফিসারের বাবাও এয়ারফোর্সে। তবে নন কমিশনড। আসল কথা প্রেম করছি, ওই সব কে দ্যাখে। একদিন আমি মেজ ভাই শফি চাকলাদার, গোলরক্ষক সান্টু, সেজ ভাই স্বপন, রকিবুল হাসান মিলে ওদের বাসাতে গেলাম। লাঞ্চ টেবিলে পোলাওর সাথে করলা ভাজি! করলার আরো দুই পদের তরকারি। সান্টু ভাই আস্তে আস্তে মেজ ভাইকে বললেন, খেয়ে নিন; এ মেন্যু বিশ্বের আর কোথাও পাবেন না।শকড।
বান্দরবানের ঘেরাও কাম্পে। সাংগু নদী ক্যাম্পের সামনে দিতে ঘুরে পিছন দিক দিতে চলে গেছে রুমার দিকে। থাকার রুমের উপরটা ছনের। ছনের ছাদ যায়গায় দুর্বল। জেওসি সাহেব এলাকার হেডম্যানকে নতুন ছন দিয়ে ছাদ ঠিক করতে বলে দিলেন। পরদিন প্রায় ১০/১২ জন চাকমা এসে ঘরের কাজে হাত দিল। ওরা বাংলা বলতে পারে না তাই হেডম্যান চলে এসেছে। কারবারিও আছে। যারা কাজ করছে তাদের মধ্যে এক জনের হাতে একটা ভিংরাজ পাখি ছিল। দেখতে ফেউচ্চা পাখির মতন। এই পাখি আমি নিয়ে এসেছিলাম। সারাক্ষণ শরীরের সাথেই থাকে। এই কান ঠুকরায় ত মাথায় বসে। অল্পতেই আদর নেয়। একদিন ফ্যান চলার সময় ফ্যানের আঘাতে পেয়ে মারা যায়। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ওই এলাকাতে প্রচুর ছিল। ঢাকাতে দেখি নাই।
হুট করে একদিন হেডম্যানের দেখা। তিনি বলল এ লোক নির্ভুল হাত গণে। ডাকলাম, বললাম হাত দেখ। তখন বিয়ে করি নাই। তাই প্রায়রিটি হল বিয়ে কেমন মেয়ের সাথে হবে। হাত দেখল, তারপর আংগুল আকাশের দিকে তাক করে বলল, অনেক উঁচু ঘর , জমিদার পরিবার। কত কি? আমি জানি কোথায় করছি। হেডম্যানরে বললাম, ওকে এখান থেকে সরাও। হাত গণা জানেই না। যা মনে হয় খুশি করতে তাই বলতাছে। চলে গেল, পরদিন গণক আসল হেডম্যানকে নিয়ে। এবার হাতে একটা চার কোনা কাগজ, এত পুরান যে খুলতেই মনে হয় ছিড়ে যাবে। আমার সামনে খুলল। দেখলাম চারটা ঘর করা। আকি বুকি ও আছে। বলল যে কোন একটা ঘর ছোও। অনেক চিন্তা করে একটা ঘর ছুলাম। আবার গণক হেডম্যানকে আগের কথাই বলল- বিয়ে উঁচু ঘরানায়ই হবে। (চলবে)
পথরেখা/আসো