পথরেখা অনলাইন : স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। ১০ জন নিয়ে খেলেও শিরোপা জয় করে ঢাকায় ফিরে এসেছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন দলটি। প্রথমার্ধে গোলশুন্য শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে শেষ হয় খেলা। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে ২-১ গোলে মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে অস্কার ব্রুজোনের শীষ্যরা।
ফাইনালে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন রফিকুল ইসলাম। তাই বাকিটা সময় ১০ জন্য নিয়ে খেলতে হয় বসুন্ধরা কিংসকে। এর কিছুক্ষণ পর একটি গোলও হজম করতে হয়। কিন্তু হাল ছাড়েনি কিংস। শেষ মুহূর্তে দারুণ এক গোলে বসুন্ধরা কিংসকে মৌসুমের প্রথম শিরোপা এনে দেন দোরিয়েলতন গোমেজ। ফাইনালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ১-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কিংস। স্বাধীনতা কাপে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। অন্যদিকে সর্বশেষ তিন আসরেই ফাইনাল খেলে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কিংস। এই ম্যাচে জয় দিয়ে মোহামেডানের সমান তিন শিরোপা তাদের। সোমবার অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ প্রতিআক্রমণে জমে উঠে ম্যাচে।
ম্যাচের চার মিনিটেই দারুণ সুযোগে পেয়েছিল কিংস। ববুরবেকের বাড়ানো লং বল বক্সের মধ্যেই পেয়ে যান রফিক। তার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৮ মিনিটে মুজাফরভের ফ্রি-কিক থেকে বিপদের সম্ভাবনা ছিল কিংসের। তবে সঠিক জায়গায় ছিলেন দোরিয়েলতন গোমেজ। দলকে বিপদমুক্ত করেন তিনি। ১৪ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে রবসন রবিনহোর বুলেট গতির শট ফিরিয়ে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন হোসেন। রক্ষণ সামলে নিয়মিত বিরতিতে আক্রমণে উঠছিল মোহামেডান। তবে কিংসের রক্ষণ ভেদ করতে পারছিলেন না তারা। ৩৮ মিনিটে সোহেল রানার ক্রসে দোরিয়েলতনের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। এরপর দুই দলই বেশ কিছু আক্রমণ করলেও গোলশূন্যভাবে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ালেও ধাক্কা খেতে হয় কিংসকে। ৪৮ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন রফিকুল। ৪৬ মিনিটে মোহামেডানের ফুটবলার ওমর ফারুক বাবুকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। এর ফলেই লাল কার্ড জুটে তার কপালে।
যদিও পরের মুহূর্তেই এগিয়ে যায় মোহামেডান। ৫০ মিনিটে মুজাফরভের কর্নার থেকে দলকে এগিয়ে দেন এমানুয়েল সানডে। তবে ম্যাচের নাটকীয়তা তখনও বাকি। সমতায় ফিরতে সময় নেয়নি কিংস। ফিরতি আক্রমণে পরের মিনিটে রবসনের জোগান দেওয়া বলে রাকিবের গোলে সমতায় ফেরে অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যরা। দু’বছর আগেও স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে গোল করেছিলেন রাকিব। মাঠের খেলা উত্তাপ ছড়াল সমান ভাবে। দুই দলের খেলোয়াড়রা বেশ কয়েকবারই কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। ৬৩ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখতে হয় মোহামেডানের ওমর ফারুক বাবু এবং বসুন্ধরা কিংসের মিগেল দামাসেনাকে। দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় ১০ জনের দল নিয়ে খেললেও কিংসের খেলায় তার প্রভাব ছিল না। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে দোরিয়েলতনের গোলের লিড নেয় ১০ জনের বসুন্ধরা কিংস। মিগেল দামাসেনার বাড়িয়ে দেওয়া বলে ডান পায়ের জোড়ালো শটে দলকে এগিয়ে দেন দোরিয়েলতন। শেষ পর্যন্ত শিরোপা উৎসব করেই মৌসুম শুরু করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের টানা চার শিরোপা জয়ীরা। দুই লাল কার্ডের মধ্যে কত বড় ফারাক।
এই ম্যাচের ঠিক এক সপ্তাহ আগে ওডিশা এফসির বিপক্ষে এক লাল কার্ডে ভেঙেছিল বসুন্ধরা কিংসের হৃদয়। মোহামেডানের বিপক্ষে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে একই ঘটনা প্রায় ফিরতেই বসেছিল। এএফসি কাপে না পারলেও স্বাধীনতা কাপে কার্ড হতাশা ভাঙতে পারেনি বসুন্ধরাকে। ৪৫ মিনিট এক ফুটবলার কম নিয়ে খেলা, শুরুতে পিছিয়ে পড়া; নাটকের কমতি ছিল না গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে। নাটকের মধুর সমাপ্তিপর হেসেছে বসুন্ধরাই। মোহামেডানকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতল ব্রুজোনের দল। মোহামেডানকে হারিয়ে তাদের রেকর্ডেই ভাগ বসিয়েছে বসুন্ধরা। সোমবারের আগে স্বাধীনতা কাপে সর্বোচ্চ তিন শিরোপা ছিল সাদা-কালো শিবিরের। এখন সমান শিরোপার ভাগীদার বসুন্ধরাও। তবে যেভাবে দলটা তৃতীয় শিরোপা জিতেছে তা প্রশংসাযোগ্যই। গোপালগঞ্জে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে বসুন্ধরা। প্রতিপক্ষকে পরীক্ষা নিতে যথারীতি সুলেমানে দিয়াবাতেই মূল ভরসা ছিল মোহামেডানের; শুরু থেকে ডান দিক দিয়ে দিয়াবাতেও আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সোহেল রানার কড়া পাহারায় সুবিধা করতে পারছিলেন না। এবারের ম্যাচের শুরুতে দশ জনের দলে পরিণত হওয়া। এরপর ম্যাচে পিছিয়েও পড়া। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ভুল করেনি বসুন্ধরা কিংস। গোল পরিশোধ করে এগিয়ে যাওয়া গোলও পেয়ে যায় কিংস। তাতে শিরোপা উৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার উপলক্ষ পেয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস।
পথরেখা/আসো