পথরেখা অনলাইন : এশিয়ার দলগুলোর জন্য নিউজিল্যান্ড সফর সবসময়ই বেশ কঠিন থাকে। সেখানকার পেস আর বাউন্সি উইকেটে সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি দিতে হয় ব্যাটসম্যানদের। বাংলাদেশের পরীক্ষা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ২৭ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এই ম্যাচে ব্যাটে-বলে নিজেকে আলাদাভাবে চিনিয়েছেন রিশাদ হোসেন। মূলত ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতেও গরম পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। অস্ট্রেলিয়ায় গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে নিউজিল্যান্ডেও গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে নির্ধারিত ত্রিদেশীয় সিরিজে খুব ভালো করতে না পারলেও একটি ব্যাপার অন্তত গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল ক্রিকেটারদের। তাই বিশ্ব আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচের ভেন্যু হোবার্টের হাড় হিম করা ঠান্ডাকেও নস্যি মনে হয়েছিল তাঁদের। এবার বুঝুন নিউজিল্যান্ডে শীতের তীব্রতা কেমন ছিল! খেলার পাশাপাশি সেখানে শীত সামলে নেওয়ার লড়াইও চলে। লিঙ্কনে নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নামার পর যে লড়াই চলছিল রিশাদ হোসেনের সঙ্গেও।
এই লড়াইয়ে জেতার ঘোষণা আছে তরুণ লেগস্পিনিং অলরাউন্ডারের পারফরম্যান্সেও। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতেও গরম পারফরম্যান্সে রিশাদ ব্যাটে-বলে দলের সেরা পারফরমারও। ভারত পপলির নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে ফিফটি করেছেন বাংলাদেশের চার ব্যাটার। এঁদের মধ্যে দলীয় সর্বোচ্চ ৮৭ রানের ইনিংসটি রিশাদের খেলা। মাত্র ৫৪ বলে এই ইনিংস খেলার পথে ঝড়ও বইয়ে দিয়েছেন তিনি। চারটি ছক্কার সঙ্গে মেরেছেন ১১টি চারও। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে দলকে এনে দিয়েছেন ৩৩৪ রানের পুঁজিও। পরে দলের ২৬ রানের জয়ে নিজের লেগস্পিন দিয়েও রেখেছেন ভূমিকা। ৭.২ ওভার বোলিং করে ৫২ রানে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। এমন উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের দিনে ঠান্ডায় ঠকঠক করেও কাঁপতে হচ্ছিল রিশাদকে। ম্যাচের পর বলেছেন শীতের সঙ্গে তাঁর হাড্ডাহাড্ডি সেই লড়াইয়ের কথাও। বিশেষ করে বোলিংয়ের সময়ই নাকি ঠান্ডায় কাবু হচ্ছিলেন বেশি, ‘আমার কাছে প্রথমত একটু ঠান্ডা কন্ডিশন ছিল।
কারণ বাংলাদেশের মানুষের কাছে কিউইদের দেশের কন্ডিশন সবসময়ই দুরুহ হতে পারে। রিশাদ আরও বলেন, ’আমরা গত দুই-তিন দিন মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। সেখান থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) প্রস্তুতি ম্যাচ খেললাম। ম্যাচ যখন শুরু হয়েছে, তখন আর আবহাওয়া বা ঠান্ডা এসব মাথায় ছিল না। চেষ্টা করেছি মানিয়ে নিয়ে খেলতে। ব্যাটিং নিয়ে বলব, অনেক দিন পর লম্বা সময় ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছি। চেষ্টা করেছি উইকেটে থেকে রান করার। আর বোলিংয়ের সময় ঠান্ডা কন্ডিশনে চেষ্টা করেছি নিজেকে গরম রাখার। একই সঙ্গে এটাও মাথায় ছিল, যখন-তখন বোলিং করা লাগতে পারে। মানসিক ভাবে তৈরি ছিলাম। কিন্তু তারপরও অনেক ঠান্ডা। এ জন্য একটু অস্বস্তি অনুভব হয়েছিল। এ ছাড়া সব কিছু ঠিক আছে। আশা করি দল ভালো করবে।’ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আগে একটিই প্রস্তুতি ম্যাচ। সেই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সে সফরকারীদের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রিশাদ হোসেনের।
আগে ব্যাটিং করে চার ফিফটিতে ৪৯.৫ ওভারে ৩৩৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিমের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৪৭ রান। ৩১ বলে ৩৩ রান করে আউট হন বিজয়। তাঁর ইনিংসে রয়েছে ৪ চার ও এক ছক্কা। দলীয় ১৪৮ রানের সময় ৫৮ রানে আউট হয়ে যান তানজিদ। তাঁর ৪৬ বলের ইনিংসে ৫ চার ও ৪ ছক্কা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন সৌম্য সরকার ও লিটন দাসও। ২৩তম ওভারের তৃতীয় বলে স্বন্দীপ প্যাটেলের বলে সৌম্য যখন আউট হচ্ছেন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৭০ রান। ৭১ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৫৯ রান করেন সৌম্য। এরপর দ্রুতই তাওহীদ হৃদয় (০) ও আফিফ হোসেনের (১০) উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেট রিশাদের সঙ্গে লিটনের ৭০ রানের জুটি। লিটন ৫৫ করে আউট হলেও দলের সংগ্রহ ৩০০ ছাড়িয়ে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন রিশাদ। নিউজিল্যান্ড বোলারদের ঝড় বইয়ে দিয়ে সাতে নেমে ব্যাট হাতে দলের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ৮৪ রান করেছেন রিশাদ।
তাঁর ৫৪ বলের ইনিংসে ১১ চার ও ৪টি ছক্কার মার রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৪টি উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি পেসার সামরাথ সিং। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন জেমস হার্টশর্ন ও জোসেফ ফিল্ড। বোলিংয়েও দলের সেরা বোলার রিশাদ। ৫২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ জয় দিয়ে শেষ করতে বড় ভূমিকা রেখেছেন এই লেগ স্পিনার। ৪৯.২ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ৩০৮ রান করেছে নিউজিল্যান্ড। দলের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ৯২ রান করেছেন ভারত পপলি। এ ছাড়া প্যাটেল ৮৯, ফিল্ড অপরাজিত ৩৩ ও কুইন সানডে ২৩ রান করেছেন। রিশাদ ছাড়া বোলিংয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন আফিফ ও হাসান মাহমুদ। জয়ের চেয়ে বড় হিসেবে দেখা হচ্ছে, ব্যাটসম্যান ও বোলারদের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার সুযোগ মিলেছে।
পথরেখা/আসো