পথরেখা অনলাইন : নিউজিল্যান্ডে যেমন বাংলাদেশ হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তেমনি ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় কাটাচ্ছেন সৌম্য সরকার। তাকে ব্যাট করতে দেখলে যারা আনন্দ পান তারাও ঠিকঠাক মেলাতে পারছিলেন না, কেন এতটা বাজে খেলছেন এই বাহাতি ব্যাটার। এবার খারাপ সময় কাটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্যবান এক সেঞ্চুরি করার মাধ্যমে। ম্যাচ সেরা হলেও শুধু জেতেনি বাংলাদেশ। এটাই দিনশেষে বাংলাৈদেশের জন্য স্বস্থি আর অস্বস্থির কারণ। কিউইদের মাটিতে হারতে হারতে টানা ১৮ ম্যাচ জয়েল দেখা পাচ্ছেনা লাল সবুজ পতাকাধারীরা। অথচ অতি প্রয়োজনী সময়ে হারানো ফর্ম থেকে ফিরে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছিলেন সৌম্য সরকার। বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ যেখানে ২৯১ সেখানে একা সৌম্যই রান করেছেন ১৬৯ রান। তবে এই বাহাতির এমন দিনে ম্যাচ জিততে পারল না বাংলাদেশ। উইল ইয়াং ও হেনরি নিকোলাসের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ২২ বল বাকি রেখে ৭ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড। এই জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা জিতে নিল কিউইরা। সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটাও জিতেছিল নিউজিল্যান্ড।
জয়ের জন্য ২৯২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রাচিন রবীন্দ্র। ৩৩ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ রান করা রাচিনকে ফেরান হাসান মাহমুদ, দারুণ এক ক্যাচ নেন রিশাদ হোসেন। তার বিদায়ে ভাঙে ৬৬ বল স্থায়ী ৭৬ রানের জুটি। রাচিন রবীন্দ্রকে হারানোর পরও চলমান থাকে নিউজিল্যান্ডের ঝোড়ো ব্যাটিং। প্রথম উইকেট জুটিতে পঞ্চশের পর দ্বিতীয় উইকেটেও পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি পায় নিউজিল্যান্ড। দুর্দান্ত ব্যাটে সেঞ্চুরির পথে ছিলেন উইল ইয়াং। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে ১১ রান দূরে থাকতেই হাসানের বলে রিশাদের ক্যাচে ফেরেন ইয়াং। তার বিদায়ে ভাঙে ১৩১ বল স্থায়ী ১২৮ রানের জুটি। ৯৪ বলে দুই ছক্কা ও আট চারে ৮৯ রান করেন ইয়াং। টম ল্যাথামকে নিয়ে আরও একটি ৫০ রানের জুটি গড়েন নিকোলাস। নিজেও ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তবে মাইলফলক থেকে ৫ রান দূরে থাকতেই তাকে থামান শরিফুল। নিকোলস থামলেন ৯৫ রানে। শরিফুলের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে রিশাদের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
এরপর বাকিটা পথ অনায়াসে পাড়ি দেন টম ল্যাথাম (৩৪) ও টম ব্লান্ডেল (২৪)। এতে ২২ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় স্বাগতিকরা, সাথে নিশ্চিত করে সিরিজ জয়ও। খরুচে বোলিংয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। একটি উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম। অভিষেকে ৬২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। নেলসনে বুধবার টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। পঞ্চম ওভারেই প্রথম আঘাত হানেন অ্যাডাম মিলনে। তার বলে লাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২ রান করা বিজয়, দলের রান তখন ১১। ৮ম ওভারে শান্তকে ফেরান জ্যাকব ডাফি। ৬ রান করে শান্ত ফিরেন নিকোলসের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর জ্যাকব ডাফির অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইল ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দেন লিটন। ফেরার আগে মাত্র ৬ রান করে যান তিনি। দুর্ভাগ্যের শিকার তাওহিদ হৃদয়ও। ব্যক্তিগত ১২ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। ৪ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে তখন সৌম্যের সঙ্গে হাল ধরেন মুশফিক।
এই জুটির পঞ্চাশ গড়ে দুজনেই এগিয়ে যাচ্ছেলিন সেঞ্চুরি জুটি গড়তে। কিন্তু দলীয় ১৭১ রানে মুশফিকের আউটে ভেঙে যায় সৌম্যের সঙ্গে তার ৯১ রানের জুটি। জ্যাকব ডাফির বলে টম ব্লান্ডেলের গ্লাভসে জমা হওয়ার আগে ৫৭ বলে পাঁচ চারে ৪৫ রান করেন মুশফিক। মুশফিক ফিরলেও দুর্দান্ত ভূমিকা রেখেছেন সৌম্য। তিন তিনবার জীবন পেয়ে তুলে নেন ওয়ানডেতে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি। শতকে যেতে তার লেগেছে ১১৫ বল। ২০১৮ সালের পর ওয়ানডেতে এটাই তার প্রথম তিন অঙ্ক ছোঁয়া ইনিংস। সেই হিসেবে আরেকটি সেঞ্চুরি পেতে সৌম্যকে অপেক্ষা করতে হয়েছে পাঁচটি বছর। শতক পূরণ করেই থেমে থাকেননি তিনি, দলের বাকিরা যখন আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিল তখন সৌম্য নিজের স্কোর নিয়ে গেছেন দেড়শ’র ওপারে। খেললেন ১৬৯ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস। ১৫১ বলে তার এই ইনিংসটি সাজানো ছিল ২২ চার ও ২ ছক্কায়। তার অনবদ্য এক ১৬৯ রানের ইনিংসেই নিউজিল্যান্ডকে ২৯২ রানের টার্গেট দিয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন ডাফি ও ওরুকি। সৌম্যর সামনে সুযোগ ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক হওয়ার। তবে লিটনে না টপকাতে পারলেও ১৬৯ রান করা সৌম্য এখন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ভাঙা হলো না ওয়ানডেতে লিটন দাসের ১৭৬ রানের রেকর্ড।
এদিকে ফর্মে না থাকার পরেও সৌম্যকে একাদশে রেখে কম সমালোচনা শুনতে হয়নি কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। টানা রান খরায় ভুগছিলেন সৌম্য। বারবার সুযোগ পেয়েও কিছুতেই ব্যাটে রান তুলতে পারছিলেন না তিনি। শেষ পাঁচ ইনিংসে তিনটি শুন্য রানের ইনিংস। আগের ম্যাচেও আউট হয়েছিলেন কোনো রান না করেই। অথচ সৌম্যকে কেন আবার জাতীয় দলে ফেরানো হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই সে প্রশ্ন উঠেছিল আবার। নেলসনে ব্যাট হাতে সেই সমালোচনার জবাব দিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিকও এখন সৌম্যের। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৫ সালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১২৮*। এ তো গেল শুধু বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ডের কথা। নেলসনে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সৌম্য ছাড়িয়ে গেছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারকেও। নিউজিল্যান্ডের মাঠে এশিয়ান ব্যাটারদের মধ্যে এখনো সর্বোচ্চ রানের ইনিংস সৌম্যের। ২০০৯ সালে শচীনের করা ১৬৩ রান এখন নেমে গেছে দুইয়ে।
পথরেখা/আসো