হাত গণনা একদম অবিশ্বাস করা যুক্তিযুক্ত নয়। তবে সব গণক বা ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলার বহু আছেন যারা এই ব্যবসা ফেদে বসেছে। আমার ৪৬ ইনডেপেন্ডেন্ট ব্রিগেডের অফিসার মেসের উল্টো দিকে মেজর ইসলামের রূপসা কোয়ার্টার। তিনি স্টেশন স্টাফ অফিসার। সন্ধ্যার দিকে আমার রুমে পিরায় প্রতিদিনই আসতেন। বাসা থেকে অনেক কিছু নিয় আসতেন। বলতেন- খেললে খেতে হয়। একদিন এসে বললেন, চলেন আমার কাছে এক পীরের ঠিকানায় আছে তার ওখানে। বললাম কেন, বললেন উনি যদি একটু হেদায়েত করে দেন তাইলে খেলা আরো ভাল হবে। আপনি কি গিয়ে ছিলেন, বললেন না যাই নাই। আপনাকে নিয়ে এক সাথেই যাব। আপনি যেয়ে আসেন পরে আমি যাব।
পরের দিন সন্ধ্যায় মেজর ইসলাম আসলেন। বললেন, না যেয়ে ভালই করেছেন। কেন? বললেন , পীরের দরবার শরীফে যাবার পর, আর্মি অফিসার শুনে অনেক মুরীদদের সরিয়ে মেজর ইসলামকে পীরের সামনে বসানোর পর, পীর মেজর ইসলামের মাথায় হাত রেখে অনেকক্ষণ দোয়া করার পর বললেন যে এবার মুরীদ করে নিব। সাথে সাথে একটা বড় গ্লাসে পানি আনা হল। পানিতে বিড় বিড় করে তিনি ফু দিয়ে ওয়াক থু বলে এক দলা কফ ওই গ্লাসে ফেললেন। তারপর বললেন, বাচা খাও। মেজর ইসলামের গা গুলিয়ে বমি আসছিল, বুদ্ধি করে বললেন, হুজুর আমি ত রোজা আছি। এরপর আমাকে বললেন, আপনি যান নাই হাজার শুকরিয়া। তবে আমার চাচাত ভাই নাসিম, আমার চাচী নুরুল্লাপুর ফকির বাড়ির, নাসিম হাসপাতালে, খারাপ অবস্থা, দুইজন মৌলভী ওঁকে দেখতে আসলেন। একটা মোটা সুতা দিয়ে পায়ের আংগুল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত মাপলেন। মাপা শেষে লুকাতে হিট দিলেন আবার ওই সুতা দিয়েই দ্বিতীয়বার মাপলেন। গিঁট দিলেন। প্রথমবারের মাপ থেকে প্রায় চার আংগুল ছোট তে গিঁট পরল। রুম থেকে বেড় হয়ে বললেন, মাপ যদি প্রথম মাপার সমান হত তাহলে উনার জীবন ছিল। কিন্তু উনার দ্বিতীয় মাপ চার আংগুল কম। উনার জীবন শেষ, উনি বাঁচবেন না। বহু ডাক্তারের নিবিড় প্রতেষ্টাতেও চারদিন পর নাসিম মারা গেল। বুজুর্গ আল্লাওয়ালা আছেই।
এশিয়ান গেমসের ফাঁকে আজমির শরীফ গিয়ে ছিলাম। মোনাজাত করার সময় মোয়াল্লেম হঠাৎ গিলাফটা আমার মাথার উপর দিয়ে দিলেন। অন্ধকার। আমি আর পীরের সর্দার একদম কাছাকাছি। বললাম হুজুর বহু বছর ধরে খেলছি, আমি যাতে দেশের হকি অধিনায়ক হতে পারি। ক্রীড়াঙ্গনের সবাই জানে, হকির সভাপতি যখন আমাকে অধিনায়ক ঘোষণা করলেন সেনাবাহিনী থেকে কেন ক্যাপ্টেন করা হবে এই দুঃখে দলীয় কোচ এহতেশাম সুলতান আর ম্যানেজার প্রতাপ শংকর হাজরা পদত্যাগ করলেন। হকির সভাপতি জেনারেল মতিন, দেশের শ্রেষ্ঠতম হকি তারকা আব্দুস সাদেকের সাথে কথা বলে ম্যানেজার আর কোচ করলেন হকি অভিজ্ঞ সাব্বির ভাই আর মহসীন ভাইকে। দেশের হকি ইতিহাসে সব থেকে চমৎকার ফলাফল আর দর্শক উপস্থিতি চমকে দিয়ে ছিল বিশ্ব হকিকে। দেশের বাইরের পত্রিকাতেও লেখা হয়েছিল এশিয়ার উঠতি হকি শক্তি।
আজমির শরীফ শুধু মুসলমানরাই দোয়া নিতে যায়না প্রচুর হিন্দুরাও যাচ্ছে। দেশের ভিতরেও আল্লাহ ওয়ালা প্রচুর পীর আছে। আমার সেজ ভাই অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি শরীফ উদ্দিনের কান দিয়ে পূজ পরত। ডাক্তার সাহেবরা ওষুধ দিচ্ছিলেন তবে কাজ হচ্ছিল না, বাসার ছাদে দাড়ালে দূরে আউলিয়া পুর দেখা যায়, ওখানে এক মাযার আছে। সাথেই আছে বৈরাম খাঁর দিঘি। স্থানীয়রা বলে মানত করে দামা দামি না করে একটা কুমড়া দিলে কান পাকা থাকবে না। নৌকা করে প্রায় ঘণ্টা খানেক পর পৌঁছলাম। মা নিজ হাতে মাযারে কুমড়াটা দিয়ে মানত করলেন। আজতক ভাইয়ের কান পাকা বন্ধ। বুজুর্গরা, আজও তাদের দোয়াতে কতই না উপকার হচ্ছে।
পিছনেই বৈরাম খাঁর দিঘি।এলাহি কারবার, লম্বায় এক মাইলের বেশী। চওড়া প্রায় এক হাজার গজ হবে, প্রতিটা পার এক একটা হকি মাঠের মতন মোটা। বৈরাম খা ছিলেন বরিশাল অন্চলের মুঘল সেনাপতি। সম্রাট হুমায়ূন এবং তার ছেলে আকবর দুজনের অধীনেই তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। জনগণের পানির কষ্ট লাঘবে খনন করিয়ে ছিলেন দীঘি। এক জন দরদী শাসকের বাস্তবতার চিত্র এই বৈরাম খাঁর দীঘি। ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’- বিশ্বাস করলে সফলতা আসবেই।
(চলবে)