আমরা পাঁচ ভাই আর এক বোন। সবার বড় ছিল বোন আরজু। নমাস বয়সে মারা যায়। আমরা দেখিনি তবে বাবা মা আমরা সবাই আরজু বোনকে বিস্মৃত হতেও দেননি। মা খুব কড়াভাবে আমাদের শাসন করতেন। খুব খেয়াল রাখতেন আমরা কাদের সাথে মিশি। আজিজ বাসাতে এসে স্যার অংক করাতেন তিনি বিড়ি খেতেন। বিড়ির যেখানে সূতা বাঁধা আ পর্যন্ত টেনে ফেলে দিতেন। আমি ওই গোড়াটা মুখে দিয়ে টানতাম। আজ যিনি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, স্বপন ভাই, ছোট কাল থেকেই কোন খারাপ সহ্য করতে পারে না। আমাকে বলল আর একবার দেখলে মাকে বলে দিব।
আমি বললাম একবার বইলাই দেখ। হয়েছে কি মা স্বপন ভাইকে খুব বেশী আদর দিত, অংকে তার ৮০ / ৯০ এমনিতেই পেতে। আর আমার অংক মাথা তেই আসত না। কত ধরনের অংক, যেমন একটা পিচ্ছিল কলাগাছে একটা বাঁদর তিন হাত উঠেত পিছলে দুই হাত নেমে যায়, বাঁদর কতবারের চেষ্টায় কলাগাছের মাথাতে চড়বে। আমি বলতাম বাঁদর এত গাছ থাকতে এই পিচ্ছিল কলা গাছে কেন উঠবে? ভাই স্যার চলে গেলে আমাকে অংক কষাত, অংকে এতই খারাপ ছিলাম, তারপরও অন্য সাবজেক্ট খুব ভাল করে ক্লাসে রোল নম্বর সব সময়ই তিন চারের মধ্যে থাকতে।
বড় ভাই খুব রাশভারি, তবে মেজ ভাই ছিলেন খুব হেল্পিং, তিনি বিড়ির গোড়া টানি এটা শুনে বল্ল কাল থেকে লজেন্স আনব, খাবে এসব কেউ খায়। পরের ২/৩ দিন লজেন্স দিল তাও একটা করে। আমি ডিক্লেয়ার দিলাম আমাকে চারটা করে লজেন্স না দিলে বিড়ির গোড়া টানব।
সান্ধ্য চা চক্র সবাই এক সাথেই করতাম। বাবা সবাইকে নিয়েই দলেবলে থাকতেনও। দাদী মা, শিপু ফুপু। মনু কাকা সহ চার টেবিলে স্বপন ভাই বলল জুঁই বিড়ির গোড়া খায়। শুনে বাবা চায়ের টেবিল থেকে উঠে গেল। আমি বিপদ হতে পারে মনে করে বাবার পিছন পিছন যেতে চাইলাম। মা বলল। কৈ যাচ্ছ। এ দিক আয়। তোরে বিড়ি খাওয়াব। মিনিট খানেক পর বাবা ফেরত এসে মাকে বললেন হয়েছে, ও এই ছাইপাঁশ আর খাবেননা। আমরা পাঁচ ভাই, তবে মা বাবা আমার জন্মের সময় আর ছোট ভাই জলির জন্মের সময় মনে করেছিল মেয়েই হবে, তাই জুঁই ও জলি রেখেছিল। এখনও ডাক নাম হিসাবে বহাল।
(চলবে)
পথরেখা/আসো